Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

টাকা বন্ধ হয়েছে, জানতেনই না এমিলি

জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পরে ভিয়েনায় নেতাজির স্ত্রী-কন্যাকে আর অর্থসাহায্য পাঠানো হয়নি। এবং এই টাকা পাঠানো বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নেতাজির স্ত্রী এমিলি শেঙ্কলকে জানানো হয়নি। এমিলির একটি ব্যক্তিগত চিঠি থেকে এমনটাই জানা যাচ্ছে।

নেতাজি ও এমিলি।

নেতাজি ও এমিলি।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:০৮
Share: Save:

জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পরে ভিয়েনায় নেতাজির স্ত্রী-কন্যাকে আর অর্থসাহায্য পাঠানো হয়নি। এবং এই টাকা পাঠানো বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নেতাজির স্ত্রী এমিলি শেঙ্কলকে জানানো হয়নি। এমিলির একটি ব্যক্তিগত চিঠি থেকে এমনটাই জানা যাচ্ছে।

নেতাজির ঘনিষ্ঠ কালীচরণ ঘোষের পুত্র শিবব্রত ঘোষকে ১৯৭৩ সালে একটি চিঠি লিখেছিলেন এমিলি। শিবব্রত সত্তর দশকের গোড়ায় ভিয়েনায় গিয়ে এমিলির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। দুই পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতাও গড়ে ওঠে। এমিলি পরে শিবব্রতকে লিখছেন, ‘অনিতার জন্য যে ট্রাস্ট ছিল, সেটা কোথায় গায়েব হয়ে গেল, আমরা বুঝতেই পারলাম না। এখন ওর ৩১ বছর বয়স। আমি নিজের জন্য এই টাকা চাইছি না। অনিতারও ব্যক্তিগত খরচের জন্য ওই টাকার প্রয়োজন নেই। ও এটা ভারতে দানের কাজেই খরচ করতে চায়। আমরা অনেক আবেদন করেছি, কোনও উত্তর এখনও আসেনি।’

মোদী সরকার সম্প্রতি নেতাজি সংক্রান্ত যে সব ফাইল প্রকাশ করেছে, তাতেই দেখা গিয়েছে, নেতাজির স্ত্রী-কন্যার সাহায্যের জন্য নেহরুর উদ্যোগে বছরে ছ’হাজার টাকা করে পাঠানো হতো। ফাইলেই প্রকাশ, ১৯৬৫ সালে নেতাজি-কন্যা অনিতার বিবাহের পর এই অর্থসাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সে কথা নেতাজি পরিবারকে জানানো হয়েছিল কি না, সে কথা ফাইলে বলা নেই। শেঙ্কলের চিঠি থেকে স্পষ্ট, অর্থ বন্ধের ব্যাপারে অবহিত ছিলেন না তাঁরা। উল্টে তাঁরা ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন, যাতে ওই অর্থসাহায্য বন্ধ না করা হয়।

নেহরু, নেতাজি ও এমিলি (উপরে, বাঁ দিক থেকে)।
নীচে, শিবব্রত ঘোষকে লেখা এমিলির চিঠি। সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

শেঙ্কলের এই চিঠি এক দিকে যেমন নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি, নেহরু এবং নেতাজির সম্পর্ককে ভিন্ন মাত্রায় দেখার সুযোগও করে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি ফাইলে যখন প্রকাশ পেয়েছিল যে, দীর্ঘ সময় ধরে কলকাতায় বসু পরিবারের সদস্যদের উপরে গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার, তখন নেহরুর ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোড়ন পড়েছিল। কিন্তু এই অর্থসাহায্যের বিষয়টি খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাচ্ছে, অনিতার নামে ট্রাস্ট গঠন ও অর্থসাহায্যের বিষয়টি নেহরুই তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করেছিলেন। টাকা দেওয়ার জন্য যাতে সরকার বা বিরোধী— কোনও মহল থেকে প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্যও যথেষ্ট যত্নবান ছিলেন তিনি।

নেহরু এই ট্রাস্টে সরকারের বা দলের কোনও অর্থ সরাসরি রাখতে চাননি। অর্থের পরিমাণটি সে যুগের নিরিখে নেহাত কম ছিল না (আজকের মূল্যে যা প্রায় বছরে ৫ লক্ষ টাকার সমান)। ‘পহেলা আদমি’ নামে নেতাজিকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করিয়ে তার প্রদর্শন এবং প্রচার থেকে যে অর্থ সংগ্রহ হয়েছিল, তাই দিয়ে এআইসিসি-র তত্ত্বাবধানে বানানো হয় এই ট্রাস্ট। ট্রাস্টের অছি ছিলেন নেহরু নিজে এবং পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়।

সরকারের প্রকাশিত ফাইলে দেখা যাচ্ছে ১৯৫২ সালের জুন মাসে অর্থ মন্ত্রককে নেহরু লিখছেন, ‘‘ভিয়েনায় রয়েছেন সুভাষচন্দ্র বসুর স্ত্রী। আমরা তাঁর সাহায্যের জন্য সামান্য অর্থ পাঠাতে চাই। বিদেশ মন্ত্রকের এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। একটি বিশেষ কেস হিসেবে একে দেখা যেতে পারে।’’

রাজনৈতিক সূত্রের মতে এটা স্পষ্ট যে, সুভাষ বসুর সঙ্গে রাজনৈতিক মতবিরোধ সত্ত্বেও কংগ্রেসে নেহরুই নেতাজি পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর (৬৪ সালে নেহরুর মৃত্যু হয়) ধীরে ধীরে সব শুকিয়ে আসে। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সময় থেকে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, অনিতা ট্রাস্টের কী হল, সেই সব তথ্যও প্রকাশিত ফাইলে নেই। কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এই ট্রাস্ট সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। সেই সময়কার কথা যাঁরা বলতে পারতেন, এমন মানুষ এখন আর এআইসিসি-তে নেই বললেই চলে।’’ নেতাজি পরিবারের সদস্য এবং ইতিহাসবিদ সুগত বসুর কথায়, ‘‘নেহরু কখনও ভোলেননি নেতাজির সঙ্গে তাঁর সখ্যের কথা। নেহরু যখন জেলে, তখন পরম যত্নে কমলা নেহরুকে প্রাগ থেকে ভিয়েনায় নিয়ে যান নেতাজি। পরেও কমলার মৃত্যুশয্যায় আগাগোড়া থেকেছেন তিনি। অন্ত্যেষ্টির সব দিক সামলেছেন একা হাতে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

MostReadStories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE