আগামী রবিবার নাবালক অপরাধী আদৌ মুক্তি পাবে কি না, বিভিন্ন মহলে তা নিয়ে যুক্তিতর্ক ক্রমশই বাড়ছে। কার গাফিলতিতে ওই অপরাধীর রিপোর্ট অসমাপ্ত রইল, মঙ্গলবার রাজ্যের কাছে তা জানতে চাইল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
কমিশনের বক্তব্য, তিন বছরের শাস্তি কাটিয়ে আইন অনুযায়ী আগামী রবিবার অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর রিমান্ড হোম থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা ওই অপরাধীর। তা হলে মুক্তির সাত দিন আগে অসমাপ্ত রিপোর্ট নিয়ে রাজ্য কেন আদালতে হাজির হল, এখন সে প্রশ্নই তুলেছে কমিশন। কমিশনের এক সদস্য বলেন, ‘‘অভিযোগকারিণীর পরিবার যে যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে আমরা সচেতন। অপরাধীর মুক্তি নিয়ে তাঁরা যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তা-ও যুক্তিসম্মত। কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন হল, এত দিনেও কেন ওই অপরাধীর সম্পূর্ণ রিপোর্ট তৈরি হল না?’’
প্রসঙ্গত, হোমে থাকার সময়েই অপরাধী ওই যুবক মৌলবাদী হয়ে উঠেছে বলে রিপোর্ট দেয় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো। তার মুক্তিতে সমাজের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে নির্ভয়ার পরিবারও। সোমবার দিল্লি হাইকোর্টে কেন্দ্র জানিয়ে দেয়, হোমের দেওয়া রিপোর্ট থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ পড়েছে। যা না পাওয়া পর্যন্ত মুক্তি দেওয়া যাবে না ওই অপরাধীকে। একই আর্জি জানিয়ে বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী জনস্বার্থে মামলা করলে হাইকোর্ট তাতে স্থগিতাদেশ দিয়ে আইবি-র কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়।
সূত্রের খবর, নির্ভয়ার পরিবারের ভীতিকে মাথায় রেখেই অপরাধীর সম্পর্কে জানতে চেয়ে আগেই রাজ্যকে নোটিস দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও রাজ্য তা দেয়নি। মঙ্গলবার কমিশন জানিয়ে দেয়, ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যকে সেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে। অপরাধীকে মুক্তি দেওয়ার আগে ও পরে কেন্দ্র তাকে নিয়ে কী পরিকল্পনা করেছে, জমা দিতে বলা হয়েছে সেই রিপোর্টও। তা না হলে কমিশনের দফতরে হাজিরা দিতে হবে দিল্লির মুখ্যসচিব, পুলিশ কমিশনার ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবকে।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে চলন্ত বাসের ভিতর ধর্ষণের শিকার হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় প্যারামেডিক্যালের বছর তেইশের ছাত্রী নির্ভয়ার। তদন্তে জানা যায়, ধৃত ছয় অভিযুক্তের মধ্যে এই নাবালক ধর্ষণকারীই সব থেকে বেশি অত্যাচার চালিয়েছিল ওই তরুণীর উপর। এখন আদালতের রায়ের উপরেই নির্ভর করছে ২০ ডিসেম্বর আদৌ ওই অপরাধী ছাড়া পাবে কি না। কেন্দ্রের অবস্থানে কিছুটা আশা দেখলেও পুরোপুরি স্বস্তি পাচ্ছে না নির্ভয়ার পরিবার। এ দিন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। পরে নির্ভয়ার বাবা বলেন, ‘‘চার অভিযুক্তের এখনও মৃত্যুদণ্ড হল না। নাবালক অপরাধীও ছাড়া পেতে চলেছে। সময় যত পেরোচ্ছে, মনে হচ্ছে হেরে যাচ্ছি।’’
ভয়াবহ স্মৃতি উস্কে ফের এক বার উপস্থিত ওই দিনটা। নির্ভয়ার স্মৃতিতে দেশ জুড়ে জ্বলবে হাজারো মোমবাতি।
নাবালক অপরাধীর মুক্তি যাতে না হয়, সেই দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল বেরোবে বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু পরিস্থিতির কি কিছু পরিবর্তন হয়েছে? তেমন কিছু পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন না ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান উইমেন-এর সাধারণ সম্পাদক অ্যানি রাজা। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলব না। বিষয়টি প্রকাশ হয়েছে, তা নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। কিন্তু এক ভাবে দেখতে গেলে পরিস্থিতি যেখানকার, সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy