ব্যপম রহস্যে তুলকালাম এখন ভোপাল থেকে দিল্লি। আর সেই সূত্রে ফের সামনে এল বিজেপির অন্তর্কলহ। এতে প্রথম ইন্ধনটি জুগিয়েছেন অরুণ জেটলি, তাঁর গত কালের এক মন্তব্যে। এর পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ থেকে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উমা ভারতী— একে একে যোগ দিলেন অনেকেই।
অরুণ বলেছিলেন, ব্যপম কাণ্ডে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। আপাত ভাবে সেই মন্তব্য ছিল বিরোধীদের আক্রমণ প্রতিহত করতে। কিন্তু দলেই প্রশ্ন উঠেছে, ‘নিরপেক্ষ তদন্তের’ কথা বলে জেটলি কি আসলে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের দিকেই তোপ দাগলেন? তবে কি তিনি বলতে চাইছেন, মধ্যপ্রদেশে ব্যপম কেলেঙ্কারির নিরপেক্ষ তদন্ত হচ্ছে না?
দলগত ভাবে বিজেপি অবস্থান নিয়েছে, ব্যপম কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ারই নেই রাজ্য সরকারের। আদালত বিষয়টি স্থির করবে। দলে তাই প্রশ্ন উঠছে, জেটলি কেন আগ বাড়িয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের কথা বলতে গেলেন? নিশ্চয়ই তিনি আদালতের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেননি! এই অনাস্থা তবে কার প্রতি?
সরাসরি কারও নাম না করেই শিবরাজ-ঘনিষ্ঠ নেতাদের এক জন অভিযোগ করেন, ‘‘ব্যপম কাণ্ড আসলে উপলক্ষ। এই সুযোগে মুখ্যমন্ত্রীকে জবাই করতে দলেরই একটি অংশ সক্রিয়।’’ দলের এই অংশের বক্তব্য, বিজেপির অন্দরে সকলেই জানেন, মন্ত্রিসভায় নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অরুণ। আর শিবরাজ গোড়া থেকেই মোদীর বিরোধী শিবিরের নেতা বলে পরিচিত। লোকসভা ভোটের আগে যখন মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থ়ী করার কথা চলছিল, লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজের মতো ঘোর মোদী-বিরোধীরা তখন শিবরাজের নাম তুলে এনেছিলেন। যদিও তাঁদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এখন ব্যপম কাণ্ডে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় যখন মুখ্যমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে, সেই সময় মোদীর সেনাপতির ওই মন্তব্য কি শিবরাজকে আরও বিপাকে ফেলার চেষ্টায়?
ললিত মোদী বিতর্কেও সুষমা স্বরাজের নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরে দলের অনেকে বলতে শুরু করেছিলেন, এর পিছনে অরুণেরও ভূমিকা রয়েছে। সুষমার ঘনিষ্ঠ কীর্তি আজাদ তো প্রকাশ্যেই অরুণের বিরুদ্ধে সরব হন। রাজনাথ, নিতিন গডকড়ীরাই সে সময় সুষমা ও বসুন্ধরা রাজের অপসারণ ঠেকিয়ে রাখার ব্যাপারে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। সুষমার পরে শিবরাজের ক্ষেত্রেও দেখা গেল একই ছবি। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ালেন সেই রাজনাথ।
মধ্যপ্রদেশ সফরে গিয়ে রাজনাথ আজ সেই কথাই বললেন, এত দিন ধরে শিবরাজ যা বলে এসেছেন। রাজনাথের বক্তব্য, সিবিআই তদন্তে রাজ্য সরকারের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু বিরোধী পক্ষ এর আগে যত বারই হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে, তত বার সেই আর্জি খারিজ হয়েছে। এর পর কী করে রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্ত দাবি করতে পারে? রাজনাথ এ-ও বলেন, ‘‘আদালত যদি এখনই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তৎক্ষণাৎ তা গ্রহণ করব।’’
সমালোচনা বা সমর্থনের প্রশ্নে শিবরাজকে ঘিরে দলে যে অস্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে অরুণ ও রাজনাথের মন্তব্যে। এরই মধ্যে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে এখন শিবরাজের অন্য বিরোধীরাও উঠেপড়ে লেগেছেন। যেমন, মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমানে মোদী সরকারের মন্ত্রী উমা ভারতী। তিনিও আজ বলেন, ‘‘আমিই প্রথম সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিলাম। যে ভাবে একের পর এক মুত্যু হচ্ছে, সেটি বেশ ভয়াবহ বিষয়। এর পিছনে ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে। যখন আমার নাম এফআইআর-এ রাখা হয়েছিল, সে রাতে আমারও মনে হয়েছিল মরে যাব। পরের দিন অবশ্য ঘুরে দাঁড়াই।’’ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুলাল গৌড়ও বলেন, অনেক বিষয়ে শিবরাজ সরকার তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেনি। আইন মন্ত্রকের পরামর্শ নিয়েই কাজ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মোদী, জেটলি, রাজনাথ, সুষমা, নিতিন, শিবরাজ বা উমা— দলের শীর্ষ সারির নেতাদের মধ্যে এই সব চোরাস্রোত নিয়েই চলছে বিজেপি। ব্যপম তা সামনে নিয়ে এল এই যা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy