শেষ পর্যন্ত রাজ ঠাকরের মুখোমুখিই বসতে হল কর্ণ জোহরকে। মধ্যস্থতা করলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। এবং সেই বৈঠকে এমএনএস প্রধানের দাবি করা যাবতীয় ‘মুক্তিপণ’ চুকিয়ে তাঁর হাত থেকে নিজের ছবি ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’কে ছাড়িয়ে আনলেন পরিচালক।
মুক্তিপণ ১: পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খানকে ছবিতে নেওয়ার ‘প্রায়শ্চিত্ত’ হিসেবে সেনা উন্নয়ন তহবিলে কর্ণদের দিতে হবে পাঁচ কোটি টাকা। বৈঠকের পরে রাজ বলেছেন, ‘‘প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হাতে ৫ কোটির চেক তুলে দেওয়ার সময়ে ছবি তুলে রাখতে হবে। সেই ছবি প্রকাশ করতে হবে। ইতিমধ্যেই আরও যে সব ভারতীয় ছবিতে পাকিস্তানিরা কাজ করে ফেলেছেন, সেগুলোর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।’’ না বললেও স্পষ্ট, এই রাস্তায় হাঁটতে হবে শাহরুখ খানের ‘রইস’ এবং ‘ডিয়ার জিন্দেগি’কেও। কারণ, দু’টিতেই রয়েছেন পাক অভিনেতারা। প্রথমটিতে মাহিরা খান, দ্বিতীয়টিতে আলি জাফর।
মুক্তিপণ ২: ভবিষ্যতে বলিউডের ছবিতে পাকিস্তানি অভিনেতা, গায়ক বা কলাকুশলীদের নেওয়া যাবে না। রাজের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রোডিউসার্স গিল্ডের সভাপতি মুকেশ ভট্ট জানিয়েও দিলেন, গিল্ডের কোনও সদস্য বা পরিচালক আর ওই পথ মাড়াচ্ছেন না। বরং গিল্ডের সভা ডেকে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাশ করে তা মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। মুকেশ বলেছেন, ‘‘আমরা আগে ভারতীয়, ব্যবসা পরে।’’
মুক্তিপণ ৩: পর্দায় ‘অ্যায় দিল...’ শুরুর আগে উরির শহিদ সেনা জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাবেন কর্ণ। মুকেশ জানিয়েছেন, এই শর্তও মানা হবে।
ফলে আজ বিক্ষোভে ইতি টেনেছে এমএনএস। দীপাবলির আগে, ২৮ অক্টোবরই ‘অ্যায় দিল..’ মুক্তি পাবে বলে প্রযোজকেরা জানিয়েছেন। রাজ বলেছেন, ‘‘আমরা বরাবর পাক শিল্পীদের বিরোধিতা করেছি। বলিউড আগে বোঝেনি। এখন বুঝছে। জঙ্গি হামলা হয়েই চলেছে। মুকেশ ভট্টকে বলেছি, পাকিস্তান ইচ্ছেমতো আমাদের ছবি নিষিদ্ধ করে। তা হলে আমরা কেন পাক শিল্পীদের জন্য লাল কার্পেট পেতে দেব?’’
দিন কয়েক আগেই এক ভিডিও-বার্তায় কর্ণ বলেছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রের’ শিল্পীদের নিয়ে কাজ করবেন না তিনি। তার পরেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছে হত্যে দিয়েছেন মুকেশরা। কিন্তু বন্ধ হয়নি এমএনএসের হুমকি-বিক্ষোভ। এই পরিস্থিতিতে আজ সকালে মুম্বইয়ে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীশের বাসভবন ‘বর্ষা’য় বসেছিল বৈঠক। এক দিকে কর্ণ, প্রযোজক সিদ্ধার্থ রায় কপূর, সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা, ফক্স স্টার স্টুডিও-র বিজয় সিংহ এবং মুকেশ ভট্ট। অন্য দিকে রাজ ঠাকরে। সেখানেই ওই তিন দফা দাবি জানান তিনি।
যদিও এ ভাবে টাকা ও মুচলেকা আদায়কে ভাল চোখে দেখছেন না প্রাক্তন ও বর্তমান সেনাকর্মীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়। প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল বি এস জায়সবালের কথায়, ‘‘সেনা কখনও ভিক্ষে করে না। কোনও প্রযোজক তহবিলে টাকা দিতে চাইলে আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষের মতোই দেবেন। এ ভাবে নয়।’’ সেনা সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধে হতাহতদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সেই তহবিলে যে যা দেবেন, সেটা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়। একটি টিভি চ্যানেলে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্রে ফডনবীশ আবার দাবি করেছেন, অনুদানের প্রস্তাবটা প্রোডিউসার্স গিল্ডই দিয়েছিল। রাজ তা মেনে নেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘আলোচনায় সমস্যা মেটানোটাই তো আদর্শ পথ।’’
দিনের শেষে অনেকেই বলছেন, বক্স অফিসের হিসেবটা আসলে আলাদা। আপাতত ‘অ্যায় দিল...’ বিতর্ক থেকে সত্যি যদি কেউ লাভ করে থাকেন, তিনি রাজ ঠাকরে। বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল তাঁর দলের কর্মসূচি। কয়েক মাস আগে অ-মরাঠিদের অটোর লাইসেন্স দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন রাজ। কেউ কান দেননি। শেষ পর্যন্ত জেঠা বালসাহেব ঠাকরের ঢঙেই ‘অ্যায় দিল...’ ঘিরে উগ্র দেশপ্রেমের হাওয়া তুলে নিজের দলের সংগঠনে নতুন অক্সিজেন পৌঁছে দিলেন রাজ। সামনের বছরই বৃহন্মুম্বই পুরসভার ভোট।
কর্ণের অবশ্য চিন্তা থাকছেই। মহারাষ্ট্র, গুজরাত, গোয়া এবং কর্নাটকে ‘অ্যায় দিল...’ না দেখানোর সিদ্ধান্তে এখনও অনড় সিনেমা ওনার্স এগজিবিটর্স অ্যাসোসিয়েশন। তাদের সভাপতির বক্তব্য, ‘‘পরিচালক আমাদের সঙ্গে বসুন। সমাধান তো সব সময়েই রয়েছে।’’
কথা না হয় হল। কিন্তু দেওয়ার মতো আর কোনও মুচলেকা বাকি আছে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy