সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল। মঙ্গলবার অমদাবাদে। ছবি: পিটিআই।
ঢাক-ঢোল-নাকাড়া-বাজি। ১২ তুঘলক লেনের মেজাজই বলছে, কংগ্রেসে শুরু হয়ে গিয়েছে রাহুল-রাজ। বিনা বিরোধিতায় দলের সভাপতি পদে রাহুলের নির্বাচিত হওয়ার কথা ঘোষণা হয়েছে গত কাল। আজ গুজরাতের প্রচার শেষে তিনি দিল্লিতে ফিরতেই উৎসবের মেজাজ বাড়িতে। শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগে রাহুল গাঁধী নিজেও আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে কোন পথে এগোতে চান তিনি। জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় মাথা চাড়া দওয়া ‘ক্রোধ আর কদর্যতার ভাষ্য’টি বদলে দেওয়াই হবে তাঁর লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী মোদী গত সাড়ে তিন বছরে একটিও সাংবাদিক বৈঠক করেননি। আজ মোদীর রাজ্যে বসেই সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন রাহুল। শোনালেন সভাপতি হিসেবে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার রূপরেখা। বোঝালেন, কংগ্রেসের রাশ তাঁরই হাতে। আর পরতে পরতে বিঁধলেন মোদীকে। সেই সঙ্গে বুঝিয়ে দিলেন, আগামী দিনে তাঁর সঙ্গে লড়াইটি সরাসরি মোদীরই। তবে মোদীর পথে নয়, পথটি হবে ভিন্ন।
গত কাল রাতেই গাঁধীনগরে রাহুলের সভায় জনতার থেকে ভেসে আসছিল প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে অশ্লীল কথা। বক্তৃতা থামিয়ে মঞ্চ থেকেই ধমক দিয়েছিলেন রাহুল, ‘‘এখানে ভদ্র ভাবে কথা বলতে হবে।’’ প্রধানমন্ত্রীকে ‘নীচ’ বলার জন্য মণিশঙ্কর আইয়ার সম্পর্কে কঠোর রাহুল আজ সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ‘‘কথায় ও কাজে আমার অবস্থান স্পষ্ট। মণিশঙ্কর আইয়ার দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কুকথা বলেছেন। স্পষ্ট ভাবে বলছি, এ সব বরদাস্ত করব না। আবার নরেন্দ্র মোদীও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সম্পর্কে যা বলেছেন, সেটাও মানা যায় না।’’
কয়েক মাস আগেও যাঁকে ‘পাপ্পু’ বলে উড়িয়ে দিতেন বিজেপি নেতৃত্ব, এখন সেই রাহুলই গোটা গুজরাত নির্বাচন পর্বে রীতিমতো দৌড় করিয়ে ছেড়েছেন মোদী-অমিত শাহদের। প্রতিটি সভায় রাহুলকে আক্রমণ করতেই বেশির ভাগ সময় ব্যয় হয়েছে তাঁদের। বিজেপি নেতাদের কবুল করতে হচ্ছে, গুজরাতে এত দিনের একতরফা লড়াইয়ের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন রাহুল।
অনেক ‘পরিণত’ নতুন রাহুলই আজ শোনালেন সভাপতি হিসেবে কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবেন তিনি। জানালেন, অবশ্যই কংগ্রেসের সংগঠনকে শক্ত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে গুজরাতে করা পদক্ষেপের ফল নজরে আসবে কিছু দিনের মধ্যেই। কিন্তু দেশের রাজনীতি এখন কদর্যতায় ভরে গিয়েছে। অনেক ক্রোধ ছড়িয়ে পড়েছে। এই ছবিটা বদলে দিতে কংগ্রেসের আদর্শ ও কর্মপদ্ধতিকে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। রাহুলের কথায়, ‘‘রাজনীতি হওয়া উচিত ভালবাসারই পথে। পুরো চেষ্টা করছি। নরেন্দ্র মোদী আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তিনি আমার সম্পর্কে অনেক ভুল কথা বলতে পারেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে আমার মুখ থেকে তেমন কিছু বেরোবে না।’’
কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে মোদীর বিকল্প একটি ‘ভাষ্য’ মেলে ধরাই যে পাখির চোখ, বুঝিয়ে দিতে রাহুল বললেন, ‘‘গুজরাতে দুর্নীতি নিয়ে একটি কথাও বলেননি প্রধানমন্ত্রী। সংসদও পিছিয়েছেন। পাছে জয় শাহ, রাফাল দুর্নীতির জবাব দিতে হয়। উন্নয়নের কথা বলেননি। ভোট হয় স্থায়ী ভাষ্যে। যা বদল হবে না। আমরা সেই লক্ষ্যেই অটল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy