ধর্ষণ ছোট ঘটনা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরেই আজ দিনভর তোলপাড় হল রাজধানী। বৃহস্পতিবার সব রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন অরুণ জেটলি। সেখানেই তিনি বলে বসেন, “দিল্লিতে একটা ছোট্ট ধর্ষণের কথা দেশে-বিদেশে ফলাও করে ছেপে বেরিয়েছিল। আর এর জেরেই পর্যটন শিল্পে লক্ষ লক্ষ ডলার হাতছাড়া হয় ভারতের।” পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে ‘ছোট্ট ঘটনা’ হামেশাই শুনে থাকেন রাজ্যবাসী। এ বার একই সুর শোনা গেল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গলাতেও। বিরোধীদের অভিযোগ, কাল জেটলি নির্ভয়া গণধর্ষণের নাম না করলেও তিনি যে সেই ঘটনাকেই ইঙ্গিত করছেন, তা স্পষ্ট।
১৬ ডিসেম্বর রাতের বীভৎস গণধর্ষণকে হাতিয়ার করে এককালে শীলা দীক্ষিত ও মনমোহন সিংহ সরকারের সমালোচনা করেছিল বিজেপি। আজ তাদেরই অন্যতম নেতার মুখে এই কথা শুনে সুযোগ কাজে লাগাতে দেরি করেনি কংগ্রেস। জেটলির বিরুদ্ধে এক দিকে যেমন মুখ খুলেছেন দলের নেতারা, তেমনই দিল্লিতে বিজেপির পার্টি অফিসের বাইরে এ দিন প্রতিবাদ দেখান কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা।
জেটলির সমালোচনায় কংগ্রেস যতই সরব হোক না কেন, আজ নতুন অস্বস্তির মুখে খানিক কোণঠাসা তারাও। যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ধর্মগুরু আসারাম বাপুর হয়ে মামলা লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ।
বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মুখে এ দিন অবশ্য নিজের কথার ব্যাখ্যা দিয়েছেন অরুণ জেটলি। তাঁর কথায়, “আমার কথার কিছুটা অংশ শুনলে মনে হচ্ছে তা অসংবেদনশীল। আমি তার জন্য ক্ষমাও চাইছি। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য মোটেই তা ছিল না।” বরং জেটলির যুক্তি, কোনও নির্দিষ্ট ঘটনার কথা তিনি বলেননি। মেয়েদের উপর নির্যাতন কী ভাবে পর্যটনে প্রভাব ফেলে, সে কথাই শুধু বলেছেন। অর্থমন্ত্রীর আরও দাবি, “যে কোনও ধরনের নির্যাতন নিয়ে আমি সব সময় সরব হয়েছি। ধর্ষণকে তুচ্ছ করে দেখানোর প্রশ্নই নেই।”
২০১২-এর ১৬ ডিসেম্বর রাতে দিল্লির চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করা হয় বছর তেইশের এক প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীকে। বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরছিল সে। সঙ্গীকে মেরেধরে তার সামনেই বাসের মধ্যে চলে পৈশাচিক নির্যাতন। শেষ রাতে নগ্ন, ক্ষতবিক্ষত দেহ রাস্তার ধারে ফেলে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। খাস রাজধানীর মতো জায়গায় মেয়েদের সুরক্ষার যে কী হাল, এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল তা। যদিও লাখ লাখ মানুষের প্রার্থনাকে মিথ্যে করে দিয়ে দিন পনেরো পর হার মানে নির্ভয়া। কিন্তু নির্ভয়া গণধর্ষণ যে ভাবে প্রতিবাদের ঢেউ তুলেছিল, সে কথা মাথায় রেখেই শেষ পর্যন্ত আইন বদলানোর পথে হাঁটতে হয়েছিল কেন্দ্রকে। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে অভিযুক্তদের বিচার করে শোনানো হয় সর্বোচ্চ সাজাও।
প্রায় দু’বছর বাদে হঠাৎ করে মন্ত্রীর মুখে এ হেন কথায় অবাক নির্ভয়ার মা-বাবা। নির্ভয়ার মায়ের অভিযোগ, “একটা সময় যখন দরকার ছিল তখন এটা থেকেই রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছিল বিজেপি। আর আজ ক্ষমতায় এসে অন্য সুরে কথা বলছে তারাই।” নির্ভয়ার বাবার কথায়, ধর্ষণের আবার ছোট বড় কী! সব সময়ই তা লজ্জার। রাজনীতিকরা যখন এ রকম কথা বলেন, তাঁদের মনে রাখা উচিত শুধু দেশ নয় সারা বিশ্ব সেটা শুনছে।
দেশে মেয়েদের উপর অত্যাচার যখন বেড়ে চলেছে, তার মধ্যেই মন্ত্রীর এ রকম বিতর্কিত মন্তব্যে ক্ষুব্ধ জাতীয় মহিলা কমিশন। কমিশনের সদস্য নির্মলা সবন্ত জানিয়েছেন, ধর্ষণের সঙ্গে দেশের রাজনীতিকে এ ভাবে মেলানোর চেষ্টা নেহাতই দুর্ভাগ্যজনক। জেটলির কথার প্রতিবাদে আজ দিল্লির রাজপথে তাঁর কুশপুতুল পোড়ায় মহিলা কংগ্রেস। কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনও। “যে কোনও ধর্ষণই দেশের গায়ে কালো দাগ। অর্থমন্ত্রীর এই কথা খুবই হতাশার” মন্তব্য কংগ্রেস নেতা রশিদ আলভির।
বিজেপিকে আক্রমণের সুযোগ তারা যতই কাজে লাগানোর চেষ্টা করুক, অস্বস্তি কিন্তু চাপা থাকছে না কংগ্রেসের। জেটলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাঝেই খবর আসে, যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত আসারাম বাপুর হয়ে দাঁড়াচ্ছেন কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ। এর আগে এক মহিলা সহকর্মীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে আটক তহেলকা সম্পাদক তরুণ তেজপালের হয়ে সওয়াল করতে দেখা গিয়েছিল খুরশিদকে। তেজপালের জামিন মঞ্জুর হওয়ার পিছনেও রয়েছে তাঁর ভূমিকা।
ধর্ষণ নিয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য ঘিরে এত হইচই, আবার প্রায় একই অভিযোগে অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন কংগ্রেস নেতারাই দলের এই অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। আজ খুরশিদকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তাঁর অবশ্য সাফ জবাব, “দলের আলাদা একটা অবস্থান তো থাকবেই। কিন্তু পেশায় আমি আইনজীবী। তাই যে কোনও মামলাই আমায় লড়তে হতে পারে। এর মধ্যে কোনও বিরোধ নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy