এখানে জাতপাতের হিসেবটা কী?
কর্নাটকের যে কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে যে কোনও দলের নেতাকে প্রশ্নটা করলেই তিনি নিজের মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে গড়গড করে বলে দেবেন, লিঙ্গায়ত, ভোক্কালিগা, দলিত, ওবিসি, মুসলিম— কার কত ভোট।
হতে পারে, বেঙ্গালুরু দেশের সিলিকন উপত্যকা। হতে পারে, কর্নাটক স্টার্ট-আপের আঁতুড়ঘর। হতে পারে এ রাজ্যে পাব-সংস্কৃতির রমরমা। কিন্তু এই রাজ্যে ভোট মানেই জাতপাতের হিসেবনিকেশ। বিজেপির বি এস ইয়েদুরাপ্পার ভরসা যেমন লিঙ্গায়তরা, তেমনই জেডি(এস)-এর এইচ ডি কুমারস্বামীর ভরসা ভোক্কালিগা ভোটব্যাঙ্ক। কংগ্রেসের সিদ্দারামাইয়ার ভরসা আবার দলিত, সংখ্যালঘু, আদিবাসী-ওবিসি ভোট।
মুখ্যমন্ত্রীর গদি দখলে কন্নড়-ভূমে তিন যোদ্ধারই এ বার প্রধান লক্ষ্য, দলিত ভোটব্যাঙ্ক। এই লক্ষ্যেই আজ প্রচারের শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেসের হৃদয়ে দলিত, পিছড়ে বর্গের জন্য কোনও জায়গা নেই। কংগ্রেস বাবাসাহেব অম্বেডকরকেও কখনও সম্মান করেনি।’’ জবাবে মোদী জমানার একের পর এক দলিত নির্যাতনের উদাহরণ তুলে বেঙ্গালুরুতে রাহুল গাঁধীর খোঁচা, ‘‘দলিতদের উপর নির্যাতনের সময়ে মোদী চুপ থাকেন কেন?’’ দলিত ভোট টানতেই দেবগৌড়া-কুমারস্বামীর জেডি(এস) এ বার জোট করেছে মায়াবতীর সঙ্গে।
আরও পড়ুন:
কর্নাটকে ১৩০ আসন পাবে বিজেপি: অমিত
কেন? তিন দলের দফতর ঘুরে জানা গেল, সম্প্রতি কর্নাটক সরকার জাতিগত জনগণনা করেছে। তার রিপোর্ট প্রকাশ না হলেও কিছু তথ্য ফাঁস হয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে লিঙ্গায়তদের সংখ্যা ১৭ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের নীচে চলে গিয়েছে। ভোক্কালিগাদের সংখ্যাও ১২ শতাংশ থেকে কমে ৮-এর ঘরে। উল্টো দিকে দলিতদের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮ শতাংশ।
কর্নাটকের রাজনীতিতে সিদ্দারামাইয়া ‘অহিন্দা’ রাজনীতির জনক। কন্নড় ভাষায় যার অর্থ, দলিত, সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও ওবিসি-র জোট। অনগ্রসর শ্রেণির জন্য দু’হাতে খয়রাতি করেছেন। পাশাপাশি বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরাতে লিঙ্গায়তদের জন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুর মর্যাদা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন।
পাঁচ বছর আগে লিঙ্গায়ত নেতা ইয়েদুরাপ্পা বিজেপি ছেড়ে আলাদা দল করেছিলেন। দু’ভাগ হয়েছিল বিজেপির লিঙ্গায়ত ভোটব্যাঙ্ক। এ বার সিদ্দারামাইয়া একই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন বিজেপিকে। দলিত, ওবিসি, মুসলমানদের সঙ্গে লিঙ্গায়তদের একাংশের ভোট পেলে তাঁর ক্ষমতায় ফেরা আটকানো কঠিন।
সেই লক্ষ্যেই রাহুল গাঁধীও প্রতিটি জনসভায় দ্বাদশ শতকের দার্শনিক ও লিঙ্গায়ত-সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা বাসভান্নার উক্তি আওড়াচ্ছেন। কখনও বাসভান্নার জাতপাতের ভেদাভেদ না করার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। কখনও বাসভান্নার শিক্ষা মেনে কাজ করার খোঁচা দিচ্ছেন মোদীকে। লক্ষ্য একটাই, বাসভান্নার কথা বলে বিজেপির উগ্র হিন্দুত্বে জল ঢালা। জাতপাতের ভেদাভেদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে দলিত ভোট টানা।
সিলিকন উপত্যকার রাজ্যে কে কেন এখনও জাতপাতের রাজনীতিই ভাগ্যবিধাতা? এইচ ডি দেবগৌড়ার নাতি, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার প্রাজ্জ্বল রেভান্নার যুক্তি, ‘‘২২৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২৮টি শহরে। সেখানেই আইটি, স্টার্ট-আপ। বাকি তো গ্রাম। তাই জাতপাতও আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy