কুর্সির লড়াই: উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি উপলক্ষে দলীয় সভায় রাহুল গাঁধী। লখনউয়ে শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
সমস্ত বিরোধী দলকে একজোট করে আগামী সপ্তাহেই পণ্য পরিষেবা করের বৈতরণী পার হতে চাইছে সরকার। কিন্তু তার মুখে বিরোধীরা আজ এককাট্টা হয়ে গেল সংখ্যালঘু ও দলিত নির্যাতনের প্রশ্নে। উনার পরে মধ্যপ্রদেশে সংখ্যালঘু মহিলার উপরে অত্যাচারের ঘটনায় আজ শাসক দলকে সংসদে একযোগে চেপে ধরেন বিরোধীরা।
সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি আজ জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে পণ্য পরিষেবা বিল রাজ্যসভায় নিয়ে আসা যাবে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রমণিয়ন দফায় দফায় বিরোধী দলগুলির সঙ্গে কথা বলে সমঝোতা সূত্রের দিকে এগোচ্ছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে বিরোধী দলগুলির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন নিয়ে বিলটি এই অধিবেশনেই পাশ করানো যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এর জন্য যাদের উপরে সরকারকে ভরসা করতে হচ্ছে, সেই বিরোধী দলগুলিই আজ একজোট হয়ে সরকারকে সমঝে চলার বার্তা দিল। বার্তাটি এই যে, গো-রক্ষার নামে সংখ্যালঘু ও দলিতদের উপরে নির্যাতন বরদাস্ত করা হবে না।
লোকসভার শূন্য প্রহরে কংগ্রেস আজ প্রথমে সংখ্যালঘু মহিলা নিগ্রহের প্রসঙ্গ তোলে। সরকারের পক্ষ থেকে আশানুরূপ জবাব না মেলায় সনিয়া গাঁধীদের সঙ্গেই লোকসভার অধিবেশন বয়কট করেন তৃণমূল, আরজেডি, জেডিইউ এবং বাম সংসদেরা। অন্য দলের সাংসদেরা পরে ফিরে এলেও, গোটা দিনের জন্যই অধিবেশন বয়কট করে তৃণমূল।
উনায় দলিত নিগ্রহের স্মৃতি এখনও টাটকা। সেই রেশ কাটার আগেই দু’দিন আগে মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে গো-রক্ষা বাহিনীর লোকজন দুই সংখ্যালঘু মহিলাকে মারধর করে, তাঁদের সঙ্গে গোমাংস রয়েছে এই অভিযোগ তুলে। বিজেপি- শাসিত রাজ্যগুলিতে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই আজ সরকারকে চেপে ধরার সুযোগ পেয়ে যান বিরোধীরা। লোকসভার শূন্য প্রহরে বিষয়টি তোলেন কংগ্রেসের দলনেতা মল্লিকার্জ্জুন খড়্গে। তাঁর কথায়, ‘‘মন্দসৌরে গরুর মাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে পুলিশের সামনে দুই মহিলাকে মারধর করল গো-রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। অথচ পরে দেখা গেল সেটা ছিল মহিষের মাংস।’’
খড়্গের অভিযোগ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া এই ঘটনা ঘটানো অসম্ভব। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গোটা দেশে দলিত ও সংখ্যালঘু নির্যাতন বেড়ে গিয়েছে। এবং ভোট মেরুকরণের লক্ষ্যেই এ সব ঘটানো হচ্ছে।
এটা ঘটনা যে, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহিত ভেমুলার মৃত্যু থেকে দাদরিতে মহম্মদ আখলাকের হত্যা— একের পর এক ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে বিজেপি শিবিরকে। যদিও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এমন নয় যে এ ধরনের ঘটনা আগে ঘটেনি। আগেও বিক্ষিপ্ত ভাবে এমন ঘটনা ঘটেছে। এখন বিজেপি ক্ষমতায় থাকায় সব ঘটনার সঙ্গেই শাসক দলকে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, কখনওই এ ধরনের ঘটনাকে প্রশয় দেয় না। তাই সব ক’টি ক্ষেত্রেই দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে ঘরোয়া মহলে বিজেপি শিবির স্বীকার করে নিচ্ছে, দল ক্ষমতায় আসায় কিছু কর্মীর মধ্যে অতি উৎসাহ তৈরি হয়েছে। সে কারণেই দু’-একটি স্থানে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটছে। দলের সুরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আজ লোকসভায় বলেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশ সরকার ঘটনার পরেই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। সংসদকে আশ্বস্ত করে বলছি, দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কিন্তু এতে সন্তুষ্ট হননি বিরোধীরা। কংগ্রেস, তৃণমূল, আরজেডি ও বাম সাংসদরা ওয়াকআউট করেন।
বিরোধীদের এই একতা দেখেও অবশ্য পণ্য পরিষেবা বিলে পাশ করানোর প্রশ্নে আশাবাদী সরকার। এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, ‘‘আজ বিরোধীরা একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে সামনে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কিন্তু আমরা আশা করছি, আর্থিক সংস্কারের প্রশ্নে বিরোধী দলগুলি জিএসটি বিলকে সমর্থনই করবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy