Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

রাজ্যে কার ঘর ভাঙল বিজেপি? ১৫ ভোটের হিসাব নিয়ে তুঙ্গে জল্পনা

পশ্চিমবঙ্গের মোট বিধায়ক ২৯৪ জন। সহজ হিসাবে বিজেপির তিন এবং সহযোগী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তিন— এই ৬ জনের ভোট কোবিন্দের বাক্সে পড়ার কথা। বাকি ২৮৮ জনেরই ঘোষিত সমর্থন ছিল বিরোধী জোটের প্রার্থী মীরা কুমারের পক্ষে।

প্রণাম: দেশের ১৪তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে রামনাথ কোবিন্দ। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

প্রণাম: দেশের ১৪তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে রামনাথ কোবিন্দ। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৭ ০৪:২৫
Share: Save:

জল্পনাই সত্যি হল! রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বাংলা থেকেও ক্রস ভোটিং হল এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দের পক্ষে। গোপন ব্যালটে ভোট বলে কারা ক্রস ভোটিং করলেন, তা জানার উপায় নেই। আর সেই কারণেই কার ঘর ভেঙে বিজেপি লাভবান হল, তা নিয়ে চাপানউতোর তুঙ্গে। সেই সঙ্গে অবিশ্বাসের বাতাবরণও!

পশ্চিমবঙ্গের মোট বিধায়ক ২৯৪ জন। সহজ হিসাবে বিজেপির তিন এবং সহযোগী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তিন— এই ৬ জনের ভোট কোবিন্দের বাক্সে পড়ার কথা। বাকি ২৮৮ জনেরই ঘোষিত সমর্থন ছিল বিরোধী জোটের প্রার্থী মীরা কুমারের পক্ষে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোট-গণনায় দেখা যাচ্ছে, বাংলা থেকে মীরা পেয়েছেন ২৭৩ জনের ভোট। কোবিন্দ ১১ জনের ভোট। অর্থাৎ ৫ জন ক্রস ভোট করেছেন। আর বাতিল হয়েছে ১০ জনের ভোট। ওই ১০ জনের ভোটও যে হেতু মীরার দিকেই যাওয়ার কথা ছিল, তাই ধরতে হবে তাঁর মোট ১৫ জনের ভোট ‘মিস’ হয়েছে।

বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, বাংলায় আসলে ১০টা ক্রস ভোট হয়েছিল। তাঁরা ভোট দিয়েছিলেন কোবিন্দের পক্ষেই। কিন্তু ‘১’ লিখতে গিয়ে পাশে দাগ, ফুটকি— এ সব কারণে ওই দশের মধ্যে পাঁচটা বাতিল হয়েছে। আর তার সঙ্গে আরও পাঁচ বাতিল ভোট ধরে মোট ভোট নষ্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০।

আরও পড়ুন: কোবিন্দ জিতলেও দম্ভ ঘুচল বিজেপির

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে এ বার জোর জল্পনা ছিল ক্রস ভোটিং নিয়ে। চর্চা চলছিল, সারদা থেকে নারদ-সহ নানা কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে থাকা তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের একাংশ বিজেপি প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিতে পারেন। ব্যালটবাক্স খুলে ক্রস ভোটিং আবিষ্কার হওয়ার পরে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং বিজেপি স্বভাবতই তৃণমূলের দিকে ইঙ্গিত করছে। সম্ভাব্য কোন কোন বিধায়ক দলীয় নির্দেশ না মেনে উল্টো দিকে ভোট দিয়েছেন, তেমন নানা নেতা-মন্ত্রীর নামও ভেসে বেড়াচ্ছে! বিরোধী নেতারা আরও বলছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে ‘১’ লিখতে হয়। দফায় দফায় নকল ব্যালটে প্রশিক্ষণ হওয়ার পরেও বিধায়কেরা সামান্য ‘১’ লিখতে ভুল করলেন এবং ভোট বাতিল হল— কাহিনি এত সহজ নয়! ভোট মীরাকে দেবেন না বলেই ১০ জন বিধায়ক ভোট নষ্ট করেছেন বলে তাঁদের দাবি।

তৃণমূল অবশ্য জোরালো ভাবেই দাবি করছে, তাদের দলের কেউ ক্রস ভোটিং করেননি। কংগ্রেস বা বাম বিধায়কেরা ওই কাজ করে তাদের ঘাড়ে দায় ঠেলে দিচ্ছে বলে শাসক দলের পাল্টা অভিযোগ। তৃণমূলের মহাসচিব এবং এ বার ভোটের দিনে দলের ভোট তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেছেন, ‘‘আমাদের ২১১ জন বিধায়ক প্রত্যেকেই মীরা কুমারকে ভোট দিয়েছেন। সে দিন দিনভর প্রশিক্ষণ চলেছিল যে, মীরার নামের পাশে ‘১’ লিখতে হবে। আমি নিশ্চিত, আমাদের দলের কেউ ক্রস ভোটিং করেননি।’’ দিনভর প্রশিক্ষণ দিয়েও ‘১’ লিখতে ১০ জনের ভুল কী ভাবে হল, না খোঁজ নিয়ে সেই ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি পার্থবাবু।

বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক তথা কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘মীরা আমাদের দলের প্রার্থী। তাঁর বাবা জগজীবন রাম গোটা দেশের রাজনীতিতে সম্মাননীয় নাম। আমাদের কারও ক্রস ভোটিং করার প্রশ্নই ওঠে না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কাণ্ডটা তৃণমূলের ঘটানোই স্বাভাবিক! তার হাজার রকম কারণও আছে।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘এত দিন যারা বিরোধীদের দল ভাঙাতো, এ বার তাদের ঘরই ভাঙছে! মুখ্যমন্ত্রী আমাদের ঘর সামলাতে বলেছিলেন। এ বার তাঁকে ঘর সামলাতে হবে।’’

এমতাবস্থায় রাজ্য রাজনীতিতে সুখীতম ব্যক্তিত্বের নাম দিলীপ ঘোষ! নির্বাচনের দিন বিধানসভায় ঘুরে ঘুরে তিনি বলে বে়ড়িয়েছিলেন, ভোট নষ্ট করবেন না! তৃণমূলের দিকেই আঙুল তুলে এ দিন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতির দাবি, ‘‘আমাদের যা হিসেব ছিল, তা-ই ঘটেছে! ২১শে জুলাইয়ের আগের দিন ২১টা তোপ (কোবিন্দের ১১ ভোট, সঙ্গে বাতিল ১০) দেগেছি! ২১শে-র কর্মসূচিতে তার প্রভাব পড়বে। ওই কর্মসূচি ফিকে হয়ে যাবে।’’ কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ করার পরে বিজেপি-ও দল ভাঙাল? দিলীপবাবুর জবাব, এখানে রাজনৈতিক ভাবে দল ভাঙানোর প্রশ্ন নেই। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দেশের সম্মান রক্ষার প্রশ্নে অনেকে কোবিন্দকে ভোট দিয়েছেন। আর যাঁরা দলীয় নিষেধাজ্ঞা মেনে ভোটটা কোবিন্দকে দিতে পারেননি, তাঁরা প্রতিবাদে ভোট নষ্ট করেছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE