Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪

চিনের প্রাচীর পেরোনোই লড়াই মোদীর

বাধার পাহাড় খাড়া করেছে বেজিং। কিন্তু সেই চিনের প্রাচীর পেরিয়েই এ বার ওয়াশিংটনে ভারতের মর্যাদার লড়াইয়ে জিততে চান নরেন্দ্র মোদী। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমন্ত্রণেই মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মার্কিন সফর।

সামনে তিনের কঠিন বাধা। পারবেন কি মোদী? ছবি: রয়টার্স।

সামনে তিনের কঠিন বাধা। পারবেন কি মোদী? ছবি: রয়টার্স।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৬ ০২:৪৮
Share: Save:

বাধার পাহাড় খাড়া করেছে বেজিং। কিন্তু সেই চিনের প্রাচীর পেরিয়েই এ বার ওয়াশিংটনে ভারতের মর্যাদার লড়াইয়ে জিততে চান নরেন্দ্র মোদী।

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমন্ত্রণেই মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মার্কিন সফর। মঙ্গলবারই ওবামার সঙ্গে মোদীর বৈঠক। পরের দিন মার্কিন কংগ্রেসে বক্তৃতা দেওয়ার কথা মোদীর। বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম, যিনি এ বছর মার্কিন কংগ্রেসে নিজের বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন। বোঝাই যাচ্ছে, ভারতকে ঠিক কতখানি গুরুত্ব দিচ্ছে আমেরিকা। কূটনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করেন, চিনকে আটকাতেই ভারতের সঙ্গে ওয়াশিংটনের এই সখ্য। তবে তার মধ্যেই প্রতিরক্ষা থেকে বাণিজ্য— সব ক্ষেত্রেই সুযোগকে ব্যবহার করতে চান মোদী।

প্রধানমন্ত্রী মোদী কয়েকটি জিনিস এ বারের সফরে আদায় করে নিতে চান। তিনি আশা করছেন, মার্কিন সহায়তায় এ বার ভারত ‘মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম’-এর (এমটিসিআর) সদস্য হতে পারবে। তা হলে বন্ধু দেশগুলির কাছে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে পারবে ভারত। এর ফলে ৪৮টি দেশের নিউক্লিয়ার সাপ্লাই গ্রুপ (এনএসজি)-এর সদস্য হতে সুবিধা হবে। এনএসজি-র সদস্য হতে পারলে ভারতের মর্যাদাও বেড়ে যাবে।

তবে ভারত যে হেতু পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিতে সই করেনি, তাই তাকে এনএসজিতে ঢুকতে দিতে চায় না চিন। তবে নয়াদিল্লির বক্তব্য হল, চিন যখনই কোনও বহুপাক্ষিক মঞ্চে ঢুকেছে, ভারত তার বিরোধিতা করেনি। তাই ভারত চায় না, এমটিসিআর ও এনএসজি-র সদস্য হতে নয়াদিল্লিকে বাধা দিক বেজিং। গত মাসে প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-কে এই নিয়ে চাপ দিয়ে এসেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তবে দক্ষিণ চিন সাগরে ওয়াশিংটন ও বেজিং প্রশাসনের উত্তেজনার মধ্যে মোদী-ওবামা বৈঠককে কী ভাবে নেয় চিন— তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করবে।

মোদীর আমেরিকা সফরে প্রতিরক্ষা নিয়েও দু’দেশের মধ্যে চুক্তির সম্ভাবনা। বিশেষত ‘ওয়েস্টিং হাউস ইলেক্টেড কোম্পানি’ যাতে আগামী বছরের শুরুতে ছ’টি পরমাণু চুল্লি ভারতে স্থাপন করতে পারে, সে জন্য মোদী আগ্রহী। এই সংস্থাটি গুজরাতের। ২০৩২-এর মধ্যে ৩৬ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন চুল্লি তৈরি করাই ভারতের লক্ষ্য।

সন্ত্রাস মোকাবিলা, দক্ষিণ চিন সাগরের নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা এ বার মোদীর মার্কিন সফরে মূল জায়গা নেবে। সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানকে চাপে রাখার কৌশল তো আছেই, কিন্তু এ বার মোদীর প্রধান লক্ষ্য, এনএসজির সদস্য হয়ে দুনিয়ার মানচিত্রে ভারতের সম্মানকে বাড়িয়ে নেওয়া। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মর্যাদা বাড়লে তা দেশে লগ্নির সম্ভাবনাকেও বাড়িয়ে তোলে বলে মনে করছেন মোদী।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আমেরিকা। ঠিক এমন সময়ে মোদীর সফর কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল বিভিন্ন মহলে। এমনকী মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি উঠেছিল। একটি মত ছিল, ভোটের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে দেশে নিয়ে এসে ওবামা নিজের ফায়দাই চাইবেন। কিন্তু ভারত কী পাবে? বিদেশসচিব জয়শঙ্করের বক্তব্য ছিল, ক’দিন বাদেই ওবামার প্রশাসন কার্যত তদারকি সরকার হয়ে যাবে। জানুয়ারি পর্যন্ত কোনও কাজ হবে না। তাই এখনই ওবামার কাছ থেকে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সহযোগিতা আদায় করে নিতে হবে ভারতকে। আমেরিকায় প্রশাসনের ধারাবাহিকতা রয়েছে। তাই যে দলই ক্ষমতায় আসুক, ভারতের প্রতি মার্কিন দায়বদ্ধতা অটুট থাকবে। অটলবিহারী বাজপেয়ীও বিল ক্লিন্টনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন শেষ বেলায়। ভোট ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল তখন। পরে জর্জ বুশ এলেও ভারত-মার্কিন সম্পর্কের অগ্রগতি ব্যাহত হয়নি। ক্লিন্টনের ভোট-লগ্নে বাজপেয়ী যা করেছিলেন, ওবামা জমানায় মোদী সেই ট্র্যাডিশন ধরেই এগোচ্ছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

narendra modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy