শুক্রবার সেন্ট্রাল হলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।
ভেবেছিলেন, জাঁকজমক-জৌলুস আর তাঁর বক্তৃতার চাকচিক্যে ঢাকা পড়ে যাবে সব কিছু।
কিন্তু তা হল না! উল্টে ঘর-ভর্তি ঘনিষ্ঠদের সামনেই মুখ বুজে খোঁচা হজম করতে হলো।
প্রণব মুখোপাধ্যায় তখন অর্থমন্ত্রী। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জিএসটির তীব্র বিরোধিতা করে তা আটকে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই মোদীই শুক্রবার মধ্যরাতে তড়িঘড়ি চালু করে দিলেন জিএসটি। সংসদের সেন্ট্রাল হলে সেই ‘মোদী-তামাশা’য় তাই যায়নি কংগ্রেস। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হিসেবে উপস্থিত থেকে মোদীকে জিএসটি নিয়ে পরোক্ষে খোঁচা দিতে ছাড়েননি প্রণব।
শুক্রবার সেন্ট্রাল হলের ঠাসা জমায়েতে প্রণববাবু অবশ্য সময় পেয়েছেন মাত্র দশ মিনিট। ওই দশ মিনিটকেই ‘কাজে’ লাগিয়েছেন প্রণববাবু। বৃহস্পতিবারই কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনিই ২০১১ সালে জিএসটির সংশোধনী বিল পেশ করেছিলেন। কিন্তু কাজ শেষ করতে পারেননি। কারণ, তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন মতকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চেয়েছিলেন। প্রণববাবু যেটি স্পষ্ট বলেননি, কংগ্রেস সেটা বলেছে। দলের বক্তব্য, সে সময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদীই জিএসটির বিরোধিতা করে তা আটকে রেখেছিলেন। কংগ্রেসের এই মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটল গত কাল রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায়।
আরও পড়ুন:হোঁচট দিয়েই দিন শুরু জিএসটি-র
জিএসটি-প্রসঙ্গে কয়েকটি রাজ্যের প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রপতি বলেন, অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি সে সময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কয়েক বার দেখা করেছেন। সেই সব বৈঠকে জিএসটি নিয়ে অনেক আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল বলে তাঁর স্পষ্ট মনে রয়েছে। যে সব মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি সে সময়ে দেখা করেছিলেন, তাঁদের সিংহভাগই যে গঠনমূলক মনোভাব দেখিয়েছেন, তা-ও বলেন রাষ্ট্রপতি। জিএসটি নিয়ে বিরোধীদের আশঙ্কা প্রসঙ্গেও মোদীকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি প্রণববাবু।
শুধু কি খোঁচা? অনেকেই বলছেন, শুক্রবারের অনুষ্ঠানকে চোখধাঁধানো করতে মোদী আয়োজনের ত্রুটি না রাখলেও তা তেমন ‘জমেনি’। ওই ‘উৎসবে’ বিরোধী অনেকে না এলেও এনসিপি, জেডি(ইউ) নেতাদের হাজির করিয়েছেন মোদী। সংসদ ভরাতে দু’ডজন স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে সরকারি খরচে বিজেপি সাংসদদের ভিড় জুটিয়েছেন। এত জমায়েত, আলোর রোশনাইয়েও প্রাণহীন হয়ে রইল সেন্ট্রাল হল। বাকপটু মোদীর বক্তৃতাতেও সেই ছন্দ যেন উধাও। বারবার হোঁচট খেলেন। ‘জিএসটি আসলে গরিবদের জন্য’ বলে নোট বাতিলের সময়কার পুরনো মন্ত্রও আওড়েছেন। বিরোধী দলের অনুপস্থিতির প্রচার ঢাকতে বেনজির ভাবে জিএসটির কৃতিত্ব দিলেন সব দলকে। আর এ সব করতে গিয়ে বক্তৃতার জন্য নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেন। রাষ্ট্রপতির জন্য রাখলেন মাত্র দশ মিনিট!
জৌলুসহীন অনুষ্ঠানে খোঁচাটা এল ওই দশ মিনিটেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy