Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

ধনী প্রার্থীদের টক্কর কপর্দকহীনদেরও

‘‘বিধায়কের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন? সাক্ষাৎকার চান?’’— যাঁর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে এ রকম আপ্যায়ন মিলল, তিনি সম্প্রতি সামান্য নাম করেছেন এ বারের অসম বিধানসভা ভোটে কপর্দকহীন, দরিদ্রতম প্রার্থী হিসেবে। কিন্তু নিজেকে এখনই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ভেবে ফেলেছেন মরিয়নির দেওধারি গ্রামের দিগন্ত ফুকন!

ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগে ইভিএম পরীক্ষা করে দেখছেন ভোটকর্মীরা। রবিবার হাইলাকান্দিতে অমিত দাসের তোলা ছবি।

ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগে ইভিএম পরীক্ষা করে দেখছেন ভোটকর্মীরা। রবিবার হাইলাকান্দিতে অমিত দাসের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:২৭
Share: Save:

‘‘বিধায়কের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন? সাক্ষাৎকার চান?’’— যাঁর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে এ রকম আপ্যায়ন মিলল, তিনি সম্প্রতি সামান্য নাম করেছেন এ বারের অসম বিধানসভা ভোটে কপর্দকহীন, দরিদ্রতম প্রার্থী হিসেবে। কিন্তু নিজেকে এখনই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ভেবে ফেলেছেন মরিয়নির দেওধারি গ্রামের দিগন্ত ফুকন!

৩৭ বছরের আত্মবিশ্বাসী যুবক সাক্ষাৎকার নিতে আসা সাংবাদিকদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘এখন অবাধে আমার ঘরে ঢুকতে পারলেন বটে, ভোটের পরে যখন সাক্ষাৎকার নিতে আসবেন তখন দেহরক্ষীদের বাধা পেরিয়ে আসতে হবে।’’

ধেমাজি থেকে লড়তে নামা গোগামুখ পুরানি পারঘাটের বাসিন্দা রাজকুমার দোলে আবার জেতার আগেই ছ’জন দেহরক্ষী নিয়ে ঘুরছেন। নির্দল বিধায়কদের কেউ সবজি বেচেন, কেউ বডি-বিল্ডার, কেউ কর্মহীন। তবু ভোটে দাঁড়িয়েছেন। কেউ বলছেন— কল্‌জের জোরটাই বড় কথা। কেউ আবার নেহাতই শখের প্রার্থী।

কপর্দকহীন প্রার্থী রয়েছেন দু’জন। একজন মরিয়নির দিগন্তবাবু, অন্য জন টিওকের সিপিআইএম(এল) প্রার্থী জিতেন তাঁতি। দশম শ্রেণি পাশ দিগন্তবাবুর আক্ষেপ, প্রায় ২০ বছর কংগ্রেসের হয়ে কাজ করার পরেও দল তাঁর দাম দেয়নি। তাই স্ত্রী আর চার বছরের মেয়েকে বাড়িতে রেখে, বন্ধুর মোটরসাইকেলে একাই প্রচারে নেমে পড়েছেন তিনি। সঙ্গে কোনও ব্যানার, পোস্টার নেই। এক বারের বিধায়ক তথা এনসিপি-র অলক ঘোষ এবং দু’বারের বিধায়ক কংগ্রেসের রূপজ্যোতি কুর্মীর বিরুদ্ধে কোন সাহসে লড়ছেন? দিগন্তবাবুর জবাব, ‘‘টাকা সব সময় জেতায় না। জেতায় মানুষের ভালবাসা। আমাকে মরিয়নির সব এলাকার মানুষ চেনেন, ভালবাসেন।’’ সব চেয়ে কম টাকা থাকা তিন প্রার্থীর মধ্যে দু’জনই করিমগঞ্জের। দেবাংশু নাথ এসইউসআইয়ের টিকিটে পাথারকান্দি থেকে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২ হাজার ৩৬২ টাকা। সত্যেন্দ্র নমঃশূদ্র একই দল থেকে রাতাবাড়ির প্রার্থী। তাঁর সম্পদ খানিক বেশি— ৪ হাজার ৬৩০ টাকা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দুলিয়াজানের 'জন কংগ্রেস পার্টি'র প্রার্থী অঞ্জলি সেনাপতির সম্পদ ২ হাজার ৫৫০ টাকা।

অবশ্য অন্ধকারের উল্টো দিকে আলোর দিকের চমক অনেকটাই বেশি। সমীক্ষা বলছে, প্রথম পর্যায়ে রাজ্যে লড়তে নামা ৫৩৯ জনের মধ্যে ২১ শতাংশ অর্থাৎ ১১২ জন কোটিপতি। গত বার সংখ্যাটি ছিল ১০২। মোট প্রার্থীর ১৫ শতাংশ। তুলনায়, ২০০৬ সালে লড়তে নামা প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র ১৬ জন কোটিপতি ছিলেন।

প্রথম পর্যায়ের ৬৫টি আসনে লড়তে নামা কংগ্রেসের ৬৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩৬ জন, বিজেপির ৫৪ জনের মধ্যে ২৩ জন, অগপর ১১-র মধ্যে সাত জন আর এনসিপি ও বিপিএফের ২৬ জনের মধ্যে তিন জন প্রার্থী কোটিপতি। নির্দল প্রার্থীদের মধ্যে দরিদ্রদের যেমন ছড়াছড়ি তেমনই ২৬ জন কোটিপতিও রয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, শিবসাগরের প্রণব গগৈ, মার্গারিটার প্রদ্যোৎ বরদলৈদের পিছনে ফেলে, স্বামীর ঐতিহ্য বজায় রেখেই এ বারের ভোটেও ধনীতমদের মধ্যে সবার উপরে রয়েছেন তেজপুরের প্রাক্তন সাংসদ মণিকুমার সুব্বার স্ত্রী, নির্দল প্রার্থী জ্যোতি সুব্বা। সুতিয়া থেকে লড়া জ্যোতিদেবীর ঘোষিত সম্পদের পরিমাণ ২৮৮ কোটি টাকার বেশি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নাহারকটিয়ার অগপ প্রার্থী নরেন সোনোয়ালের চেয়ে তাঁর সম্পদ প্রায় আট গুণ বেশি। নরেনবাবুর সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ৩৩ কোটি টাকা। ২৫ কোটি টাকার ঘোষিত সম্পদ-সহ তৃতীয় স্থানে রয়েছেন আলগাপুরের কংগ্রেস প্রার্থী রাহুল রায়। অবশ্য ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কংগ্রেসের মন্ত্রী-বিধায়কদের সম্পদ অনেক বেশি হলেও বেনামে সম্পদ করা ও সম্পত্তির প্রকৃত তথ্য গোপন করাতেই তাঁরা হিসেবের বাইরে থেকে গিয়েছেন।

সমীক্ষা দেখাচ্ছে, ৬৮ জন প্রার্থী তাঁদের 'প্যান' কার্ডের তথ্য দেননি। আয়কর দাখিলের হিসেব দেননি ২৫৫ জন। বৈঠালাংশুর নির্দল প্রার্থী হলিরাম টেরং, ডিফুর বিজেপি প্রার্থী সুম রংহাং এবং লোক জনশক্তি পার্টির দীপেন্দ্র রংপির সম্পত্তির পরিমাণ যথাক্রমে ৩, ২ ও ১ কোটি হলেও তাঁরা আয়কর জমার হিসেব দেননি।

দলগত হিসেবে কংগ্রেসের ৬৫ জন প্রার্থীর গড় সম্পত্তি ২ কোটি ৬২ লক্ষ, বিজেপির ৫৪ জনের গড় সম্পদ দেড় কোটি, ২৭ জন এআইইউডিএফ প্রার্থীর গড় সম্পত্তি এক কোটি ৬ লক্ষ টাকা। অন্য দিকে, ৫৩৯ জন প্রার্থীর মধ্যে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে হত্যা, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ, অপহরণের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। থাওরায় বিজেপি প্রার্থী কুশল দুয়ারার বিরুদ্ধে হত্যা এবং ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। আমগুড়ির নির্দল প্রার্থী জনার্দন হাজরিকার বিরুদ্ধেও হত্যার মামলা চলছে। মোট ৬ শতাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ঝুলছে ফৌজদারি মামলা। এর মধ্যে কংগ্রেসের আট জন, বিজেপি ও এআইইউডিএফের তিন জন করে বিধায়ক রয়েছেন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বর্তমান বিধায়কদের মধ্যে ১০ শতাংশের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি অভিযোগ।

অন্য বিষয়গুলি:

State election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy