ভূমিকম্পে ইম্ফলে ভেঙে পড়েছে বাড়ি। ছবি: এএফপি।
বড়সড় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত। সোমবার ভোর ৪টে ৩৯ নাগাদ এই ভূমিকম্প হয়। মার্কিন ভূ-বিজ্ঞান সর্বেক্ষণ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ওই কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৭। কম্পনের উত্সস্থল মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ২৯ কিলোমিটার পশ্চিমের তমেঙলং। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার গভীরে ওই উত্সস্থল। কয়েক সেকেন্ডের ওই ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত এ দেশে আট জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত অন্তত ৫৮। বাংলাদেশে মারা গিয়েছেন তিন জন। প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন।
ভূমিকম্পের প্রভাবে কেঁপে ওঠে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত-সহ প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারও। রাজধানী ঢাকা-সহ কম্পন অনুভূত হয়েছে প্রায় গোটা বাংলাদেশ জুড়ে। ভূমিকম্পের পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটে লেখেন, “অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে রাজ্যের খবর নিয়েছি।” এ দিনের ভূমিকম্প গত বছরের নেপাল ভূমিকম্পকে উসকে দিয়েছে। গত বছর সে দেশে ভূমিকম্পের পর ভূ-বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছিলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের পালা আসতে চলেছে। সেই আশঙ্কাই সত্যি করে এ দিন ভোরে কেঁপে উঠল মণিপুর-সহ বিভিন্ন জায়গা। ভূ-বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাটির নীচে ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেট একে অপরের দিকে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। এক একটা সময়ে এই দু’টি প্লেট একটি অন্যটির উপর পিছলে গেলে প্রচুর পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়। তারই ফল ভূমিকম্প। তাঁদের মতে, মণিপুরের ওই অঞ্চলটি ভূমিকম্পপ্রবণ। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, নেপালের ভূমিকম্পের সঙ্গে এ দিনের কম্পনের একটা ফারাক রয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত হাজরা বলছেন, “নেপালের ক্ষেত্রে একটি প্লেট আর একটি প্লেটের তলায় ঢুকে গিয়েছিল। মনে হচ্ছে, একটি প্লেট আর একটি প্লেটের থেকে দূরে যাওয়াতেই এই ঘটনা।”
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান হরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, একটা বড় ভূমিকম্পের পরে গোটা অঞ্চলে পর পর অনেকগুলি ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকে। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ এক বার কেঁপেও ওঠে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত। তবে তার মাত্রা ছিল অনেক কম। মণিপুরে উদ্ধারকার্যে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দু’টি দলকে পাঠানো হয়েছে। আরও ১২টি দলকে তৈরি রাখা আছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। গোটা এলাকায় বিদ্যুত্ এবং টেলিফোন পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
ভোরে ভূমিকম্পের সময় বেশির ভাগ মানুষই ঘুমিয়ে ছিলেন। অনেকেই কাঁপুনি টের পেয়ে আতঙ্কে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। রাস্তাঘাট-সহ প্রচুর বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। কাঠমান্ডু থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নির্জন পাহাড়ি এলাকায় মাটির ১১ কিলোমিটার গভীরে ওই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল। ওই ভূমিকম্পে প্রচুর মানুষ মারা যান। গৃহহীনও হয়ে পড়েন কয়েক হাজার মানুষ। সেই আতঙ্কই এ দিন দিনভর তাড়া করে বেড়িয়েছে।
আরও খবর:
ঘুম ভেঙে গেল প্রচণ্ড দুলুনিতে
পায়ের নীচের কংক্রিটের মেঝেতে তুমুল ঢেউ খেলে গেল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy