দিল্লির সাউথ ব্লকে একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা, বিদেশ মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর দফতর। করিডর ধরে এ-মাথা থেকে ও-মাথা যাওয়া গেলেও মাঝখানে লোহার গেটগুলো নিরাপত্তার কারণে বন্ধ থাকে। অটলবিহারী বাজপেয়ী জমানায় প্রতিরক্ষা ও বিদেশের দায়িত্ব সামলানো যশোবন্ত সিংহ এক বার বলেছিলেন, ‘‘মাঝখানের গেটগুলো খুলে দিলে কাজেরই সুবিধে হয়।’’
নির্মলা সীতারামন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী দফতর, বিদেশ মন্ত্রক ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মধ্যে এই গেটগুলো কার্যত খুলে যাবে বলেই মনে করছেন বিরোধী রাজনীতিক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের দাবি, মোদী জমানায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরই কার্যত বিদেশ নীতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ বার প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও তাই হবে। ব্রহ্ম চেলানির মতো নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা নাম না করে নির্মলার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিরোধীদের যুক্তি, প্রধানমন্ত্রীর দফতর সেটারই সুযোগ নেবে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন: প্রথম দিনেই লক্ষ্য ঘোষণা তিন মন্ত্রীর
সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির মতে, ‘‘গোটা দেশ জানে, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দফতরের কর্তারাই সরকার চালান। মন্ত্রিসভার কোন চেয়ারে কে বসছেন, তাতে কিছুই যায় আসে না।’’
মোদী সরকারের কর্তাব্যক্তিরা অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, সরকারের আর যা-ই সমালোচনা হোক না কেন, তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বিরোধীরা বড় কোনও দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেননি। রাজীব গাঁধী, অটলবিহারী বাজপেয়ী থেকে মনমোহন সিংহ—সব সরকারের আমলেই প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মোদী তার পুনরাবৃত্তি চান না বলেই নির্মলাকে তাঁর সততার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে নিয়ে এসেছেন।
শিল্পমহলের মত, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নির্মলা সীতারামনের অভিজ্ঞতা না থাকলেও শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা দেশে প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে নির্মলার প্রধান কাজ ছিল মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির রূপায়ণ। যেখানে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলি এ দেশেই কারখানা তৈরি করে দেশের ও বিদেশের বাজারের জন্য পণ্য তৈরি করবে। শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে এ ক্ষেত্রে তেমন সফল না হলেও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ রূপায়ণ করতে পারেন।
কী ভাবে?
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বিদেশ থেকে যুদ্ধাস্ত্র কেনার বদলে এ দেশেই তা তৈরির জন্য প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর নতুন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া তৈরি করেন। এত দিন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিই বিদেশি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এ দেশে যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করতে পারত। অরুণ জেটলি বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্যও সেই দরজা খুলে দেন। তারপরেই টাটা, আদানির মতো গোষ্ঠীগুলি বিদেশি প্রতিরক্ষা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে। নৌসেনার হেলিকপ্টার, বায়ুসেনার এক ইঞ্জিনের যুদ্ধবিমান কেনার জন্য এ বার এরা প্রতিযোগিতায় নামবে। বরাত পেলে এ দেশের কারখানাতেই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি হবে।
ডোকলাম নিয়ে সংঘাতের মধ্যেই সাংহাইতে ব্রিকস-এর বাণিজ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দিতে চিনে গিয়েছিলেন নির্মলা। এ বার সীমান্তেই চিনকে ঠেকানোর ব্যবস্থা করতে হবে তাঁকে। কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারির কটাক্ষ, ‘‘বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে ওঁর সাফল্যের খাতায় তেমন কিছু নেই। আশা করা যায়, পদোন্নতির পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে একই ঘটনা ঘটবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy