কাশ্মীরে ডাণ্ডা দিয়ে ঠাণ্ডা করার নীতি নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে গোটা কাশ্মীরে, বিশেষত দক্ষিণ কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে। রাজ্যে রাজ্যপালের শাসন জারি না করে মেহবুবা মুফতির নির্বাচিত সরকারকে সামনে রেখে আরও সেনা পাঠিয়ে আগামী দশ দিনের মধ্যে কাশ্মীর উপত্যকাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাই মোদী সরকারের লক্ষ্য।
কাশ্মীর নীতির প্রশ্নে মোদীকে সমর্থন করছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত মনে করছেন, এই প্রথম কাশ্মীরে জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামি ধর্মীয় মৌলবাদ যুক্ত হয়েছে। ভাগবতের মতে, এই ঘটনা গোটা দেশে মেরুকরণের প্রক্রিয়াকে জোরদার করবে। তাতে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার আরও শক্তিশালী হবে।
মোদী-অমিত শাহ-সঙ্ঘের এই রাজনৈতিক লাইনকে চ্যালেঞ্জ করার মতো জোর দলে কারও নেই। তবে মন্ত্রিসভার ভিতরে ক্ষীণ কণ্ঠে হলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ মোদীকে এই পথের বিপজ্জনক দিকটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন। প্রথমত, এই পথে চলে কাশ্মীর আরও উত্তাল হলে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যর্থতা বলে চিহ্নিত হবে। এই মতকে সমর্থন করেছেন গোয়েন্দা কর্তারা। দ্বিতীয়ত, এই পথের বিরোধীদের মতে সন্ত্রাসকে সন্ত্রাসের প্রেক্ষিত থেকেই দেখা বাঞ্ছনীয়। তার সঙ্গে ওয়াহাবি ভাবধারার সংযোগ স্থাপন ঠিক নয়। তাতে ওই ভাবধারার সমর্থক উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দ গোষ্ঠীকেও উস্কে দেওয়া হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহ, বেঙ্কাইয়া নায়ডু-এই চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে অনুরোধ করেন মেহবুবা মুফতি। তাঁর আবেদন ছিল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যেন সংবাদমাধ্যমের কাছে কাশ্মীর নিয়ে সদর্থক বার্তা দেন। কারণ ‘হিন্দুস্তানের সরকার’ মেহবুবা সরকারকে দিয়ে অত্যাচার চালাচ্ছে, উপত্যকার মানুষের এই ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করা প্রয়োজন। কিন্তু এই সাংবাদিক বৈঠকের পর মেহবুবার পক্ষে পরিস্থিতি জটিলতর হয়ে ওঠে। রাজনাথ সব পক্ষের সঙ্গে রাজনৈতিক কথায় রাজি হলেও অরুণ জেটলি এই আন্দোলনের সঙ্গে ওয়াহাবি ভাবধারাকে জুড়ে বিশ্ব সন্ত্রাসের এক অঙ্গ হিসেবে কাশ্মীরকে তুলে ধরেন। কাশ্মীর নিয়ে সরকারের মতভেদও এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে যায়। বিজেপি সূত্রে খবর, রাজনাথ নিজে ফোন করে মেহবুবাকে জানান যে, তিনি নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে ওয়াহাবি প্রশ্ন তোলার পক্ষপাতী ছিলেন না।
এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির গুরুত্বের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা। ওয়াহাবি ভাবধারার সমর্থক সৌদি আরব ও তার অনুগামী নানা দেশ এবং তুরস্ক-ইরানের মধ্যে এখন সংঘাত চরমে। ফলে ইরান এ বার মক্কার হজ যাত্রা বয়কট করেছে। তাদের অভিযোগ, ইরানের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে সৌদি সরকার। কমিউনিস্ট নেতা সীতারাম ইয়েচুরি-সহ অনেক বিরোধী নেতা বলছেন, আমেরিকা এখন আরব বনাম ইরান বিরোধ নিয়ে জলঘোলা করতে চাইছে। সন্ত্রাস ও ওয়াহাবি ভাবধারাকে সংযুক্ত করার ভাবনাটিও পশ্চিমী। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং সঙ্ঘ পরিবার একত্রিত হয়ে কাশ্মীরের জঙ্গিবাদকেও এই ভাবে চিহ্নিত করে বিশ্বের নজর কাড়তে চাইছে।
বিতর্ক রয়েছে কাশ্মীরে অতিরিক্ত কঠোর দমন নীতি প্রয়োগের প্রশ্নেও। এটা নতুন তর্ক নয়। জগমোহন কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকাকালীন এই নীতি নিতে চেয়েছিলেন। নিজের লেখা বই ‘ফ্রোজেন টার্বুলেন্স-এ অসন্তোষকে দমন নীতি দিয়েই নিশ্চিহ্ন করার কথা বলেছিলেন। তাতে সাময়িক অস্থিরতা দেখা দিলেও তা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান আনবে বলেই তিনি মনে করতেন। কিন্তু বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ প্রধানমন্ত্রী হয়ে বামপন্থীদের চাপে জগমোহনকে সরিয়ে দেন।
আজ সেই তর্ক নতুন ভাবে শুরু হয়েছে। তবে আপাতত মোদী-অমিত শাহ-ডোভালদের মতই প্রবল। তাঁরা মনে করছেন, আক্রমণাত্মক দমননীতিই দীর্ঘ মেয়াদে কাশ্মীরকে স্থায়ী ভাবে শান্ত করতে সাহায্য করবে।
তার মধ্যেই মেহবুবার চাপ বাড়িয়েছে পিডিপি-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সাংসদ তারিক হামিদ কারা-র ইস্তফা। এ দিন দল এবং সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে কারা অভিযোগ করেন, কাশ্মীরের মানুষের উপর কেন্দ্র অত্যাচার করছে ও কেন্দ্রের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে রাজ্য। এই অবস্থায় তিনি দলের সদস্যপদ এবং সাংসদ পদ ছাড়ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy