সুপ্রিম কোর্ট তাৎক্ষণিক তালাক প্রথাকে অবৈধ ঘোষণা করার পরেও এখনও তিন তালাক চলছে। ছবি: সংগৃহীত।
অমদবাদের উপকণ্ঠে এক সংখ্যালঘু মহল্লায় এনজিও চালান মুসলিম তরুণী ফৌজিয়া। ২০০২ সালে তাঁদের সংস্থা কাজ শুরু করেছিল। সাম্প্রদায়িক হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনই ছিল মূল লক্ষ্য। প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণের পর মুসলিম মহিলাদের রোজগেরে করে তোলার কাজ হাতে নেন ফৌজিয়ারা। এখন তাঁদের সংস্থা গার্হস্থ্য হিংসার বিরুদ্ধে লড়ছে। সংখ্যালঘু পরিবারে মহিলাদের উপর অত্যাচারের খবর মিললেই এগিয়ে যান নারী আন্দোলনের এই কর্মী।
ফৌজিয়ার অভিজ্ঞতা বলছে, ভারতের অন্য যে কোনও প্রান্তের মতো গুজরাতেও মুসলিম সমাজে একাধিক বিয়ের প্রবণতা রয়েছে। স্ত্রী আপত্তি করলে অত্যাচারের ঘটনা একেবারেই বিরল নয়। কিছুতেই সামলানো না গেলে তালাক। এই সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই ফৌজিয়াদের সংস্থার অন্যতম প্রধান কাজ।
সুপ্রিম কোর্ট তাৎক্ষণিক তালাক প্রথাকে অবৈধ ঘোষণা করায় সুবিধা হল তা হলে? ফৌজিয়া বললেন, ‘‘খুব সুবিধা হয়নি। রায় একটা হয়েছে। খুব ভাল রায়। সংশয় নেই। কিন্তু সে রায়কে সকলে মানছেন কোথায়?’’
মানছেন না? এখনও তিন তালাক চলছে? ফৌজিয়া বললেন, ‘‘হ্যাঁ, চলছে। আদালতের রায়ের তোয়াক্কা না করেই এখনও তাৎক্ষণিক তালাক দিয়ে দিচ্ছেন পুরুষরা। আমার কাছেই এসেছে এই রকম কেস।’’
আরও পড়ুন
থমকে উন্নয়নের রথ, জবাব দিতে চায় মুসলিম মহল্লা
এমন ঘটনা ঘটছে, অথচ প্রশাসন পদক্ষেপ করছে না? ফৌজিয়া বললেন, ‘‘পদক্ষেপ করবে কী করে? যাঁকে তালাক দিচ্ছে, সেই মহিলাকে তো প্রতিবাদী হয়ে উঠতে হবে। অভিযোগটা তো তাঁর দিক থেকে আগে আসতে হবে।’’
মহিলারা অভিযোগ করছেন না কেন? ‘‘মানসিকতাটাই তো তৈরি করা যায়নি এখনও। স্বামী তিন বার তালাক বলে দিলেই যে আমার তালাক হয়ে গেল না, সেটাই বিশ্বাস করানো যায়নি এখনও মহিলাদের। প্রতিবাদটা তো আরও অনেক বড় বিষয়।’’ বললেন ওই মানবাধিকার কর্মী।
তিন তালাকে নিয়ে কী ভাবছেন গুজরাতের মুসলিমরা? দেখুন ভিডিও
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের আর এক কর্মী তথা আইনজীবী আজিমা অবশ্য ফৌজিয়ার সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন। তিনি বললেন, ‘‘প্রথমত, কেন্দ্রীয় সরকার কিছু করেনি। রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আর দ্বিতীয়ত, এই রায় নতুন কিছুও নয়। আগে সায়রা বানু মামলাতেও একই রকম রায় এসেছিল। তিন তালাককে অবৈধই বলা হয়েছিল।’’
আরও পড়ুন
কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সরকার সুপ্রিম কোর্টে যে ভাবে জোরদার সওয়াল করল তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে, সেটা ইতিবাচক নয়? আজিমা বললেন, ‘‘সরকার যে ভূমিকা নিয়েছে, সেটাও ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির কথা ভেবেই। মুসলিম মহিলাদের কল্যাণটা আসল লক্ষ্য নয়। আসল লক্ষ্য, হিন্দু ভোটারদের খুশি করা। দেখ, কী ভাবে আমরা শরিয়তি আইনকে অবৈধ করে দিলাম— হিন্দু ভোটারদের এই বার্তা দিতে চাওয়া। তার সঙ্গে মুসলিমদেরও এ কথা বলা যাচ্ছে যে, বিজেপি মুসলিম সমাজের ভালর জন্য ভাবছে।’’
তা হলে কি তিন তালাকের বিরুদ্ধে সরকারের এই সক্রিয়তা কাম্য ছিল না? আজিমার মতে, ‘‘কাম্য তো বটেই। কিন্তু শুধু মুসলিম মহিলারা অত্যাচারিত হন, এমন তো নয়। আরও অনেক ধর্মে, অনেক সমাজেই মহিলাদের উপর অত্যাচার হয়। সরকার সে সবও বন্ধ করার চেষ্টা করুক। তা হলেই বুঝব, উদ্দেশ্য সৎ।’’
আরও পড়ুন
গুজরাতে মুসলিমদের মধ্যে তিন তালাকের প্রচলন খুব বেশি নেই বলে আজিমার দাবি। কিন্তু পাশে বসেই ফৌজিয়া এবং তাঁর সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, এ কথা ঠিক নয়। গুজরাতেও তিন তালাকের প্রবণতা যথেষ্ট। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঠিক রূপায়ণ যে জরুরি, সে বিষয়ে সকলেই একমত। আরও একটা বিষয়ে এক সুর আজিমা, ফৌজিয়ারা— তিন তালাকের বিরুদ্ধে সক্রিয়তা দেখিয়ে যদি বিজেপি ভাবে যে, মুসলিম মহিলাদের ভোট আদায় করে নেওয়া যাবে, তা হলে ভুল ভাবছে। কট্টরবাদী হিন্দুদের হয়তো খুশি করা গিয়েছে। কিন্তু, মুসলিম ভোট ভাগ হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy