এই ভাবেই নিয়ে যাওয়া হয় বৃদ্ধার মৃতদেহ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে ভিডিওটি।
একটি মৃতদেহের উপর দাঁড়িয়ে আছেন হাসপাতালের এক কর্মী। পাশে দাঁড়িয়ে আর এক জন। এ বার পায়ের চাপে দেহের মেরুদণ্ড টুকরো টুকরো করে ফেললেন ওই স্বাস্থ্যকর্মীরা। দলা পাকানো দেহটা ঠেসেঠুসে একটা বড় প্লাস্টিকের ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেললেন। তারপর প্লাস্টিকে ভরা দেহটি বাঁশে বেঁধে রওনা দিলেন দু’জনে। নির্বিকার মুখেই দেহ কাঁধে এগিয়ে চললেন।
কোনও ‘হরর’ ছবি নয়। এই মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী রইল ওড়িশার বালেশ্বর জেলা। আবারও সেই ওড়িশা। যেখানকার মৃতদেহ নিয়ে আর একটি ভয়াবহ ছবি কালই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। শববাহী যানের ব্যবস্থা করার সামর্থ্য না থাকায় চাদরে মুড়ে স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে চাপিয়েই ৬৭ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গ্রামে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কালাহান্ডির দানা মাঝি। ১২ কিলোমিটার যাওয়ার পরে প্রশাসনের কানে খবর যেতে অবশ্য ব্যবস্থা হয় অ্যাম্বুল্যান্সের। অভিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। সেই ঘটনার পরে দু’দিনও কাটেনি। মৃতদেহের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাও দেখাতে ফের ভুলে গেল ওড়িশা!
বালেশ্বরের এই ঘটনা প্রসঙ্গে রেল পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বুধবার ভোরের দিকে বালেশ্বর জেলার সোরো স্টেশনে একটি মালগাড়ির ধাক্কায় মারা যান সালামণি বারিক নামে বছর ছিয়াত্তরের ওই বৃদ্ধা। প্রথমে ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সোরোর একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। প্রায় ১২ ঘণ্টা সেখানেই পড়েছিল বৃদ্ধার দেহ। কিন্তু সোরোয় ময়না-তদন্তের কোনও রকম ব্যবস্থা না থাকায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বালেশ্বর জেলা হাসপাতালে ওই দেহ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ট্রেনে করে দেহটি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সোরোর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে স্টেশনে পৌঁছনোর জন্য একটা অ্যাম্বুল্যান্সও মেলেনি। দেহটি স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অটো ভাড়া করার কথাও ভাবা হয়েছিল। তবে দেহটি পৌঁছে দিতে সাড়ে তিন হাজার টাকা দাবি করেন এক অটোচালক।
সোরো রেলপুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর প্রতাপ রুদ্র মিশ্রের কথায়, ‘‘মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য খুব বেশি হলে এক হাজার টাকা খরচ করতে পারি আমরা। অটোচালক এত বেশি টাকা চাওয়াতে অগত্যা আমরা চতুর্থ শ্রেণির স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে দেহটি স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’
ততক্ষণে দেহে ‘রাইগর মর্টিস’ শুরু হয়ে গিয়েছে, মৃতদেহ শক্ত হতে শুরু করেছে। দেহটি যাতে ‘সহজে’ বহন করে নিয়ে যাওয়া যায়, তার জন্য দেহটিকে কোমর থেকে ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। যে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেটি এ ভাবে ভাঙলে ময়না-তদন্ত করে আদৌ কোনও লাভ হবে কি না, সে প্রশ্নের অবশ্য কোনও জবাব দেয়নি রেল পুলিশ।
মায়ের দেহ এ ভাবে হাতে পেয়ে হতবাক ছেলে রবীন্দ্র বারিক। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ওরা ওই ভাবে মায়ের দেহ নিয়ে গেল? আর একটু মানবিকতা দেখালেও তো পারত!’’ প্রথমে অভিযোগ জানানোর কথা ভাবলেও পরে রবীন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের অভিযোগে কে-ই বা কান দেবে!’’
এই ঘটনার জেরে ফের মুখ পুড়েছে ওড়িশা সরকারের। কোনও দুঃস্থ মানুষের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই ‘মহাপ্রয়াণ প্রকল্প’ চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। কিন্তু তার পরেও এই ধরনের অমানবিক ঘটনা থামছে কই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy