প্রতীকী ছবি।
ভীত-সন্ত্রস্ত তরুণী দাঁড়িয়ে আছেন থানায়। পুলিশকে বলতে এসেছেন, একটু আগে কয়েকটা লোক তাঁকে গণধর্ষণ করতে যাচ্ছিল। বলছিল, খুন করে জলে ভাসিয়ে দেবে। সব শুনে পুলিশ বলল, ‘‘তোমার জামাকাপড় কেউ কেড়েকুড়ে নিয়েছে, না এটুকুই ছিল? ইয়ে ফ্রি সেক্স-কা কালচার তুমহারা জেল মে করওয়াতে হ্যায়।’’
বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক করে ফেরার পথে যারা ঘিরে ধরেছিল, তারা না হয় খারাপ লোক। কিন্তু হরিয়ানার ফরিদাবাদ পুলিশের সুরজকুণ্ড থানার অফিসারদের মুখে এই কথাগুলো শুনে প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর ছাত্রীটি। তাঁর অভিযোগ, এফআইআর তো নিতেই চায়নি ওই থানার পুলিশ। উল্টে এমন অশ্লীল ব্যবহার করছিল তাঁর সঙ্গে।
ঘটনা গত ১৪ অগস্টের। দিল্লির অসোলা অভয়ারণ্যের ভরদ্বাজ হ্রদের ধারে বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক করতে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। সাত জনের দলে মেয়ে ছিলেন তিনি একাই। তিন জন জেএনইউয়ের পড়ুয়া, তিন জন সেখানকার প্রাক্তনী, এক জন সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের। ফেরার পথে তাঁদের গাড়ি আটকায় আট-ন’জন লোক। নামানো হয় সকলকে। ছাত্রীটিকে এক থাপ্পড় মেরে এক জন জানতে চায়, এত জন পুরুষের সঙ্গে তিনি কোথায় গিয়েছিলেন। তরুণীর কথায়, ‘‘আমাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হল একটা ছাউনিতে। একটা লোক আরেক জনকে বলছিল আমায় ধর্ষণ করতে। বারবার, অন্যদের ডেকে ডেকে আমাকে ধর্ষণ করতে বলছিল ওরা। বলছিল, আমাদের গাছে বেঁধে হাত-পা কেটে জলে ভাসিয়ে দেবে।’’
আরও পড়ুন: চিনকে ধাক্কা দিয়ে ডোকলাম বিতর্কে ভারতের হয়ে মুখ খুলল জাপান
সেই সঙ্গে চলছিল মার। ‘গরুচোর’, ‘মুসলিম’ আখ্যা দিয়ে পেটানো হচ্ছিল ছয় ছাত্রকে। এই সময়ে ত্রাতা হয়ে এসে পড়েন পড়ুয়াদের গাড়িচালক। গোলমাল যখন চলছে, তখন তিনি গিয়ে স্থানীয় দু’জন লোককে ডেকে এনেছিলেন। তাঁরাই ওই পড়ুয়াদের উদ্ধার করে নিয়ে যান সুরজকুণ্ড থানায়। কিন্তু সেই থানায় গিয়ে কোনও সুরাহা তো হয়ইনি, উল্টে হেনস্থা হতে হয় পুলিশেরই হাতে। ছাত্রীটির দাবি, ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখতেও তাঁদের বাধ্য করে পুলিশ।
অনেক পরে এই ঘটনায় একটি ‘জিরো এফআইআর’ দায়ের করে দিল্লি পুলিশ। অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার চিন্ময় বিসওয়াল জানান, ‘‘ফরিদাবাদ পুলিশ তাঁদের অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেছে বলে জানিয়ে বসন্তকুঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই পড়ুয়ারা। আমরা একটি এফআইআর করেছি। তা পরে সংশ্লিষ্ট থানায় স্থানান্তরিত করা হবে।’’ শ্লীলতাহানি, অপহরণের চেষ্টা, ইচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করা, জোর করে আটকে রাখার মতো বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সুরজকুণ্ড থানার ইন্সপেক্টর পঙ্কজ কুমারকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, ঘটনার সময়ে তিনি এবং বেশ কয়েক জন সিনিয়র অফিসার ছুটিতে ছিলেন। শুক্রবার ঘটনাটি জেনেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বুক, পেট, পা-সহ শরীরের নানা জায়গায় আঘাত নিয়ে আপাতত হাসপাতালে ভর্তি সাত বন্ধুই। ছাত্রীটি বলছেন, ‘‘এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, আমার সঙ্গে এমন ঘটেছে। এতটাই ভয় পেয়েছি যে, ওই দুই স্থানীয় মানুষ এবং গাড়ির চালক, যাঁরা আমাকে উদ্ধার করেছেন— তাঁদের পর্যন্ত সন্দেহ হচ্ছে।’’ জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি মোহিতকুমার পাণ্ডে জানিয়েছেন, ওই দুষ্কৃতীদের দলটি এবং অভিযুক্ত পুলিশদের শাস্তির দাবিতে ফরিদাবাদের পুলিশ কমিশনারের কাছে যাবেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy