অমেঠি সফরে রাহুল গাঁধী। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।
লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর ঘরেও চাপের মুখে পড়েছিলেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু সেই চাপকে কাটিয়ে উঠতে এ বার সক্রিয় হচ্ছেন গাঁধী পরিবারের এই তরুণ প্রজন্ম। সাম্প্রতিক কিছু উপনির্বাচনে কংগ্রেসের সাফল্যের পর রাহুল নিজে যেমন আজ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করতে নেমেছেন। তেমনই তাঁর শিবিরের তরুণ নেতারা কংগ্রেসের বৃদ্ধতন্ত্রের অবসান ঘটাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। তাঁদের মূল লক্ষ্য দলের সংগঠনের ষোল আনা রাশ রাহুলের হাতে তুলে দেওয়া।
ক’দিন আগে লোকসভার ওয়েলে নেমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছিলেন রাহুল। আজ আবার নিজের নির্বাচন কেন্দ্র অমেঠিতে গিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। কংগ্রেসের সহ-সভাপতি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী জাপানে গিয়ে ঢোল বাজাচ্ছেন, আর গোটা দেশ মূল্যবৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ সঙ্কটে ডুবে রয়েছে।” এখানেই থেমে না থেকে রাহুল বলেন, “যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওঁরা ক্ষমতায় এসেছেন, হয় তা ভুলে গিয়েছেন, নইলে সেগুলি রূপায়ণের ক্ষমতা ওঁদের নেই।” বস্তুত বিদ্যুৎ সঙ্কট নিয়ে আজ অমেঠিতে রাহুলকেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। সেই সুযোগেই মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন রাহুল।
তবে এই মোদী-বিরোধী আক্রমণের নেপথ্যে রাহুলের অন্য কৌশল রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রে মোদী সরকারের বয়স মাত্র একশো দিন। এর মধ্যে এমন কিছু ঘটেনি যে সরকার-বিরোধিতায় খোদ রাহুলকে মুখ খুলতে হবে। আসলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে রাহুল দলে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠারই চেষ্টা করছেন। লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর তাঁর ভাবমূর্তিতে যে আঘাত লেগেছে, সেই দাগ মুছতেই তাঁর এই সক্রিয়তা। সেই সঙ্গে দলে বর্ষীয়ানদের বার্তাও দিতে চাইছেন তিনি। লোকসভা ভোটের পর থেকে কংগ্রেসের এই নেতারাই রাহুলের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন।
অমেঠিতে রাহুলকে যেমন আজ আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা গিয়েছে, তেমনই তাঁর ঘনিষ্ঠ তরুণ নেতারাও আজ সক্রিয় হয়েছেন। এআইসিসি-র সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা সাধারণ সম্পাদক জনার্দন দ্বিবেদীর সঙ্গে রাহুল শিবিরের চার সম্পাদক আজ দেখা করে একটি স্মারকলিপি দেন। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতারা রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে কেন প্রশ্ন তুলছেন? এটা কি শৃঙ্খলাভঙ্গ নয়? মোদী সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে তাঁরা সরব হচ্ছেন না কেন?
মজার বিষয়, এই জনার্দন দ্বিবেদীই এত দিন দলে শৃঙ্খলার পাঠ পড়াতেন। আজ শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে তাঁকেই কাঠগড়ায় তোলেন নবীনরা। জনার্দনের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আজ নসিব সিংহ, জুবের খান, হরিশ চৌধুরীর মতো নেতারা প্রকাশ্যে বলেন, এই বর্ষীয়ানদের উচিত এখনই পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত তৈরি করা।
অন্দরের এই উত্তেজনার কথা আজ রাহুলও স্বীকার করে নেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কংগ্রেস বড় দল। এ রকম উত্তেজনার পরিস্থিতি মাঝে মাঝে তৈরি হয়। আশা করি তা দ্রুত মিটে যাবে।” তবে কংগ্রেসের নবীন নেতারা বিদ্রোহ শুরু করার পর ৪৮ ঘণ্টা হয়ে গেলেও সনিয়া বা রাহুল এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেননি। দলীয় সূত্রে খবর, নবীনদের এই বিদ্রোহের নেপথ্যে মা-ছেলে উভয়েরই প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে। তাঁরাও চান, বৃদ্ধ নেতাদের মৌরসিপাট্টা বন্ধ হোক। রাহুল তাঁর নিজের টিম তৈরি করে দল চালান।
তবে সেই চেষ্টা কতটা সফল হয়, সেটাও দেখার। কারণ, নবীনদের বিক্ষোভ মোকাবিলায় প্রবীণরাও নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন। দলে শৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে, সে ব্যাপারে আজ কংগ্রেস সম্পাদকদের আশ্বাস দিয়ে বিক্ষোভের আঁচ কমানোর চেষ্টাও করেছেন জনার্দন। আবার মোদীর বিরুদ্ধে মুখ খোলায় আজ বিজেপি নেতারাও রাহুলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, “রাহুল মুখ না-খুললেই কংগ্রেসের মঙ্গল। উনি আরও মুখ খুললে কংগ্রেস ৪৪টি আসনও পাবে না।” সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, “কংগ্রেসই রাহুলের কথা শোনে না, সরকার শুনে কী করবে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy