স্কুল থাকলেও তাতে শৌচালয় নেই। শৌচালয় থাকলেও মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই। আবার পৃথক শৌচালয় থাকলেও তাতে জল নেই।
এই পরিস্থিতিতে দশম শ্রেণিতে ওঠার আগেই আমাদের দেশে বহু মেয়ে স্কুলছুট হতে বাধ্য হচ্ছে বলে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু অবস্থা বদলায়নি। দিন তিনেক আগেই কেন্দ্র প্রায় ১৪ লক্ষ গ্রামীণ স্কুলে মেয়েদের জন্য যথাযথ শৌচালয়ের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছিল সব রাজ্যকে। কিন্তু তাতেও কাজ খুব একটা এগোয়নি। এ বার সেই সমস্যার পাকাপাকি সমাধানের পথ দেখাল মোদী সরকার। বৃহস্পতিবার বাজেট পেশ করার সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ জানালেন, সব মেয়েদের স্কুলে শৌচালয়ের ব্যবস্থা করবে কেন্দ্রীয় সরকার।
এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মেয়েদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাদের কথায়, “বিশেষ করে রজঃস্বলা হওয়ার পরে স্কুলে শৌচালয় নেই বলে বা শৌচালয়ে জলের ব্যবস্থা নেই বলে মেয়েরা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়। বহু ক্ষণ মলমূত্র চেপে রাখা সম্ভব হয় না। বাথরুমে যাতে না-যেতে হয়, তার জন্য স্কুলে থাকাকালীন জল খাওয়াই বন্ধ করে দেয় বহু ছাত্রী। জল কম বা না-খাওা থেকে মূত্রে বিভিন্ন সংক্রমণ হতে পারে। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়েরা। এই সরকার সত্যি সত্যি এই সমস্যা দূর করলে মেয়েদের স্বাস্থ্যরক্ষায় একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করা হবে।”
শুধু ছাত্রীরা নয়, শৌচালয় না থাকায় সমস্যায় পড়েন শিক্ষিকারাও। বহু ছেলেদের স্কুলে শিক্ষিকাদের জন্য আলাদা শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই। কো-এড বা মেয়েদের স্কুলেও শৌচালয়ের অভাব চোখে পড়ার মতো। যার ফলে শিক্ষিকারাও যথেষ্ট সমস্যায় পড়েন। এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে, স্বাস্থ্য ভেঙে যায়। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে তাই উপকৃত হবেন শিক্ষিকারাও।
তবে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্যোগকে তেমন চমকপ্রদ বলে মনে করছেন না। পার্থবাবু বলেন, “এর মধ্যে কোনও চমক নেই। আমরা ইতিমধ্যে রাজ্যের ৯৮% স্কুলে শৌচালয়ের ব্যবস্থা করে ফেলেছি। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী স্মৃতি ইরানি যখন কলকাতায় এসেছিলেন তখন তাকে আমাদের এই সাফল্যের কথা জানিয়েছি।”
তবে পার্থবাবু যাই দাবি করুন না কেন, রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য বলছে, প্রাথমিক স্তরে মাত্র ৪১.৪৯ শতাংশ স্কুলে মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচালয় আছে, আর উচ্চ প্রাথমিকে এ রকম শৌচালয় আছে ৫০.০৯ শতাংশ স্কুলে। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “শিক্ষার অধিকার আইনের মাপকাঠি মেনে ২০১৩-র ৩১ মার্চের মধ্যেই এই পরিকাঠামো গড়ে তোলার কথা ছিল। কিন্তু তার পরেও এক বছর কেটে গিয়েছে, এখনও খামতি মেটেনি।”
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ২০১৩ সালে এ রাজ্যে ৬৮ শতাংশ স্কুলে ব্যবহারযোগ্য শৌচালয় রয়েছে। মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচালয় রয়েছে শতকরা ৫৩.৭টি স্কুলে। অন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও সম্প্রতি রাজ্যের ১১টি জেলার ২৩৪টি স্কুলে সমীক্ষা চালিয়ে সংস্থাটি দেখেছে, প্রায় ৫০ শতাংশ স্কুলে মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচালয় নেই, পানীয় জলের যোগান নেই ২০.৫১ শতাংশ স্কুলে। গোটা দেশের নিরিখে তো বটেই, অন্য অনেক রাজ্যের তুলনাতেও এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট শোচনীয়।
একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ২০১৩ সালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে সরকারি স্কুলগুলোর মাত্র ১১ শতাংশতে শৌচালয় রয়েছে। ছেলেরা তবু মাঠেঘাঠে যেতে পারে। কিন্তু মেয়েরা তো সেটাও পারে না। মূলত শৌচালয়ের অভাবেই ১১-১৪ বছরের মেয়েদের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা ২০১৩ সালে হয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এই মেয়েদের আবার স্কুলে ফেরানো যেতে পারে মনে করছে সব মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy