যত্নে: মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ও রাহুল গাঁধী। মঙ্গলবার উদুপিতে। পিটিআই
কর্নাটকে বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে লিঙ্গায়তদের নিয়ে কংগ্রেসের চালে বেকায়দায় বিজেপি।
কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া সোমবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রাজ্যের লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়কে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর তকমা দেওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সুপারিশ করা হবে। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ১৭ শতাংশ লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের। দ্বাদশ শতাব্দীর ধর্মগুরু বাসবান্নার অনুগামীদের হাতে রাজ্যের ২২৪টি বিধানসভার ৯০টির চাবিকাঠি। এত দিন লিঙ্গায়তরা বিজেপির বড় ভোটব্যাঙ্ক ছিল। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বি এস ইয়েদুরাপ্পা নিজেও লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের। সেই ভোটব্যাঙ্কেই থাবা বসাতে লিঙ্গায়তদের সাত দশকের পুরনো দাবিতে সিলমোহর বসিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে ফিরতে মরিয়া সিদ্দারামাইয়া।
এই সিদ্ধান্তকে হিন্দুদের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা বলে আজ সিদ্দারামাইয়াকে ‘এ যুগের রবার্ট ক্লাইভ’ আখ্যা দিয়েছেন মোদী সরকারের সংসদীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার। কর্নাটকের আর এক গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রদায়, ভোক্কালিগাদের মধ্যে প্রভাবশালী এইচ ডি দেবগৌড়ার দল জেডি (এস)-ও সিদ্দারামাইয়ার সমালোচনা করেছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের আক্রমণ থেকে স্পষ্ট, বিজেপি চাপে পড়েছে। কারণ, মোদী সরকারের কোর্টেই বল ঠেলে দিয়েছেন সিদ্দারামাইয়া। লিঙ্গায়ত ও বীরশৈব লিঙ্গায়ত— দু’টি গোষ্ঠীকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুর তকমা দেওয়ার সুপারিশ করেছেন সিদ্দারামাইয়া। অনগ্রসর জাতিভুক্ত এই সম্প্রদায়ের মানুষরা জাতিবৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা পেতেই বাসবান্নার অনুগামী হন। ১৯৪১-এ প্রথম দাবি ওঠে, লিঙ্গায়তকে পৃথক ধর্মের মর্যাদা দেওয়া হোক। সময়ের সঙ্গে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন লিঙ্গায়তরা। যার প্রমাণ, কর্নাটকের ২২ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ৮ জনই লিঙ্গায়ত। আততায়ীর হাতে নিহত সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ, কন্নড় শিক্ষাবিদ এম এম কালবুর্গিও এই সম্প্রদায়েরই।
আরও পড়ুন: কর্নাটকে রাহুলের ‘অমর, আকবর, অ্যান্টনি’
হিন্দু ভোটে বিভাজন রুখতে বিজেপি নেতৃত্ব এত দিন বিষয়টি এড়িয়েই চলতেন। কিন্তু বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি ইয়েদুরাপ্পা যখন কিছু দিনের জন্য বিজেপি ভেঙে নিজের দল গড়েছিলেন, তখন তিনি এই দাবিপত্রে সই করেন। ফলে ইয়েদুরাপ্পার পক্ষে এখন কংগ্রেসের বিরোধিতা করা কঠিন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, লিঙ্গায়তদের মধ্যে প্রভাবশালী টুমকুরু সিদ্ধগঙ্গা মঠের গুরুরা এ বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে চলছেন।
চাপের মুখে আজ বিজেপি তথা মোদী সরকারের মন্ত্রীরা বলেছেন, লিঙ্গায়তরা তফসিলি জাতিভুক্ত। ধর্মীয় সংখ্যালঘুর তকমা পেলে তাঁরা সেই সব সুবিধা খোয়াবেন। মনমোহন-সরকারের আমলেও ২০০৪ ও ২০১৩-এ এই দাবি খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১১-র জনগণনায় লিঙ্গায়তদের পৃথক ধর্মীয় তালিকাভুক্ত না করার পিছনেও একই কারণ দেখানো হয়েছিল। সে সময় রেজিস্ট্রার জেনারেল কর্নাটক সরকারকে চিঠি দিয়ে জানায়, বীরশৈব-লিঙ্গায়তদের পৃথক ধর্মীয় তালিকাভুক্ত করলে তাদের তফসিলি জাতির তকমা থাকবে না। কারণ এক মাত্র হিন্দু, বৌদ্ধ ও শিখদের মধ্যেই তফসিলি জাতি থাকতে পারে।
উল্টো দিকে লিঙ্গায়ত নেতাদের যুক্তি, ধর্মীয় সংখ্যালঘুর তকমা মিললে ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি পড়ার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সবথেকে বেশি সুবিধা মিলবে। রাজ্যের এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলির এক-তৃতীয়াংশই লিঙ্গায়তরা চালান। সেখানে ওই সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের জন্য অর্ধেক আসন সংরক্ষিত থাকবে। সংখ্যালঘু উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পেরও ফায়দা মিলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy