করাচির এরিয়া-৫ ডিফেন্স হাউজিং অঞ্চলের কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা বাংলোয় অসুস্থ দাউদ ইব্রাহিম আজকাল কাঁটা হয়ে থাকেন। অন্তত তেমনটাই দাবি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার। তাদের মতে, ইসলামাবাদের সেই নেকনজরে আর নেই এই মাফিয়া ডন।
এই ‘মাহেন্দ্রক্ষণে’ই একটি মোক্ষম খাঁড়ার ঘা মারতে চলেছে সাউথ ব্লক। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে যৌথ প্রয়াসে সে দেশে এই ডনের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। যে সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল ভিলা, নাইট ক্লাব, ক্যাসিনো, হোটেল, আস্তাবল, নাইট ক্লাব।
আবু ধাবির সাহায্য নিয়ে দাউদকে চাপে ফেলতে ধারাবাহিক ভাবে গত এক বছর ধরে চেষ্টা করে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ বার তার ফল মিলেছে। আবু ধাবি-র যুবরাজ শেখ মহম্মদ বিন জাভেদ আল নহিয়ান (ছবি: পৃঃ ৫) আজ সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে এসে পৌঁছেছেন। আগামিকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠকে এই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনই কোনও ঘোষণা করবে না সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা কি চান আমরা এ ব্যাপারে মুখ খুলে দাউদকে সতর্ক করে দিই, যাতে সে নিজের সম্পত্তি গুছিয়ে নিতে পারে!’’
প্রকাশ্যে না জানালেও ঘরোয়া ভাবে বিদেশ মন্ত্রকের এক সংশ্লিষ্ট কর্তা জানাচ্ছেন, এই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মাধ্যমে দাউদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে আবু ধাবি। সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতায় ভারতের সঙ্গে একটি ‘অ্যাকশন প্ল্যান’-ও ঘোষণা করার কথা রয়েছে নহিয়ানের চলতি সফরে। তবে আবু ধাবির মাটিতে দাউদের সাম্রাজ্য বাজেয়াপ্ত হলে তার পুরোটাই চলে যাবে সে দেশের সরকারের হাতে। স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের তাতে কোনও দাবি থাকবে না।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, সেই দাবি কেউ করছেও না। সেটা উদ্দেশ্যও নয়। কিন্তু দাউদকে নিঃসম্বল করে দিতে পারলে তাকে ফিরে পাওয়া অনেকটাই সুবিধেজনক হয়ে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের দাবি, দাউদের উপরে পাকিস্তানের আগ্রহ কমে যাওয়ার একটা বড় কারণই হল তাঁর ভাঁড়ারে টান ধরা। আইএসআই এবং বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন আগে দাউদের কাছে প্রচুর অর্থ পেত। তাতে এখন অনেকটাই ভাঁটা। সে দেশে এখন যথেষ্ট কোণঠাসা অসুস্থ এই মাফিয়া ডন। এমতাবস্থায় দুবাইয়ের সাম্রাজ্য চলে গেলে পরিস্থিতি তাঁর পক্ষে আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। রাষ্ট্রপুঞ্জ দাউদ ইব্রাহিমের গায়ে ‘নিষিদ্ধ’ তকমা লাগিয়ে দেওয়ায় তাঁকে নিয়ে পাকিস্তানের বিড়ম্বনা আরও বেড়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বেগতিক দেখে দাউদ ইব্রাহিম পাক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে পাকিস্তানে তাঁর মৃত্যু হলে দেহ যেন ভারতেই পাঠানো হয়। পাকিস্তানের পক্ষে বিষয়টি সমস্যার। কারণ, সে ক্ষেত্রে দাউদকে আশ্রয় দেওয়ার কথা তারা অস্বীকার করতে পারবে না।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এটা ঠিকই যে পাক সেনা এবং আইএসআই দাউদের দায় কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। কিন্তু জীবিত অবস্থায় তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়াটাও কঠিন ইসলামাবাদের কাছে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের অনেক গোপন ভারত-বিরোধিতার তথ্য ও প্রমাণ সামনে চলে আসবে। তাই দাউদের মৃত্যুই নাকি এখন সবচেয়ে বেশি কাম্য পাকিস্তানের কাছে। গোয়েন্দাদের দাবি, করাচির বাংলোতে তাঁর চিকিৎসার আয়োজনে সম্প্রতি টান পড়তে শুরু করেছে। যে ধরনের অসুস্থতা দাউদের রয়েছে তাতে চিকিৎসা ঠিক মতো না হলে বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy