—ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদীর সাফাই অভিযানে সাফ হয়ে যাচ্ছে দিল্লির পুজোর বাজেট।
শুনতে খটকা লাগছে? কিন্তু বাস্তব এটাই।
ঠেলায় পড়ে এখন এ দিক ও দিক ছোটাছুটি। পুজোর অর্ধেক কেটে গিয়েছে। শেষ বাজারেও চেয়েচিন্তে জোগাড় করতে হচ্ছে রেস্তো। হোক না প্রবাস। তাই বলে কি বাঙালির সারা বছরের একটি পর্ব ধুমধাম করে হবে না? নিজের পাড়া সাফাই হোক, পরিষ্কার হোক, স্বচ্ছ হোক- কে না চায়? তাই বলে মায়ের আরাধনা হবে না, সকলে ধুনুচি নাচে মাতবে না, পুজোর পাঁচটি দিন আনন্দ করবে না- তাই বা হয় কী করে?
তাই পুজোর আয়োজকদের কালঘাম ছুটিয়েই এ বারে জোগাড়ে নামতে হয়েছে। কারণ? বড় বড় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে আগে গেলেই যেখানে লাখ খানেক টাকা অনায়াসে পাওয়া যেত, আজ তারাই হাতজোড় করে পত্রপাঠ বিদায় করেছে। তাদের কাছে না কি কড়া নির্দেশ, কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) খাতে আগে যেমন তারা নিজের পছন্দ মতো খরচ করতে পারত, এখন আর করা যাবে না। সেই খাতের টাকা খরচ করতে হবে নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানে’। তাই এই সংস্থাগুলির থেকে শুকনো মুখেই ফিরতে হয়েছে পুজোর উদ্যোক্তাদের। বড় জোর সম্পর্কের খাতিরে ব্যাজার মুখে হাজার দশ-পনেরো টাকা দিয়েই বিদায় করেছে তারা।
বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে টাকা আসবে? সেখানেও তথৈবচ। মোদী জমানায় আবাসন শিল্পেও মন্দা। যেখান থেকে আগে কাঁড়ি-কাঁড়ি টাকা আসত। দিল্লি ও তার উপকণ্ঠে ভুরি ভুরি ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি। ক্রেতা অমিল। তারাও এখন মুখের উপরে ‘না’ করে দিয়েছে। মন্দার বাজারে দুর্গা পুজোয় বিনিয়োগে রাজি নন সিংহভাগই। রোজ পুজো আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কোনও খামতি রাখেননি উদ্যোক্তারা। কিন্তু সকাল-সন্ধে ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের থেকে কাকুতি-মিনতি করেই বাজেট ধরে রাখার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর। পুজোর বাজেট কাটছাঁট করতে গিয়ে অনেক জায়গায়ই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কলকাতা-মুম্বইয়ের তারকাদের বদলে স্থানীয় শিল্পীদের দিয়ে অনুষ্ঠান করাচ্ছে। নবপল্লীতে এবার স্থানীয় বাঙালি বাচ্চাদের সাথে অবাঙালি বাচ্চাদের দিয়ে বিভিন্ন বাংলা নাটকের অনুষ্ঠান করানো হচ্ছে।
দিল্লির মিনি-কলকাতা চিত্তরঞ্জন পার্কের নবপল্লীর পুজো যেমন। সেখানকার সভাপতি উৎপল ঘোষ বললেন, ‘‘বিজ্ঞাপন ও স্পনশরশিপে বাজার মন্দার জন্য ভাল রকমের প্রভাব পড়েছে। অনেক কষ্টে টাকা জোগার করে পুজো করতে হচ্ছে। আগে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে যে টাকা আসত এখন আর আসে না। সরকারি সংস্থার টাকা স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পেই সব চলে যাচ্ছে। তা ছাড়া প্রাইভেট সেক্টরের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়াও বিজ্ঞাপন না আসার একটা কারণ। গত বার বাজেট ছিল ৪০ লক্ষ টাকা। এ বারেও তাই। মেটাতে হচ্ছে কোনও রকমে।’’
আরও পড়ুন: দিল্লিতে বাড়ির পুজোতেও থিমের প্রতিমা
আরামবাগ পুজো কমিটির এক কর্তা অভিজিৎ বোসের কথাতেও স্পষ্ট সরকারি বিজ্ঞাপন কমে যাওয়ায় পুজোর বাজেট কম করতে হয়েছে তাঁদের। তিনি বলেন, ‘‘মোদীর স্বচ্ছ ভারতের প্রকল্পের জন্য পুজোর সময় আমরা যে বিজ্ঞাপন পেতাম তার পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে। পুজোর বিজ্ঞাপনের একটা বড় অংশ আবাসনের থেকেও আসত, তাদের অর্থনৈতিক মন্দার জন্য এ বার সে সব জায়গা থেকেও সেভাবে বিজ্ঞাপন আসেনি।’’ একই সুর দিল্লির ছোট বড় বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তাদের গলায়। সবাই বলছেন, ওএনজিসি বা এনটিপিসির মতন সংস্থা আগে যেখানে এক-দেড় লাখ টাকার স্পনসর করত, এখন তার বদলে হাজার পনেরোর বেশি টাকা স্পনসর করতে চাইছে না।
তবে এতে পুজো উদ্যোক্তাদের উৎসাহ উদ্দীপনায় কোনও অভাব নেই। বিভিন্ন ছোট সংস্থা ও বাঙালি ব্যবসায়ীরা তাঁদের ভরসা যোগাচ্ছেন। দিল্লির পুরনো পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম করোলবাগ পুজো সমিতির এক কর্মকর্তা রবীন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আমাদের এ বারের পুজোর বাজেট ভাবা হয়েছিল ৩৫ লক্ষ টাকা, কিন্তু বিজ্ঞাপন সেভাবে না পাওয়ার জন্যে বাজেট অনেক কমাতে হয়েছে।” এই পুজো কমিটির সেক্রেটারি দীপক ভৌমিক বিজ্ঞাপন কম আসার কারণ হিসাবে অর্থনৈতিক মন্দাকেই দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, “অর্থনৈতিক মন্দার জন্য বিজ্ঞাপব সেভাবে আসছে না, যে সব জায়গা থেকে বড় চাঁদা পাওয়া যেত সেখানেও চাঁদার আর্থিক পরিমাণ অনেক কমে গেছে।” তবে মাতৃমন্দির পুজো কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি দেবাশিস সাহার গলায় একটু অন্য সুর, তাঁর কথায়, “এ বার এখনও পর্যন্ত আমাদের বিজ্ঞাপন পেতে কোনও অসুবিধা হয়নি, তাই পুজোর বাজেটে সেভাবে টান পড়েনি।” বিজ্ঞাপন পেতে অসুবিধা না হওয়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন, “আমাদের পুজো অনেক দিনের। অনেকেই এক ডাকে চেনে। তাই পুজোর টাকা চাইতে গিয়ে নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy