নোটের আকালে এখন কিস্তিতে বিকোচ্ছে কুমড়োও!
মাসিক কিস্তিতে বাড়ি-গাড়ি কিংবা ফ্রিজ-টিভি-মোবাইল কেনার চল জাঁকিয়ে বসেছে বহু দিনই। বাড়ন্ত নোটের এই বাজারে সেই তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে মুদিখানার জিনিসপত্র, এমনকী শাক-সব্জিও।
এ দেশে খুচরো কেনাকাটায় ধার দেওয়ার প্রায় একচেটিয়া কারবার বজাজ ফিনসার্ভ-এর। তারা জানাচ্ছে, কিস্তিতে কেনার সুবিধা দিতে বিগ বাজার-সহ বিভিন্ন খুচরো ব্যবসা সংস্থার সঙ্গে অনেক আগেই গাঁটছড়া বেঁধেছে তারা। কিন্তু সরকার পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট রাতারাতি বাজার থেকে তুলে নেওয়ার পরে কিস্তিতে মাসকাবারি বাজার করার প্রবণতা লাফিয়ে ৩০% বেড়েছে। বিগ বাজারের দাবি, গত এক সপ্তাহে তাদের চেন-এ খাবার জিনিসের বিক্রি বেড়েছে ৪০%। কারণ মানুষ নোট খরচ না করে কার্ডে কেনাকাটা করছেন এবং কিস্তির সুবিধাও নিচ্ছেন। বজাজ ফিনসার্ভ শীঘ্রই আরও কয়েকটি নামী চেন-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে আগ্রহী।
ব্যাঙ্ক এবং এটিএমে নোটের আকাল বলে এই মুহূর্তে নগদ টাকা খুব গুনে গুনে খরচ করছেন মানুষ। ফলে নিত্যকার জিনিস কিনতেও পাড়ার দোকান ছেড়ে শপিং মলে ভিড় জমানোর প্রবণতা বাড়ছে। কিস্তিতে চাল, ডাল, নুন, আটা এমনকী শাক-সব্জি কিনতেও পিছপা হচ্ছেন না অনেকেই। গ্রাহক টানতে ডাউনপেমেন্টে ‘ছাড়’ও দিচ্ছে বজাজ ফিনসার্ভ। আগে মোট কেনাকাটার ২০% ডাউনপেমেন্ট শুরুতেই মেটাতে হতো। কিন্তু এখন ১ থেকে ১০০— যে কোনও টাকা ডাউনপেমেন্ট করলেই মাসিক কিস্তির সুবিধা মিলছে। শর্ত হল, কেনাকাটা করতে হবে অন্তত ৫,০০০ টাকার। অর্থাৎ সংস্থার দাবি, কেউ পাঁচ হাজার টাকার জিনিস কিনলে ১ টাকা ডাউনপেমেন্ট করলেই চলবে। বাকি ৪,৯৯৯ টাকা মেটানো যাবে কিস্তিতে। ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। বজাজ ফিনসার্ভ ডাউনপেমেন্টে এই সুবিধা চালু করেছে ১০ নভেম্বর থেকে। আপাতত তা ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জারি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
যাঁরা খুচরো কেনাকাটায় এমন কোনও ঋণদান সংস্থার পরিষেবা নেন না, তাঁরা কী করছেন? বিগ বাজারের পাশাপাশি, রিল্যায়ান্স ফ্রেশ বা স্পেনসার্স-এর মতো চেনগুলিতে এ ক’দিনের চেনা ছবি হল, বহু মানুষ ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা করে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ইএমআই-এর সুবিধা নিচ্ছেন। এই চেনগুলিতে গত সপ্তাহে তাই বিক্রিবাটা ৩০ শতাংশ বেড়েছে বলে খবর। পাশাপাশি অনলাইন খুচরো বিক্রি সংস্থার দ্বারস্থ হওয়ার চলও বেড়েছে। মাইডেলিবাজার, বিগবাস্কেট বা গ্রোফাস্ট-এর বাজার রীতিমতো ঊর্ধ্বমুখী। গ্রোফাস্ট-এর বিপণন কর্তা প্রশান্ত বর্মা বললেন, গত সাত দিনে তাঁদের কাছে খাবার জিনিসের বিক্রি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। কাঁচা ফল ও সব্জির ক্ষেত্রে সেটা অন্তত ৫২ শতাংশ।
কিন্তু প্রশ্ন হল, নোটের টান যত দিন রয়েছে, তত দিন কিস্তিতে মাসকাবারি বাজারের রেওয়াজ হয়তো বাড়বে। কিন্তু তার পরে এই ধারা বজায় থাকবে কি? বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ছবিটা অবিকল এক রকম থাকবে না। কিন্তু সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ফারাক ঘোচাতে ক্রেতারা যে ভাবে ক্রমশ আরও বেশি করে কিস্তিতে কেনাকাটার দিকে ঝুঁকছেন, তাতে মুদিখানার জিনিসপত্র সেই বৃত্তে ঢুকে পড়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। বিগ বাজারের এক ক্রেতা বলছিলেন, ‘‘টিভি-ফ্রিজ-মোবাইল, কিছু ক্ষেত্রে দামি জামাকাপড়ও যদি কিস্তিতে কেনা যায়, তবে সাবান-শ্যাম্পু-সব্জিই বা নয় কেন?’’
তবে কাঁচা বাজার বা মুদিখানায় ঝোঁকের বশে কোনও জিনিস কিনে ফেলার ঘটনা তুলনায় কম ঘটে। কিন্তু থরে থরে নানা ধরনের পণ্য সাজানো মল-এ তেমনটা হামেশাই হয়। এক ক্রেতায় কথায়, ‘‘এক রকম বিস্কুট কিনতে গিয়ে সঙ্গে দু’রকম কেক কিংবা আঙুর কিনতে গিয়ে সঙ্গে আরবি খেজুরের প্যাকেট প্রায়ই কিনে ফেলি আমরা। নিছক সস্তায় মিলছে বলে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও কেনা হয়ে যায় কাচের গ্লাসের সেট।’’ ফলে সব মিলিয়ে আগামী দিনে মল-এ কিস্তির ব্যবসা বাড়বে বলেই বিপণন বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এবং শুধু মেট্রো শহর নয়,
তার বাইরেও ছড়াবে এই রেওয়াজ। বজাজ ফিনসার্ভের অন্যতম কর্তা দেবাং মোদী জানান, তাঁদের ৬৫% ফ্র্যাঞ্চাইজি ছোট ও মাঝারি শহরেই। যেখানে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কম, সেখানে কিস্তির সুবিধা নিতে মূলত এই জাতীয় কার্ডই ব্যবহার করছেন ক্রেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy