সেনাপতি: তিরন্দাজ রাহুল গাঁধী। শনিবার গুজরাতের দাহোদে নির্বাচনী প্রচারে। পিটিআই
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে গুজরাতে ‘কার্পেট বম্বিং’ শুরু করার আগেই জোড়া ধাক্কায় বেসামাল গেরুয়া শিবির।
একদিকে গুজরাত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভোটে কার্যত সাফ হয়ে গেল আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। অন্য দিকে পাতিদার-বিক্ষোভের আশঙ্কায় খোদ নরেন্দ্র মোদীর সভাস্থল বদল করতে হল বিজেপিকে।
ক’মাস আগেও গুজরাত বিধানসভা ভোট নিয়ে বিন্দুমাত্র উদ্বেগ ছিল না অমিত শাহদের। কিন্তু রাহুল গাঁধী গুজরাতে মাটি কামড়ে প্রচার শুরু করার পরে গত দু’মাসে ছবিটা দ্রুত বদলায়। চলতি মাসে গুজরাতে সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত তরুণ নেতারা সরাসরি রাহুলের পাশে দাঁড়ানোর পরে বিজেপি এখন রীতিমতো চাপে। এই পরিস্থিতিতে ভূমিপুত্র তথা খোদ প্রধানমন্ত্রীকে ময়দানে নামিয়ে বাজিমাত করতে মরিয়া বিজেপি। সেই লক্ষ্যেই কাল থেকে গুজরাত জুড়ে প্রচারের ‘কার্পেট বম্বিং’-শুরু করছে তারা। যার অঙ্গ হিসেবে সোমবার গুজরাতে পা রাখবেন মোদী। রাজ্যে একাধিক সভা করবেন তিনি। এবং সেই প্রচারের হাওয়া তুলতে কাল রাজ্যের ৫০ হাজার জায়গায় চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রেডিওয় মোদীর ‘মন কি বাত’ শুনবেন বিজেপি নেতারা। অমিত শাহ, অরুণ জেটলি, স্মৃতি ইরানি, মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী— একাধিক হেভিওয়েট নেতা শনিবার রাতেই রাজ্যের নানা প্রান্তে পৌঁছেছেন। এত আয়োজন দেখে টুইটারে খুশি গোপন রাখেননি মোদী নিজেও।
কিন্তু সেই ‘খুশি’র আমেজ থাকল না বেশিক্ষণ। এল জোড়া ধাক্কা। যার একটি হল, গুজরাত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাউন্সিলের ভোটে কার্যত উড়ে গেল এবিভিপি। তাদের হারিয়ে বিপুল জয় পেলেন দলিত ও বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এই ভোট বয়কট করলেও নির্দলদেরই সমর্থন করেছিল। এর আগে মোদীর নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসী থেকে শুরু করে জেএনইউ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও হেরেছে এবিভিপি। কিন্তু খোদ মোদী-শাহের খাসতালুকে, তা-ও বিধানসভার ঠিক মুখে এমন হার?
কংগ্রেস বলছে, দেওয়াল লিখন স্পষ্ট। যুব সমাজ আর মোদীর সঙ্গে নেই। পাল্টা বিজেপির বক্তব্য, এটি ছাত্র সংগঠন নয়, ছাত্র কাউন্সিলের ভোট। খুবই সামান্য এর প্রভাব। গোটা রাজ্যের ভোট বহরের তুলনায় কিছুই নয়। অথচ বছর দুয়েক আগেও দেশের যে কোনও প্রান্তে এমন ‘সামান্য’ ভোটেও গেরুয়া ধ্বজা উড়লেই মোদীর জয়ধ্বনি শোনা যেত। প্রশান্ত ভূষণের কটাক্ষ, ‘‘এখন অমিত শাহের কিংবদন্তী ‘ইভিএম ম্যানেজমেন্ট’ যদি বিজেপিকে বাঁচাতে পারে!’’
আরও পড়ুন: মোদী-ম্যাজিক নিয়ে রাহুলের গলায় কটাক্ষ
এই হারের রেশ কাটতে না কাটতেই সন্ধ্যায় বিজেপি শিবির থেকে খবর এল, সোমবার থেকে শুরু হওয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রচারস্থল বদলানো হচ্ছে। সুরাতের কামরেজে যেখানে মোদীর সভা হওয়ার কথা ছিল, সেখান থেকে দশ কিলোমিটার দূরে সরানো হচ্ছে সভাস্থল। পাতিদার আন্দোলনের সময় এই কামরেজেই পাতিদারদের প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন মোদীর প্রধান সেনাপতি অমিত শাহ। এ বার মোদীর সভাতেও বিক্ষোভের আশঙ্কায় সভাস্থলই সরিয়ে নিল বিজেপি। স্থানীয় নেতারা মুখে বলছেন, আগের মাঠটা ছোট ছিল। কিন্তু দলের অন্দরে কান পাতলে পাতিদার বিক্ষোভের কথাই শোনা যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতি কাজে লাগাতে তৎপর রাহুল নিজেও। শনিবারই গুজরাতের দহেগামে এক প্রচারে গিয়ে রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে মোদীকে সরাসরি নিশানা করেছেন তিনি। পাশাপাশি অমিত শাহের ছেলে জয় শাহকে নিয়ে তীব্র কটাক্ষও করেছেন।
অবস্থা দেখে দিল্লিতে বিজেপির একাধিক নেতার বক্তব্য, অমিত শাহ গুজরাতে ১৫০ আসন জেতার কথা বলছেন। দেড়শো দূর অস্ত্। আসল চ্যালেঞ্জ গত বারের ১১৬টা আসন ধরে রাখাই।
গুজরাত নিয়ে মোদী শিবিরের এই ভয়কেই উপভোগ করছে কংগ্রেস। দলের নেতা আনন্দ শর্মার কটাক্ষ, ‘‘এ কেমন ভোট! দিল্লি ফাঁকা। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা সব গুজরাতে। দেশের কাজ কে করবেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy