প্রতি বছরের ঘটনা। বিভিন্ন পর্যায়ের ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরপরই ইভিএমে কারচুপি নিয়ে সরব হন একদল রাজনীতিক। আর নির্বাচন কমিশন প্রতিবারই সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেয়। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, ঠিক কী ভাবে কাজ করে ইভিএম। জেনে নেওয়া যাক, কেন প্রতিবারই ‘সব ঠিক হ্যায়’ বলে নির্বাচন কমিশন। আর কেনই বা ভোটের ফল প্রকাশের পর একদল রাজনীতিক বরাবরই বলে থাকেন, ‘সব ঝুট হ্যায়’!
নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য কী?
১) কোন ইভিএম কোন ভোটকেন্দ্রে যাবে, তা বেছে দেয় কম্পিউটারই। আর সেটাও কম্পিউটার বেছে নেয় কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম না মেনে। এটা প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি জানিয়েছিলেন।
২) সব ভোটেরই দু’-তিন মাস আগে সবক’টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির সামনে পরখ করে দেখে নেওয়া হয়, মেশিনগুলি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না। সেটাই ইভিএমের পয়লা দফার পরীক্ষা।
৩) চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা ঘোষণার পর, ভোটের ১৩ দিন আগে প্রার্থী/ রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা করে দেখা হয় ভোটযন্ত্রগুলিকে। সেখানে প্রার্থীরা সই করে দেন। আর সেটাই হয় ভোটযন্ত্রগুলির সার্টিফিকেট।
৪) বুথে পাঠানোর আগে ইভিএমগুলিকে কাগজ দিয়ে সিল করে দেওয়া হয়। আর প্রত্যেকটি ইভিএমকে দেওয়া হয় একটি নির্দিষ্ট সিকিওরিটি নম্বর। ওই নম্বরটি না জানলে মেশিনটি খোলা যাবে না।
৫) ভোট শুরুর আগে ওই ইভিএমগুলিতে মহড়া ভোট (মক পোলিং) নেওয়া হয়।
যাঁরা ইভিএমে কারচুপির কথা বলেন, তাঁদের বক্তব্য কী?
১) ভোটের আগে কোনও চিপ বা কমপোনেন্ট ঢুকিয়ে দিয়ে কোনও বিশেষ দলের কোনও বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে তাকে প্রভাবিত করা যায়। যা পোলিং অফিসারদের নজর এড়িয়েই করা যায়।
২) কোনও চিপ যাতে ব্লু-টুথ রয়েছে, তা ইভিএমে থাকলে তাকে মোবাইল ফোন থেকেও ইচ্ছেমতো চালানো যায়।
৩) ভোটের সময় যখন ভোটদাতাদের দেওয়া ভোট রেকর্ড করছে মেশিন, তখন কোনও গলদ ঘটলে তা বোঝার উপায় থাকে না।
আরও পড়ুন- গুজরাতে চলন্ত গাড়িতে বাবার সামনেই দুই কিশোরীকে গণধর্ষণ
৪) ভোটের পর পোর্টেবল হার্ডওয়্যার ডিভাইস মেশিনে থাকা ভোটদাতাদের ভোটের রেকর্ড বদলে দিতে পারে।
৫) ইভিএমগুলিকে সিল করা হয় স্টিকার, লাল মোম আর সুতো দিয়ে। যা ভেঙে ফেলা খুব একটা মুশকিলের নয়।
উদ্বেগের কারণ
১) ইভিএমে যে বাছাই করা কয়েক জনের অ্যাকসেস থাকে, তাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত হতে পারেন।
২) দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিইএল এবং ইসিআইএল ওই চিপ বানানোর দায়িত্ব দেয় কয়েকটি বিদেশি কোম্পানিকে। এটাও উদ্বেগের কারণ।
৩) তবে ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব নয়। কারণ, তাতে কোনও ইন্টারনেট যোগাযোগ নেই।
বিশ্বের অন্যত্র ইভিএম কেমন?
১) স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে, এই যুক্তিতে ২০০৯ সালের ইভিএমের ব্যবহার বন্ধ হয়ে গিয়েছে জার্মানিতে।
২) ২০০৭ সালে ইভিএম নিষিদ্ধ হয়ে যায় নেদারল্যান্ডসেও। যখন এটা দেখা যায় যে, সরাসরি চোখে দেখা না গেলেও পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ইভিএমের গলদের ফলে কী ভাবে উল্টে যেতে পারে ফলাফল।
৩) আমেরিকায় ইভিএমের সঙ্গে সঙ্গে ব্যালটে ভোটদানও বাধ্যতামূলক।
৪) ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সে কখনও ব্যবহারই হয়নি ইভিএম।
বিকল্প ব্যবস্থা ‘ভিভিপ্যাট’
১) সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের।
২) সেই মতো চালু হয়েছে ভিভিপ্যাট। যাতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভোটদাতাদের চোখের সামনে ভেসে উছবে তাঁরা কোথায় ভোট দিলেন।
৩) ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে ৮টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণে তার ব্যবহারও হয়েছিল।
৪) এ বার গোয়ার সব কেন্দ্র আর পঞ্জাবের ৩৩টি কেন্দ্রে এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy