রায়বরেলীর নির্বাচনী জনসভায় প্রিয়ঙ্কা-রাহুল। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
রায়বরেলীর জিআইসি ময়দান। দিনের প্রথম জনসভা। কালো পাড়ের কোরা শাড়িতে বসে তিনি শুধুই দাদার কথা শুনলেন।
বার্তা স্পষ্ট। দাদাই নেতা। তিনি বিশ্বস্ত সৈনিক।
মহারাজগঞ্জে পরের জনসভাতেই ঝলসে উঠল সৈনিকের তরবারি। সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে হুঁশিয়ারি দিলেন, ‘‘চোখে চোখ রেখে কথা বলুন।’’ রাহুল গাঁধীর তৈরি রণকৌশল মেনেই মোদীকে ধারালো আক্রমণ করে বললেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের কোনও বহিরাগত নেতার প্রয়োজন নেই।’’ গর্জে উঠল রায়বরেলী।
উত্তরপ্রদেশের ভোটে এই প্রথম প্রচারে নামলেন প্রিয়ঙ্কা বঢরা। সেটাও নিজের চেনা মাঠ, সনিয়া গাঁধীর লোকসভা কেন্দ্র রায়বরেলী। কিন্তু একা প্রচারে যায়নি প্রিয়ঙ্কা। সঙ্গ নিয়েছেন দাদা রাহুলের। তাঁকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে রাহুল গাঁধীকে খাটো করার কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। সেই ফাঁদে পা দেননি। স্মৃতি ইরানি কটাক্ষ করেছিলেন, প্রিয়ঙ্কা মানুষের প্রশ্নের ভয়ে অমেঠী-রায়বরেলীতে আসছেন না। সেই চ্যালেঞ্জটাও নিয়েছেন। দাদার সঙ্গেই প্রচার মঞ্চে হাজির হয়েছেন।
রাহুল-অখিলেশের রণকৌশল হল, মোদীকে ‘উত্তরপ্রদেশে বহিরাগত’ আখ্যা দিয়ে নিজেদের ভূমিপুত্র হিসেবে তুলে ধরা। কারণ উত্তরপ্রদেশেরই বারাণসী কেন্দ্র থেকে লোকসভায় জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মোদী। সেই সূত্রে নিজেকে উত্তরপ্রদেশের সন্তান হিসেবে তুলে ধরেই ভোটে প্রচার করছেন মোদী।
রাহুলের সঙ্গে যুগলবন্দিতে মোদীর সেই কৌশল ভেস্তে দেওয়ার কাজটি করেছেন প্রিয়ঙ্কা। রাহুল প্রশ্ন তুলেছেন, বারাণসীর ভোল বদলে দিতে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতির কী হল? দাদার সঙ্গতে প্রিয়ঙ্কা কটাক্ষ করেছেন, রাজীব গাঁধী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন অমেঠীতে উন্নয়নের কাজ কেমন হয়েছিল, সেটা দেখা উচিত মোদীর।
মহারাজগঞ্জের জনসভায় প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘আজ টিভিতে শুনলাম, কেউ বলছে, তাঁকে লোকেরা দত্তক নিয়েছে। তিনি উত্তরপ্রদেশের সন্তান। আমি ভাবলাম, উত্তরপ্রদেশের কি বাইরে থেকে কাউকে দত্তক নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে? উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নের জন্য এখানে কোনও যুব নেতা নেই? রাহুলজি ও অখিলেশজি সামনেই রয়েছেন, যাঁরা এই মাটিতেই বড় হয়েছেন।’’ রাহুল বলেন, ‘‘মুখে বললেই সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় না। সম্পর্ক পালন করতে হয়। কথা দিয়ে কথা রাখতে হয়।’’
আরও পড়ুন:
পালানীর পরীক্ষায় পনীর-কাঁটা, আজ আস্থাভোট
উত্তরপ্রদেশের ভোটে কংগ্রেসের রণকৌশল তৈরির দায়িত্ব পেয়ে ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোর প্রিয়ঙ্কা বঢরাকেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সনিয়া গাঁধী বা কংগ্রেস হাইকমান্ড একই সঙ্গে রাহুল-প্রিয়ঙ্কা তাস খেলার পন্থায় সায় দেননি। কংগ্রেসের একটা বড় অংশ চাইছিল, গোটা উত্তরপ্রদেশ ঘুরে প্রচার করুন প্রিয়ঙ্কা। বিজেপি-ও তেমনটাই চাইছিল। প্রিয়ঙ্কা মাঠে নামলেই তাঁরা রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির পসরা নিয়ে তৈরি ছিলেন। কিন্তু প্রিয়ঙ্কা মা ও দাদার লোকসভা কেন্দ্র রায়বরেলী-অমেঠীর গণ্ডিতেই থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সেখানেও সমস্যা ছিল প্রিয়ঙ্কার সামনে। কারণ গোটা উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস, সপা-র জোট হলেও এই অমেঠী-রায়বরেলীতেই হয়নি। এখানে কংগ্রেসের সঙ্গে সমাজবাদী পার্টিও প্রার্থী দিয়েছে। তবুও রাহুল-অখিলেশ একের পর এক যৌথ প্রচার করছেন। আগামী সপ্তাহেও ঝাঁসি ও ইলাহাবাদে দু’জনের যৌথ প্রচার হবে। আজ প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘কংগ্রেস-সপার জোটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, আরও মজবুত করতে হবে। কারণ এটা যুবকদের জোট।’’ প্রিয়ঙ্কার প্রচারে জোটের লাভই দেখছে সমাজবাদী পার্টি নেতৃত্ব। দলের মুখপাত্র জুহি সিংহ বলেন, ‘‘তাঁর উপস্থিতিই একটা বড় ফারাক গড়ে দেয়। আমাদের বিশ্বাস, প্রিয়ঙ্কার যে জনসমর্থন রয়েছে, তাতে জোটই লাভবান হবে। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে প্রিয়ঙ্কার জনপ্রিয়তা রয়েছে।’’
আজ রায়বরেলীতে অসংখ্য মহিলা রাহুল-প্রিয়ঙ্কার কথা শুনতে এসেছিলেন। প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখন কোনও মহিলাকে নিয়ে কথা বলেন, তাঁকে কারও বোন, মেয়ে, স্ত্রী কিংবা মা হিসেবে পরিচয় দিয়ে তুলে ধরেন। এমনটা হবে কেন? আমিও মহিলা। দেশের মহিলাদের তরফ থেকে ওঁকে বলতে চাই, সবসময়ে সম্পর্ক দিয়ে মহিলাদের চিহ্নিত করার প্রয়োজন নেই।’’
উত্তরপ্রদেশের ভোটে রাহুল প্রথমেই সুর বেঁধে দিয়েছিলেন, নোট বাতিলের ফলে আমজনতার হেনস্থা আর কৃষকদের ঋণ মকুবের দাবি তাঁর প্রচারের প্রধান হতিয়ার হবে। আজ সেই অস্ত্রেই মোদীকে আক্রমণ করেন রাহুল। বলেন, ‘‘যদি অত্যাচারের কথাই বলেন, তা হলে প্রধানমন্ত্রী চোখে চোখ রেখে বলুন, গত ছয় মাসে মহিলাদের উপর সব থেকে বেশি অত্যাচার কে করেছে?’’ প্রিয়ঙ্কার প্রশ্ন, যখন মহিলাদের ব্যাঙ্ক-এটিএমের লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেটা কি অত্যাচার ছিল না! আর রাহুল বলেন, ‘‘আড়াই বছর আগে শাহরুখের সিনেমা দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে-র মতো
অচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মোদী। লোকে ভোট দিল। আড়াই বছর পরে দেখা গেল, শোলের গব্বর বেরিয়ে এসেছে।’’
‘দিলওয়ালে..’ হোক বা ‘শোলে’--কংগ্রেসের নেতারা খুশি। কারণ তাঁদের মতে, প্রথমদিনেই ভাই-বোনের যুগলবন্দি ‘সুপারহিট’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy