চাষের প্রয়োজন ছাড়া হাটেবাজারে আর গবাদি পশু কেনাবেচা করা যাবে না। জবাইয়ের জন্য তো নয়ই। কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা ঘিরে এক দিকে উচ্ছ্বসিত গোরক্ষক বাহিনী ও সঙ্ঘ পরিবার। পশু-নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মেনকা গাঁধীও। যদিও রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাড়ছে ক্ষোভের পারদ। উঠে এসেছে এক গুচ্ছ প্রশ্নও।
এই নির্দেশিকা ‘দেশের বহুত্ববাদের উপরে আক্রমণ’ বলে গত কালই তোপ দেগেছিলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। আজ তিনি চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তাঁর কথায়, ‘‘এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজ্যের সম্মতি নেওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কেন্দ্র তা করেনি। এটা গণতন্ত্র-বিরোধী।’’ এই নির্দেশিকায় সমাজের এক বিশেষ ধর্মাবলম্বীদের সরাসরি নিশানা করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিজয়ন। এই সূত্রেই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘পশুহত্যা বন্ধই যদি লক্ষ্য হয়, তা হলে নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছাগল, ভেড়ার মতো পশুকেও আনা হলো না কেন?’’ বিজয়নের কটাক্ষ, ‘‘আজ মাংস খাওয়া ছাড়াতে চাইছে কেন্দ্র। কে বলতে পারে, কাল মাছের উপরেও কোপ পড়বে না!’’ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জবাবি চিঠি না আসা পর্যন্ত এই নির্দেশিকা কার্যকর করা যাবে না দাবি তুলে প্রতিবাদে নেমেছে কেরল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আজ তারা ‘গোমাংস উৎসব’ করে। কোল্লাম জেলায় গো-মাংস রেঁধে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস কর্মীরা।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, গবাদি পশু অথর্ব বা অক্ষম হলেও বিক্রি করা যাবে না। একটা গরুর গড় আয়ু ২০ থেকে ২৫ বছর। আর তা কর্মক্ষম থাকে গড়ে ১৫ বছর। কিন্তু তার পরেও সেটিকে ভরণপোষণ করতে মাসে ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা খরচ! কে তা জোগাবে? সরকারি তরফে জবাব নেই।
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে মানুষের হেঁশেলেও থাবা পড়বে বলে আশঙ্কা। একাধিক সমীক্ষা বলছে, যাঁরা গোমাংস খান, তাঁদের প্রায় ৭০ শতাংশই সংখ্যালঘু খ্রিস্টান ও মুসলিম। কেন্দ্রীয় এই সিদ্ধান্তের পিছনে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি কাজ করছে কি না, সে প্রশ্ন তাই উঠছেই। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত একটা বড় অংশের গরিব মানুষের সস্তায় পুষ্টির উৎসে ধাক্কা দেবে বলেও আশঙ্কা। গবাদি পশুর বাজারে কেন্দ্র এ ভাবে রাশ টানতে চাওয়ায় অর্থনীতিবিদদের একাংশও ক্ষুব্ধ। তাঁদের মতে, এই নির্দেশিকা ‘অযৌক্তিক’। এতে ধস নামবে দেশের প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার মাংস ব্যবসায়। যার একটা বড় অংশ রফতানি হয়। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘এ বার মাংস রফতানি শিল্পের ঝাঁপ ফেলার সময় হয়ে এল!’’
আশঙ্কার মেঘ চর্মশিল্পেও। এই মুহূর্তে বিশ্ব চর্মশিল্প বাজারের ১৩ শতাংশ ভারতের দখলে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই বিধি বলবৎ হলে চর্মশিল্পেরও মৃত্যুঘণ্টা বেজে যাবে। বিপদে পড়বে দেশের প্রসাধন শিল্পও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy