ভারতীয় সেনার হামলায় ধ্বংস পাক বাঙ্কার। ছবি: সংগৃহীত।
প্রবল চাপ তৈরি হয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপরে। গত ১ মে পাক সেনা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতের এলাকায় ঢুকে দু’জন জওয়ানের মাথা কেটে নিয়ে গিয়েছিল। দাবি উঠেছিল, বদলা চাই। তিন সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছিল, ভারত কী জবাব দিল?
সেই প্রশ্নের জবাবেই আজ সেনাবাহিনী জানাল, জম্মু-কাশ্মীরের নৌশেরা সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে পাকিস্তানের চৌকি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পাক সেনার একগুচ্ছ বাঙ্কার। সেনা সূত্রের দাবি, ভারতীয় সেনার গোলাগুলিতে ১০-১২ জন পাক সেনা-সহ অন্তত ২০-২৫ জন নিহত হয়েছে। সেনার মুখপাত্র মেজর জেনারেল অশোক নারুলা বলেন, ‘‘ওই জায়গাগুলি থেকে সন্ত্রাসবাদীদের অনুপ্রবেশে মদত দেওয়া হচ্ছিল। সেগুলিকে নিশানা করে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ এই গোলাবর্ষণ সেনাবাহিনীর ‘সন্ত্রাস দমন অভিযান’-এরই অংশ বলে মেজর জেনারেলের দাবি।
পাক চৌকি উড়িয়ে দেওয়ার প্রমাণ হিসেবে আজ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে সেনা। ভিডিও-য় দেখা যাচ্ছে, গোলার আঘাতে একের পর এক বাঙ্কার ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। ৯ ও ১০ মে এই হামলা হয়েছে বলে সেনা সূত্রের দাবি। তিন দিন পরেই ২৬ মে মোদী সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি। তার ঠিক আগে সেনার ভিডিও প্রকাশ্যে এনে দেশ জুড়ে ফের জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে দিয়েছে মোদী সরকার। কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলগুলিও এ জন্য সেনাকে কুর্নিশ জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘সরকার সেনার এই অভিযানে পুরোপুরি জওয়ানদের সঙ্গে রয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি বজায় রাখার জন্য এই ধরনের সেনা অভিযান দরকার।’’
সেনা অফিসাররা অবশ্য স্পষ্ট করছেন, এ’টি মোটেই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নয়। যেমনটা গত বছর উরির হামলার পরে হয়েছিল। সে বার সেনা কম্যান্ডোরা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তানের এলাকায় ঢুকে জঙ্গি-শিবির গুঁড়িয়ে দিয়ে এসেছিলেন। এক্ষেত্রে গোলাগুলি ছোড়া হয়েছে নিয়ন্ত্রণরেখার এপার থেকেই। পাকিস্তানের সেনা চৌকি, কংক্রিটের বাঙ্কার গুঁড়িয়ে দিতে রকেট লঞ্চার, ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, অটোমেটিক গ্রেনেড, রিকয়েললেস গান ব্যবহার করা হয়। মেজর জেনারেল নারুলা বলেন, ‘‘পাক সেনা অনুপ্রবেশকারীদের সাহায্য করতে আমাদের জওয়ানদের দিকে গুলি ছুড়ে তাদের ব্যস্ত রাখে। সময়ে সময়ে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে গ্রামগুলিকে নিশানা করতেও ওরা দ্বিধা করে না।’’
আরও পড়ুন:জিপে বেঁধেই অশান্তি ঠেকাই, দাবি মেজরের
ভারতীয় সেনার এই দাবির সঙ্গে সঙ্গেই তা মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছে পাক সেনা। বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর দাবি করেছেন, ‘‘ভারতের পাকিস্তানি চৌকি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি ও সাধারণ মানুষের উপর পাকিস্তানের গুলি চালানোর অভিযোগ মিথ্যে।’’ রাতে পাল্টা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে পাক সেনা। তাদের দাবি, পাক সেনা নয়, ভিম্বের সেক্টরে স্থানীয় বাসিন্দাদের লক্ষ করে হামলা চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা। হতাহত হন কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা। ফলে নৌশেরায় পাল্টা হামলা চালায় পাক বাহিনী। তাতে বেশ কয়েক জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। ক্ষতি হয়েছে ভারতের সামরিক পরিকাঠামোরও। তাদের ভিডিওতে সেই পাল্টা হামলারই ছবি দেখানো হয়েছে বলে দাবি পাক সেনার।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ন্ত্রণরেখায় এমনিতে এই ধরনের গোলাগুলির লড়াই চলতে থাকে। কিন্তু তার ভিডিও প্রকাশ করে আজ পাক সেনাকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছে ভারতীয় সেনা। তা হল, জঙ্গিদের অনুপ্রবেশে সুবিধা করে দিতে পাক সেনা গুলি ছুড়লে তাদের এই অবস্থাই হবে। মেজর জেনারেল নারুলা বলেন, ‘‘বরফ গলতে শুরু করেছে। গিরিপথগুলি খোলার সঙ্গে জঙ্গি অনুপ্রবেশও বাড়তে পারে। নওগামে অনুপ্রবেশের সময় ২০-২১ মে চার জন সন্ত্রাসবাদীর নিহত হওয়ার ঘটনা তারই নমুনা।’’
নারুলা যা বলেননি, তা হল নওগামে জঙ্গিদের আটকাতে গিয়ে তিন জন সেনা জওয়ানকেও প্রাণ দিতে হয়েছিল। ফলে সে দিক থেকেও পাক সেনাকে হুঁশিয়ারি দেওয়া দরকার ছিল। প্রতিরক্ষা বিশেজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক শিবিরেও এর ফলে বার্তা গিয়েছে যে ভারত এখন থেকে পাকিস্তানের জঙ্গি-মদতের বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপই করবে। বিজেপি নেতারা বলছেন, পাক সেনা ভারতের জওয়ানদের মাথা কেটে নিয়ে যাওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছিল, মোদী সরকার কী করল! সেনাবাহিনী পাক-সেনাদের ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।
আজকের ভিডিও প্রকাশের পর কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘এর আগে সেনার কাছে প্রমাণ চাওয়া হয়েছে। এবার সেনা প্রমাণও দিয়েছে।’’ কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সূরজেওয়ালা সেনাকে কুর্নিশ করলেও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘সেনা বাহাদুরির সঙ্গে লড়ছে। কিন্তু বিজেপি সরকার কী করছে! পাকিস্তান রোজ যে সন্ত্রাসবাদ পাচার করছে, তা কবে রোখা হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy