নরেন্দ্র মোদী
পাহাড়ের কোলে আধ ঘণ্টার নিখুঁত বক্তৃতা। নির্যাস বলছে— এত অহঙ্কার! মানুষের কথা ভাবার পরোয়া নেই। নিজের চালেই চলে। বিধায়ক কিনে, লোভ দেখিয়ে সরকার গড়ে। দলের বেইমানদের কোনও তদন্ত হয় না। বেমালুম মিথ্যা কথা প্রচার করিয়ে দেয়। কোনও লোকলজ্জা নেই। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কোনও হুঁশ নেই...।
না। নরেন্দ্র মোদীকে কোনও বিরোধী নেতা তোপ দাগছেন না। বরং উল্টোটাই। খোদ মোদীই বলছেন এসব কথা।
ঠিক পাঁচ বছর আগে। এই দেবভূমিতেই।
ঠিক পাঁচ বছর আগে। এই মান্ডিতেই।
আরও পড়ুন: তাঁর ‘স্বচ্ছতা’ নিয়েই গুঞ্জন সংবাদমাধ্যমে
ঠিক পাঁচ বছর আগে। তখনও গুজরাত আর হিমাচলের ভোট ছিল একসঙ্গে।
ঠিক পাঁচ বছর আগে। তখনই প্রথম নিজের রাজ্যের বাইরে ফিরি শুরু করলেন ‘গুজরাত মডেল’। শুরু হয়েছিল গুজরাতের বাইরে পা রেখে ধাপে ধাপে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ছক কষা। তখনই প্রথম ভেংচি কাটার হাতেখড়ি। এই মান্ডিতেই তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে মোদী বলেছিলেন ‘মৌন-মোহন’।
কংগ্রেস দফতরে বসে কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়ায় দায়িত্বে থাকা রাজেন্দ্র শর্মা বললেন, “কালের চক্র দেখুন, পাঁচ বছর আগের সেই কথাগুলির অভিমুখ এখন আপনা থেকেই ফিরে এসেছে মোদীর দিকে। প্রধানমন্ত্রীর সে দিনের প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে নিন। কংগ্রেসকে তখন যা বলেছিলেন, এখন প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মানুষ তা-ই বলছে। বিরোধীদের বলতে হচ্ছে না।”
দু’দিন ধরে হিমাচলে ঘুরপাক খেতে খেতে একটি বিষয় স্পষ্ট, মোদীর থেকেও স্থানীয় নেতাদের কাঁধ আরও বড়। কংগ্রেসের যেমন ‘রাজাসাহেব’ বীরভদ্র সিংহ, তেমনই বিজেপির প্রেম কুমার ধুমল। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জগত প্রকাশ নাড্ডাকেও দেখতে চান অনেকে। বোধহয় সে কারণেই অমিত শাহ কাউকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেননি। জিতলে উত্তরপ্রদেশ কিংবা হরিয়ানার ধাঁচেই অন্য কাউকে কুর্সিতে বসিয়ে যে চমক দিতে পারে বিজেপি, সে চর্চাও কম নয়।
কিন্তু মোদীর সেই অতীতের চেনা ঝড়টি নেই। বরং মোদী যে নোট বাতিল আর জিএসটি করেছেন আর তা নিয়ে মানুষ পরিশ্রান্ত, সে কথা মুখে মুখে। আর সেটাই ভাঁজ ফেলেছে বিজেপির কপালে। কাল আসছেন অরুণ জেটলি। রাজনাথ সিংহ, নিতিন গডকড়ী এমনকী হিন্দুত্বের হাওয়া তুলতে যোগী আদিত্যনাথও দু’দিন করে প্রচার করবেন। অমিত শাহ তো আছেনই। খোদ মোদী ২ নভেম্বর থেকে সভা করা শুরু করছেন। ধুমল জানালেন, মোট পাঁচটি সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
শেষ বাজারে মোদীর এত সভা কেন? ধুমলের যুক্তি, রাজ্যের ৯০ ভাগ মানুষই বিজেপির পাশে। একশো ভাগ করতে প্রধানমন্ত্রীকে আনা হচ্ছে। কংগ্রেস দফতরে পাওয়া গেল হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিংহ হুডাকে। তিনি বললেন, “ঘুরে দেখুন, মোদীর অস্তিত্ব নেই কোথাও। জিএসটি-তে মানুষের হয়রানি বেড়েছে। পেঁয়াজ এখন ৫০ টাকায় বিকোচ্ছে। পাঁচ বছর আগেও সভা করে মোদী হিমাচলে বিজেপিকে জেতাতে পারেননি, এ বারেও পারবেন না।” বিজেপি বলছে, তখন ক্ষমতাকেন্দ্রে মোদী-শাহ ছিলেন না। এখন বিজেপির গঠনতন্ত্রও ভিন্ন। কৌশলও অন্য রকম। জয় নিশ্চিত।
তবে পাঁচ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মোদী যা পারেননি, এ বারে ক্ষমতার সাড়ে তিন বছর পর চ্যালেঞ্জটি তাঁর নিজের সঙ্গেই। লড়াইটি মোদী বনাম মোদীরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy