মাস্টারস্ট্রোকে কি কিস্তিমাত করবে কংগ্রেস? গুজরাতে নির্বাচনের প্রচারে রাহুল গাঁধী।—ফাইল চিত্র।
চা খেতে না চাওয়ায় রুষ্টই হলেন ভদ্রলোক। ‘‘এত টেনশনের কী আছে? ভোট নিয়ে অত ভাববেন না। যতটা জোর লড়াই মনে হচ্ছে, ততটা আদৌ নয়। ধীরে-সুস্থে কাজ করুন। চা না খেয়ে কেউ যায় নাকি!’’
টেবিলে রাখা তিনটে ফোন অনর্গল বেজে চলেছে। সব ফোনই ধরছেন। তার ফাঁকেই চিনিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন গুজরাতের রাজনীতির অন্ধিসন্ধি। গুজরাতি এক নিউজ চ্যানেলের কর্তা তিনি। নিজের চ্যানেলে যখন ফোনো দিচ্ছেন, বেশ নিরপেক্ষ বিশ্লেষণই করছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ফিরেই বলে দিচ্ছেন, বিজেপি-র পরাজয়ের কোনও সম্ভাবনাই নেই। তাঁর কথায়, ‘‘গত বারের চেয়ে কিছু আসন কমতে পারে, কিন্তু, ১০৫ তো হবেই।’’
দীনেশভাই গাড়ি চালান। পুরনো অমদাবাদের দরিয়াপুর এলাকায় বাড়ি। ভোটের ফল কী হবে? জিজ্ঞাসা করতেই এক বাক্যে উত্তর, ‘‘ভাজপ আওয়েছে (বিজেপি-ই আসছে)।’’
২২ বছর পর গুজরাতের মসনদ থেকে কি গেরুয়া-রাজের অবসান? বলবে সময়...
রাজস্থান লাগোয়া বনাসকাঁঠা জেলার হরেশকুমার পারমার অমদাবাদে থাকেন ঘর ভাড়া নিয়ে। তিনিও পেশায় ড্রাইভার। বনাসকাঁঠা শুনেই ঝাঁপিয়ে পড়তে হল। এত ক্ষণ যাঁদের বয়ান পাচ্ছিলাম, তাঁরা সকলেই শহুরে গুজরাতি। বিজেপি-র দিকে ঝোঁক বেশি হওয়ারই কথা। কিন্তু দীর্ঘ বিজেপি শাসনেও কংগ্রেসের দাপট যে জেলায় অটুট, সেই বনাসকাঁঠার হরেশভাই কী ভাবছেন, তা জানার আগ্রহ চেপে রাখা গেল না। হরেশ দলিত সম্প্রদায়ের, তাই আরও আগ্রহ ছিল তাঁর মতামত জানার। জিগ্নেশ মেবাণীকে নিয়ে তিনি উচ্ছ্বসিত। বডগাম কংগ্রেসের সমর্থনে জিগ্নেশ জিতবেন, এ-ও হরেশকুমার নির্দ্বিধায় বলছেন। কিন্তু রাজ্যের ফলাফল জিজ্ঞাসা করলে, সেই একই কথা, ‘‘ভাজপহি আওয়েছে।’’
আরও পড়ুন: ফের মন্দির জিগির, ঘরপোড়া আমরা, ভোট এলেই ডরাই
প্রভাতকুমার ঘোষ সেই অর্থে গোটা গুজরাতেরই নাগরিক। বাঙালি আইএএস। গুজরাতের নানা জেলায় ঘুরে ঘুরে কাজ করেছেন। অন্তত তিন দশক এ রাজ্যে রয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী যখন মুখ্যমন্ত্রী, তখন গুজরাত সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সচিব ছিলেন এই প্রবাসী বাঙালি। তাঁর ব্যাখ্যা কী? অভিজ্ঞ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের ঢঙেই প্রভাতবাবু বললেন, ‘‘আসন কিছু কমবে বিজেপি-র। কিন্তু ক্ষমতা থেকে চলে যাবে বলে আমি অন্তত মনে করছি না।’’
দীর্ঘ বিজেপি শাসনেও কংগ্রেসের দাপট জেলায় অটুট। শিশুদের সঙ্গে রাহুল গাঁধী।
ভোটের গুজরাতে বিভিন্ন মুখে এই একই বুলি— বিজেপি-র আসন কমবে। কিন্তু কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে না। বিজেপি-র আসন কমবে, এ বিষয়ে যাঁরা নিশ্চিত, তাঁরা নিশ্চয়ই এ বিষয়েও নিশ্চিত যে বেশ কয়েকটি বিষয় বিজেপি সরকারের বিপক্ষে যাচ্ছে। জিএসটি, নোটবন্দি, পাতিদার বিক্ষোভ এবং বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি নেতাদের ঔদ্ধত্য মোদীর দলকে বেকায়দায় ফেলতে পারে— মেনে নিতে কোনও দ্বিধা নেই লোকজনের। ‘‘রাহুল গাঁধী খুব ভাল ম্যানেজ করেছেন এ বারের পরিস্থিতিটা। পাতিদারদের সঙ্গে ওবিসি-দের বিরোধ রয়েছে। কিন্তু পাতিদার নেতা হার্দিক আর ওবিসি নেতা অল্পেশকে যে ভাবে এক ছাতার তলায় এনেছেন রাহুল, তা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক মাস্টারস্ট্রোক।’’ এমনও বললেন এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। এই মাস্টারস্ট্রোকে কি কিস্তিমাত করবে কংগ্রেস? ২২ বছর পর গুজরাতের মসনদ থেকে কি গেরুয়া-রাজের অবসান? আবার সন্দিহান উত্তরদাতা। বললেন, ‘‘অনেকটা শক্তিসঞ্চয় করেই এ বার মাঠে নেমেছে কংগ্রেস, সন্দেহ নেই। কিন্তু হার্দিক পটেল, জিগ্নেশ মেবাণী, অল্পেশ ঠাকোরদের কথায় তাঁদের সম্প্রদায়ের সব লোকজন ঢেলে কংগ্রেসে ভোট দেবেন, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই।’’
সবাই মিলে ঢেলে ভোট না-ই বা দিলেন। অনেকেই যে দেবেন, তা নিয়ে তো সংশয় নেই। প্রভাতবাবুর জবাব, ‘‘কিছুটা ভোট তো কাটবেই। অনেকেই ওঁদের কথায় ভোট দেবেন। কংগ্রেসের ভোট বাড়বে। এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই।’’ তবে তাঁর মতে, বিজেপির পথে কাঁটা বিছিয়ে দিতে পারে বিএসপি। তিনি বললেন, ‘‘মায়াবতী সব আসনে প্রার্থী দিয়ে দিয়েছেন। তাঁর প্রার্থীরা দলিত ভোট যদি বেশ কিছুটা করে কেটে নেন, তা হলে কংগ্রেসের ভাগ থেকে কাটবেন না, বিজেপির থেকেই কাটবেন। সেই ফ্যাক্টরটা বিজেপিকে দুশ্চিন্তায় ফেলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy