ফতে সিংহের শেষকৃত্যে মেয়ে মধু। সোমবার গুরদাসপুরে। -এফপি
ভোর রাতে গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল সুবেদার ফতে সিংহের পরিবারের। তাঁর মেয়ে মধুর (২৫) মুখে উঠে এসেছে সে দিনের কথা। পাঠানকোটের বায়ুসেনার ঘাঁটিতে তত ক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছে গুলির লড়াই।
১৯৯৫ সালের কমনওয়েলথ গেমসে সোনা-রুপো জিতেছিলেন ফতে সিংহ। ডোগরা রেজিমেন্ট থেকে সাম্মানিক ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর নিয়েছিলেন। তার পরেই ডিফেন্স সার্ভিস কপস-এ যোগদান। দেড় বছর আগে সে কারণেই পাঠানকোটে পোস্টিং। মধ্যপ্রদেশের মহুতে বাস তাঁর পরিবারের।
মধু আর তাঁর ছোট ভাই নিতিন জঙ্গি হানার ঠিক দু’দিন আগে পাঠানকোটে আসেন বাবার সঙ্গে ছুটি কাটাতে। সঙ্গে আসেন মা শোভাও। বড় ছেলে গুরদীপও সেনাবাহিনীতে রয়েছেন। সে রাতে ফতে সিংহের ঘরেই শুয়ে ছিলেন মধুরা। তখনই শোনেন গুলির আওয়াজ।
ফতে সিংহের কন্যার কথায়, ‘‘রাত দু’টো নাগাদ ইউনিফর্ম পরে ছুটে বেরিয়ে গেলেন বাবা। তার পর কত ক্ষণ ঘুমিয়েছি, জানি না। হঠাৎ পর পর গুলির শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেল। জানলাগুলো পর্যন্ত কাঁপছে মনে হল। বাইরে বেরিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম বাবা কোন দিকে রয়েছেন।’’ পেশায় শিক্ষিকা মধু জানালেন, ‘‘বাবার ঘরের খুব কাছেই গোলাগুলি চলছিল। বায়ুসেনার এক অফিসার আমাদের বললেন ভিতরে যেতে। উনিই জানালেন, বায়ুসেনা ঘাঁটিতে জঙ্গিরা ঢুকে পড়েছে। আমরা সব শুনে ঘরে ঢুকে গেলাম। প্রাণ বাঁচাতে তখনকার মতো খাটের নীচে লুকিয়ে পড়লাম। জঙ্গিদের নজর থেকে বাঁচতে আলো নিভিয়ে দু’ঘণ্টা বোধ হয় ও ভাবেই বসে ছিলাম।’’ এর পরেই মেয়ের মুখে আফসোস, ‘‘তার মধ্যেই হয়তো জঙ্গিদের হাতে বাবা শেষ হয়ে গিয়েছেন। আমরা জানতেও পারিনি। বার বার শুধু মোবাইলে ফোন করেছি। বেজেই যাচ্ছিল।’’
রবিবার সকালে ফতে সিংহের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু নিজের বাড়িতে নিয়ে যান মধুদের। তখনও খারাপ খবরটা তাঁদের দেওয়া হয়নি। মধু বলছেন, ‘‘ওই বন্ধু জানিয়েছিলেন গুলিতে বাবা জখম হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি। ভাল আছেন। সারা দিন ওখানেই ছিলাম। মা বার বার জানতে চাইছিলেন, বাবা কেমন আছেন। শেষমেশ রবিবার বেলার দিকে মাকে খবরটা দেওয়া হয়। আমরা জেনেছি সন্ধেবেলায়।’’
ফতে সিংহের বড় ছেলে অসম থেকে মহুতে যাচ্ছেন বাবার শেষকৃত্যে যোগ দিতে। ফতের ভাই সুরজিৎ সিংহ বলেছেন, ‘‘দ্বিতীয় বার দেশকে গৌরবান্বিত করল ও। প্রথম বার মেডেল জিতে। আর এ বার নিজের প্রাণ দিয়ে।’’
চিরাচরিত প্রথা ভেঙে বাবার শকট কাঁধে তুলে নিয়েছেন মধু সিংহ। শক্ত মেয়ে ধরে রাখতে পারেননি চোখের জল। বলেছেন, ‘‘বাবা সব সময় বলতেন, সত্যের জন্য লড়াই করতে। এই মূল্যবোধ থেকেই নিজের জীবন দিয়েছেন উনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy