ভোরবেলার গুগ্ল নিশ্চয়ই মজা করছে না! শিমলার তাপমাত্রা সে দেখাচ্ছে ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তাতে আর আশ্চর্য কি? কনকনে হাওয়াই তো বুঝিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু, সার্চ বারে লাহৌল-স্পিতি লিখতেই ঠান্ডাটা এক লহমায় ২২ ডিগ্রি কমে গেল। কী দেখাচ্ছে? -১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস! বেশ কয়েক বার লিখে, মুছে একই ফল। মাইনাস ১৬!
সন্ধের ম্যাল রোডে পরিচয় হওয়া মুকেশ চৌহান তা হলে ঠিকই বলেছিলেন। এই হিমাচলে এমন জায়গা আছে, যেখানে শূন্য ডিগ্রির নীচেও ভোট হচ্ছে! একটি কফি শপের কর্মী মুকেশ বলেছিলেন, ‘‘শিমলার ঠান্ডায় কেঁপে যাচ্ছেন, তা হলে লাহৌল গেলে কী করবেন। ওখানে তো মাইনাস চলছে।’’ মুকেশের কথায় মান্যতা দিল গুগ্ল। এই ঠান্ডার ভিতরেই সেখানে ভোট দেবেন ভোটাররা।
হিমাচলের সবচেয়ে উঁচু জায়গা হিক্কিম এই লাহৌল-স্পিতিতে। প্রায় ১৫ হাজার ফুট উপরের হিক্কিম বুথে ভোট দেবেন ১৯৪ জন। মুকেশ বলছিলেন হিক্কিম নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত বুথ। আশ্চর্যের আর শেষ নেই যেন এই হিমাচলে। কেন? কারণ, স্বাধীন ভারতের প্রথম নির্বাচনের প্রথম ভোটদাতাও নাকি এই হিমাচলেই বাস করেন। সে তথ্য অবশ্য মুকেশ দেননি। দিয়েছেন বিজেপি-র এক কর্মী।
আরও পড়ুন: এ কী বলছে সরকার! ঘোড়াও হেসে ফেলবে যে
চক্কর এলাকায় রাজ্য বিজেপি-র সদর দফতর থেকে বেরিয়ে প্রথম যে চায়ের দোকান, সেখানে বসে রাকেশ সিংহ বুধবার সন্ধ্যায় বলছিলেন, ‘‘শ্যামসরণ নেগির নাম শুনেছেন?’’ ‘না’ বলায়, তিনি জানালেন, শ্যামসরণ স্বাধীন দেশের প্রথম ভোটের প্রথম ভোটদাতা। নির্বাচন কমিশন তাঁর স্বীকৃতিকে মান্যতাও দিয়েছে। ১৯৫১ সালে স্বাধীন ভারতে প্রথম ভোট হয়। আবহাওয়ার কারণে এই হিমাচলে শুরু হয় প্রথম দফার ভোট। আর সেই ভোটেই প্রথম ভোট দিয়েছিলেন শ্যামসরণ। এখন তাঁর বয়স ১০০ বছর। এর আগে সব নির্বাচনেই তিনি ভোট দিয়েছেন। শ্যামসরণ শারীরিক ভাবে অসুস্থ। তবে, ভোট দেবেন।
আশ্চর্য রয়েছে শিমলার শহরের অন্দরেও। গোটা রাজ্য জুড়ে মূলত কংগ্রেস-বিজেপি দ্বৈরথ। অথচ, রাজধানী শিমলায় বিষয়টা ঠিক উল্টো। এই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র লড়াই এক নির্দল প্রার্থীর সঙ্গে। তিনি হরিশ জনার্থা। আদতে কংগ্রেস কর্মী। কিন্তু, দল টিকিট না দেওয়ায় নির্দল হিসাবে টেলিফোন চিহ্নে দাঁড়িয়েছেন। শহরের বেশ কিছু জায়গায় তাঁর সমর্থকদের দৌলতে দেখা গিয়েছে পুরনো সেই আঙুল ঘুরিয়ে ডায়াল করা টেলিফোনের ছবি। তবে, কংগ্রেস প্রার্থীও রয়েছেন। হরভজন সিংহ ভাজ্জি। দলের লোকজনই বলছেন, তিনি নাকি চার নম্বরে শেষ করবেন। স্বস্তিতে নেই বিজেপি-র প্রার্থী সুরেশ ভরদ্বাজও। আবার হাসি নেই হরিশের মুখেও।
আরও পড়ুন: একশো পার, কর্তব্যে অবিচল প্রথম ভোটার
তাঁদের স্বস্তি ও হাসি কেড়ে নিয়েছেন চতুর্থ এক ব্যক্তি। তাঁর নাম সঞ্জয় চৌহান। তিনি সিপিএম প্রার্থী। আনাচে-কানাচে ভেসে বেড়াচ্ছে, সঞ্জয় নাকি জোর ফাইট দেবেন। সিপিএম শুনে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এখানে সিপিএমের সংগঠন রয়েছে। এবং তা বেশ মজবুত। এমনকী, হিমাচলপ্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদেও এসএফআইয়ের প্রতাপ। শিমলা কর্পোরেশন একটা সময় সিপিএম চালাত। রাকেশ শর্মা নামে আর এক সিপিএম প্রার্থী থেওগ কেন্দ্রে বিজেপি-কংগ্রেসকে বেশ চাপে রেখেছেন। এই বাজারে আশ্চর্য তো বটেই।
আসলে হিমাচল এমনই। পাহাড়ের প্রতিটি বাঁকে যেমন এক এক রকম রূপে সে ধরা দেয়, ঠিক তেমন ভাবেই রাজনীতির এই বৃহৎ মঞ্চেও তার নানা রূপ। কফি শপে পরিচয় হওয়া তরুণী চাঁদনি নেগি সেটাই বলছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘হিমাচলের বৈশিষ্ট্য তার বিবিধতায়। মার্কেটিং-এর ভাষায় সেটাই এই রাজ্যের ইউএসপি। শুধু দেখনে কা নজর হোনা চাহিয়ে।’’
আর সেই বিবিধতা নিয়েই সাতসকাল থেকে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে হিমাচলপ্রদেশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy