Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বিস্ফোরণ যে হবে, আঁচ পাননি গোয়েন্দারা

গতকাল সকাল ১০টা ৪৫। বিস্ফোরণের পিছনে মাথা বিচারপতি জাস্তি চেলমেশ্বরের ব্যক্তিগত কর্মীর কাছে খবর আসে, বাড়ির লনে ত্রিশ জনের বসার ব্যবস্থা করতে হবে। কেন, কী হবে তা নিয়ে কোনও ধারণা ছিল না কর্মীর।

নিউ টাউনের এক অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। শনিবার। ছবি: শৌভিক দে

নিউ টাউনের এক অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। শনিবার। ছবি: শৌভিক দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৩
Share: Save:

হাতে ছিল মেরেকেটে ৪৫ মিনিট সময়। তাতেই দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণটি ঘটালেন চার বিচারপতি। দেশের গোয়েন্দা কর্তা থেকে খোদ বিচারপতিদের নকর-চাকর-ঘুণাক্ষরেও যে বিস্ফোরণের আভাস পাননি কেউই।

গতকাল সকাল ১০টা ৪৫। বিস্ফোরণের পিছনে মাথা বিচারপতি জাস্তি চেলমেশ্বরের ব্যক্তিগত কর্মীর কাছে খবর আসে, বাড়ির লনে ত্রিশ জনের বসার ব্যবস্থা করতে হবে। কেন, কী হবে তা নিয়ে কোনও ধারণা ছিল না কর্মীর। আধ ঘণ্টার মধ্যেই চেলমেশ্বরের সঙ্গে চলে আসেন বাকি তিন বিচারপতি। সাংবাদিক বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয় বাড়ির সামনের লনে।

সাড়ে এগারোটা। এক-এক করে আসতে শুরু করেন সাংবাদিকেরা। গেটের নিরাপত্তারক্ষীরা তখনও দ্বিধায়। ভিতর থেকে অনুমতি আসে। বেলা বারোটার কিছু পরে শুরু হয় সাংবাদিক বৈঠক। যার শেষে দেখা যায় প্রধান বিচারপতিকে লেখা সাত পাতার চিঠির মাত্র একটিই প্রতিলিপি রয়েছে। অথচ, সাংবাদিক ১০০-র উপরে। পরামর্শ আসে গুগ্‌ল ড্রাইভে দিয়ে দেওয়া হোক। শুনে মাথায় হাত বিচারপতির কর্মীদের। সে আবার কী! শেষে মোবাইলে ছবি তোলা হয়। ইন্টারনেটে যা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।

এত বড় আকারের হয়তো না হলেও, অতীতেও এ দেশ বিচারপতিদের বিদ্রোহের সাক্ষী থেকেছে। জরুরি অবস্থার সময়ে সমস্ত মৌলিক অধিকারকে খর্ব করা নিয়ে একটি মামলায় পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে মুখ খুলেছিলেন একমাত্র বিচারপতি এইচ আর খন্না। প্রবীণ হওয়া সত্ত্বেও দেশের প্রধান বিচারপতি হতে পারেননি তিনি। তার পরিবর্তে দায়িত্ব পান খন্নার চেয়ে বয়সে ছোট এইচ এম বেগ। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ওই সিদ্ধান্ত রোখার জন্য
সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন। জবাবে জানানো হয়, খন্নার চাকরির মেয়াদ মাত্র ছ’মাসের। তাই তাঁর পরিবর্তে বেগকে করা হচ্ছে। ১৯৭৭ সালে বেগ যে দিন প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন, সে দিন নীরব প্রতিবাদ দেখিয়ে বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন খন্না। ১৯৭৩ সালে তিন জন সিনিয়র বিচারপতিকে টপকে প্রধান বিচারপতি হন বিচারপতি এ এন রায়। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় গোটা দেশে। আসরে নামেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি হিদায়তুল্লা।

২০০৪-এ পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে গণ ছুটিতে চলে যান বাকি সব বিচারপতি। পরে দেশের প্রধান বিচারপতি ভি এন খারে এই জটিলতায় হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হন।

গত সেপ্টেম্বর মাসে কর্নাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি না হওয়ার প্রতিবাদে ইস্তফা দেন বিচারপতি জয়ন্ত পটেল। নিয়মমাফিক তাঁর ওই আদালতের প্রধান বিচারপতি হওয়ার কথা ছিল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE