নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ সেনাবাহিনীতে। ছবি: সংগৃহীত।
সকালের জলখাবারে কেবল একটা পরোটা। তার সঙ্গে আর কিছু নয়। না আচার, না সব্জি!
দুপুরের খাবারে ডাল, যাতে হলুদ আর নুন ছাড়া কিছু থাকে না! সঙ্গে রুটি।
আর রাতে? খাবারে টান পড়লে ঘুমোতে যেতে হয় পেটে কিল মেরেই!
এই নাকি ভারতীয় জওয়ানদের খাবার! পাক সীমান্তে প্রহরারত সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-র এক জওয়ান সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনটি ভিডিও পোস্ট করে এমন অভিযোগই তুলেছেন। যা ভাইরাল হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে বিএসএফ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ওই জওয়ানকে ভারত-পাক সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সরিয়ে পুঞ্চে ২৯ নম্বর ব্যাটালিয়নে তাঁর হেডকোয়ার্টার্সে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘ভিডিওটার পিছনে কোনও রিহার্সাল নেই তো?’
ওই বিএসএফ জওয়ানের নাম তেজবাহাদুর যাদব। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি ভারত-পাক সীমান্তে কর্মরত। সম্প্রতি ফেসবুকে মিনিট চারেকের পর পর তিনটি ভিডিও পোস্ট করেছেন বছর চল্লিশের ওই জওয়ান। সেল্ফি মোডে তোলা সেই ভিডিওয় তিনি সীমান্তে প্রহরারত জওয়ানদের দৈনন্দিন দুর্দশার কথা জানিয়েছেন। কী ভাবে ডিউটি করতে হয়, কত ক্ষণ ধরে কোন পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব সামলাতে হয়, সিনিয়র সহকর্মী এবং আধিকারিকরা তার পরেও কী রকম ‘অত্যাচার’ করেন তাঁদের সঙ্গে— সমস্তটাই অভিযোগের বয়ানে উঠে এসেছে ওই ভিডিওয়। এমনকী, প্রতি দিন তাঁরা কী খেয়ে এমন ‘কঠিন কর্তব্য’ পালন করেন, ভিডিওতে তা-ও তুলেছেন ওই জওয়ান। আর সে সব প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সংবাদমাধ্যমেও এখন শিরোনামে তেজবাহাদুর।
দেখুন এই সেই ভিডিও...
ওই ভিডিওয় তেজবাহাদুর নিজেই দুর্দশার কাহিনি যখন ‘দেশবাসী’কে শোনাচ্ছেন, পিছনের পাহাড়ে তখন বরফ পড়ছে। ধূসর পাহাড়ের গায়ে তুলোর মতো বরফ পাতা। তেজবাহাদুর বলছেন, ‘আপনাদের এই ছবি দেখে হয়তো ভাল লাগছে। কিন্তু আমাদের অবস্থা কেউ ভাবে না। কেউ দেখেও না।’ এই বরফের মধ্যেই টানা ডিউটি করতে হয় তাঁদের। বরফ হোক, বৃষ্টি, হোক, ঝড়ঝঞ্ঝা হোক— ১১ ঘণ্টা টানা দাঁড়িয়ে ডিউটি করাটাই দস্তুর। যাদবের অভিযোগ, এক জন জওয়ানকে অনেক কষ্ট করে ডিউটি করতে হয়। আর সে জন্য শারীরিক সক্ষমতা প্রয়োজন। কিন্তু, যে খাবার তাঁদের জোটে তাতে বেশি দিন এ ভাবে কাটানো সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন
শীতেও জঙ্গি হানা কাশ্মীরে, হত ৩ শ্রমিক
তবে, এই ব্যবস্থায় সরকারের কোনও দোষ দেখছেন না তেজবাহাদুর। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার সাধ্য মতো সমস্ত জিনিসই পাঠাচ্ছে। ভাঁড়ারে সে সব পৌঁছচ্ছেও। কিন্তু, তার পরেই তা বাজারে চলে যাচ্ছে।’’ কী ভাবে জওয়ানদের জন্য বরাদ্দ খাবার খোলা বাজারে চলে যাচ্ছে, তা-ও জানিয়েছেন তিনি। বাহিনীরই এক শ্রেণির অসাধু অফিসারের দিকে আঙুল তুলেছেন তেজ বাহাদুর। আর এই বিষয়টি সকলের নজরে আনতে চেয়েছেন বলেই ভিডিও তুলেছেন বলে দাবি তাঁর।
এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর তাঁর চাকরি হয়তো না থাকতে পরে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই জওয়ান। কারণ? তাঁর কথায়, ‘‘আধিকারিকদের হাত অনেক বড়। তাঁরা আমার সঙ্গে যা খুশি করতে পারেন।’’ আর সে কারণেই তিনি বলছেন, ‘‘আমি থাকি, আর না থাকি, এই ভিডিও যত দূর সম্ভব গোটা দেশে ছড়িয়ে দিন। যাতে সকলে সবটা জানতে পারে।’’ যদিও মঙ্গলবার তাঁর কর্মস্থল ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে তাঁকে পুঞ্চে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ দিন দুপুরে জম্মুতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএসএফ-এর আইজি ডি কে উপাধ্যায়। ভিডিওটি দেখেছেন বলে দাবি করে তিনি জানিয়েছেন, তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনা প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি তিনি জানান, যে ক্যাম্পে তেজবাহাদুর থাকেন সেখানে সম্প্রতি বিএসএফ-এর ডিজি র্যাঙ্কের এক অফিসার গিয়েছিলেন। তখন কোনও জওয়ান এমন অভিযোগ করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর আমরা সেনার কাছে থেকে রেশন নিই। তার মান যথেষ্ট ভাল।’’
এর পরে তিনি তেজবাহাদুর নামের ওই কনস্টেবল সম্পর্কে মন্তব্য করেন। বলেন, ‘‘ওই কনস্টেবল উচ্ছৃঙ্খল। এর আগে ২০১০-এ শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তাঁর কোর্টমার্শাল হয়। চাকরি চলে যাওয়ার উপক্রম হলেও তাঁর পরিবারের কথা ভেবে সে বার ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল।’’ পাশাপাশি তিনি খাবারের মান যে খুব একটা ভাল হয় না শীত কালে সেটাও মেনে নিয়েছেন। বলেন, ‘‘আসলে শীতকালে টিনের খাবার খাওয়া হয় অনেক সময়। কিন্তু, জওয়ানরা তা নিয়ে কখনও অভিযোগ করেন না।’’
ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর টুইট করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিনি লিখেছেন, ‘বিএসএফ জওয়ানের পোস্ট করা ভিডিওটি দেখেছি। বাহিনীর কাছে দ্রুত রিপোর্ট চাইতে নির্দেশ দিয়েছি মন্ত্রককে। এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলেছি।’’
এর পরেই নড়েচড়ে বসেছে বিএসএফ। তড়িঘড়ি তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।বিএসএফ-এর এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বাহিনী এ ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখে। এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হবে না।’’ যদিও তাঁর দাবি, ২০ বছরের চাকরি জীবনে মোট চার বার শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তেজ বাহাদুরকে। এর আগে এক সিনিয়র অফিসারের সঙ্গে বাজে ব্যবহারের কারণে চাকরি খোয়াতে বসেছিলেন ওই জওয়ান। কিছু দিন আগে নাকি তেজবাহাদুর স্বেচ্ছাবসরের জন্য আবেদনও করেছেন বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy