কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড সলমন খানের।
হরিণ মেরে ‘টাইগার’ এখন জেলবন্দি। জোধপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ‘কয়েদি নম্বর ১০৬’।
৫ বছরের কারাদণ্ড। সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। দু’দশক আগে রাজস্থানে শুটিং করতে এসে দু’টি কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের অপরাধে সলমন খানকে আজ এই সাজা শোনালেন জোধপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু একই মামলায় অভিযুক্ত বলিউডের অন্য চার তারকা, সইফ আলি খান, তব্বু, সোনালি বেন্দ্রে এবং নীলম কোঠারি রেহাই পেলেন প্রমাণের অভাবে।
বন্যপ্রাণ (সংরক্ষণ) আইনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় সর্বোচ্চ ৬ বছরের সাজা হত সলমনের। তার মধ্যে মাত্র একটা বছরই তাঁকে রেয়াত করল আদালত। আজ রায় ঘোষণা করতে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট দেবকুমার ক্ষত্রী বলেছেন, প্রায়ই আইন ভাঙেন সলমন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এমনিতেই চোরাশিকারের বাড়বাড়ন্ত। এখানে অভিযুক্ত একজন চিত্রতারকা। তিনি অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত। লোকে তাঁকে অনুকরণ করে। সেই তিনিই নিরীহ হরিণগুলোকে মেরেছেন।’’
জেল যাত্রা: কৃষ্ণসার মামলার রায়ের পরে জোধপুর সেন্ট্রাল জেলে ঢুকছেন সলমন খান। বৃহস্পতিবার।
আজ আদালত থেকেই সরাসরি জেলে নিয়ে যাওয়া হয় সলমনকে। ডাক্তারি পরীক্ষা হয় সেখানেই। সলমনের আইনজীবী আনন্দ দেশাই জানান, আগামিকাল সকাল সাড়ে ১০টায় দায়রা আদালতে সাজা স্থগিতের আর্জি পেশ করা হবে। স্পষ্ট হয়ে যায় তখনই, আজকের রাতটা জেলেই থাকতে হবে নায়ককে।
আরও পড়ুন:
সলমন নাকি হরিণকে জল দেন, বিস্কুটও!
জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কোনও বিশেষ সুবিধা পাবেন না ‘বন্দি’ সলমন। থাকতে হবে সাধারণ অপরাধীর মতোই। জোধপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই এখন রয়েছে ধর্ষণে অভিযুক্ত ধর্মগুরু আসারাম বাপু। তার সঙ্গে একই ওয়ার্ডে রয়েছেন সলমন। দু’নম্বর ব্যারাকের দু’নম্বর সেলে রাখা হয়েছে তাঁকে। এই জেলে অবশ্য এর আগে তিন দফায় ১৮ দিন কাটিয়েছেন সলমন। যথাক্রমে ১৯৯৮, ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে। সব ক’টি মামলাই হরিণ চোরাশিকারের।
১৯৯৮ সালে জোধপুরে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে ১ অক্টোবর মাঝরাতে সইফ, তব্বু, সোনালি ও নীলমের সঙ্গে একটি মারুতি জিপসিতে বেরিয়েছিলেন সলমন। অভিযোগ, সেই সময়েই জোধপুরের কাছে বিশ্নোই সম্প্রদায়ের কঙ্কনি গ্রামে নিজের রাইফেল থেকে গুলি করে দু’টি কৃষ্ণসার হরিণ মারেন তিনি। কৃষ্ণসার বিপন্ন প্রাণী। বিশ্নোইরা কৃষ্ণসারের রক্ষক হিসেবে মনে করেন নিজেদের। সলমনের জিপসির নম্বর পুলিশকে দিয়েছিলেন তাঁরা। বন্যপ্রাণ আইনে ২০ বছর ধরে মামলা তাঁরাই চালিয়েছেন। প্রায় একই সময়ে রাজস্থানে চিঙ্কারা হরিণ শিকারেরও অভিযোগ ওঠে সলমনের বিরুদ্ধে। আছে মুম্বইয়ে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চাপা দিয়ে এক ফুটপাথবাসীর মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগও। সেই দু’টি মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে।
কালো শার্ট, কালো সানগ্লাস, কঠিন মুখ। সলমন আজ আদালতে এসেছিলেন দুই বোন অলবীরা এবং অর্পিতাকে নিয়ে। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ম্যাজিস্ট্রেট ঘোষণা করেন, সলমনকে দোষী সাব্যস্ত করছেন তিনি। সূত্রের খবর, রায় শুনে সানগ্লাস খুলে ফেলেন সলমন। চোখ মুছে আবার সেটা পরে নেন। পিঠে হাত রাখেন বোনেরা। সলমন একটা ট্যাবলেট খান। শোনা যাচ্ছে, ওটা ছিল অবসাদ কাটানোর ওষুধ।
শুরু হয় সাজা ঘোষণার অপেক্ষা। সইফ-সহ রেহাই পাওয়া চার তারকাই তত ক্ষণে আদালত ছেড়েছেন। সলমনের পাশে শুধু দুই বোন এবং দেহরক্ষী শেরা। সাড়ে ১২টা নাগাদ টিভি চ্যানেলের একাংশ বলতে শুরু করে, সলমনের মাত্র ২ বছরের জেল হয়েছে! ৩ বছরের কম মেয়াদের সাজা হওয়ায় এই আদালত থেকেই জামিন পাবেন তিনি। ভক্তরা উৎসবের তোড়জোড় করছিলেন, এমন সময়ে ফের ঘোষণা— খবরটা ভুল! পরের ঘণ্টা দেড়েক রুদ্ধশ্বাস টেনশন। দুপুর ২টো ১০ নাগাদ আবার ‘ব্রেকিং নিউজ’।
এ বার পাকা খবর, ৫ বছরের জেল।
সাজা ঘোষণা হতেই আদালতে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন অর্পিতা। জড়িয়ে ধরেন দাদাকে। কেঁদে ফেলেন অলবীরাও। পুলিশ অফিসারেরা সলমনের বোনেদের বলেন, ‘‘আপনারা এ বার দূরে গিয়ে বসুন।’’ সলমনকে জেলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে পুলিশ। সাজানো হয় পুলিশের গাড়ির কনভয়। বেশ খানিক ক্ষণ পরে সাদা পর্দা-ঘেরা একটা বোলেরোয় তোলা হয় সলমনকে। আদালতের বাইরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার সর্বশেষ ব্যারিকেডের ধারে বিশ্নোইরা তখন হাতে হাতে বিলোচ্ছেন গুড়ের টুকরো। ওটাই মিষ্টিমুখ।
কনভয় এগোয় জেলের পথে। তত ক্ষণে বাজি ফাটছে। রাস্তার ধার থেকে উড়ে আসছে কটাক্ষ। ‘কোণঠাসা টাইগার’-কে লক্ষ্য করে।
নিজস্ব চিত্র, টুইটার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy