‘অল টেরেন ভেহিক্ল’ (এটিভি)। — নিজস্ব চিত্র।
গাড়ি কেনা নিয়ে গোল বেঁধেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অন্দরেই। এক পক্ষ বলছেন, ছত্তীসগঢ়ের দুর্গম জঙ্গল-পাহাড়ে মাওবাদীদের সঙ্গে যুঝতে ওই গাড়ি ছাড়া উপায় নেই। অন্য পক্ষের বক্তব্য, ওই গাড়ি কেনা মানে অর্থের অপচয়। জঙ্গল-কেন্দ্রিক লড়াই ও পদে পদে ল্যান্ডমাইনের আতঙ্ক যেখানে, সেখানে ওই গাড়ির উপরে নির্ভরতা আত্মহত্যার সামিল।
এবড়ো-খেবড়ো ও বন্ধুর পথেও স্বচ্ছন্দে চলতে পারে ‘অল টেরেন ভেহিক্ল’ (এটিভি)। অনেকটা উঁচু বলে গাড়ির তলা মাটিতে ঘষে যায় না। কোনওটিতে এক জন, কোনওটিতে দু’জন, এমনকী কোনও এটিভি চার জনকেও নিতে পারে।
ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ আরও জোরদার করা ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে ওই গাড়ি অবিলম্বে কিনতে উদ্যোগী সিআরপি-র শীর্ষকর্তাদের একাংশ। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘যত শীঘ্র সম্ভব আমাদের বেশ কিছু এটিভি চাই। তা হলে দুর্গম পথে জওয়ানেরা কোনও খবর পেয়ে দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছতে পারবেন।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, ৩ সেপ্টেম্বর ছত্তীসগঢ়ের বিজাপুর জেলার আড়াপল্লি এলাকায় সংঘর্ষে এক মাওবাদী নিহত হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে একটি একে-৪৭ রাইফেল, একটি ওয়্যারলেস সেট ও সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। সিআরপি-র ওই শীর্ষকর্তা জানাচ্ছেন, ওই ‘অপারেশন’-এর জন্য ৪০০ জনেরও বেশি জওয়ানকে যেতে ও আসতে মোট ১৬০ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়েছে। জঙ্গলে কাটাতে হয়েছে তিন রাত, চার দিন। এটিভি থাকলে এই ধরনের অভিযানে জওয়ানদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হতো বলে ওই অফিসারের অভিমত। সিআরপি সূত্রের খবর, বিএসএফ কচ্ছের রণে ভারত-পাক সীমান্তে টহলদারিতে ওই গাড়ি গত কয়েক বছর যাবৎ ব্যবহার করছে।
২০১২ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মাওবাদী মোকাবিলায় সিআরপি-র আধুনিক সরঞ্জাম কিনতে ১২০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিল। যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছিল ৭৫টি এটিভি কেনার জন্য।
বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘নানা টালবাহানায় সমস্যা হচ্ছিল। এটিভি-র বিভিন্ন মডেলও আমাদের পছন্দ হচ্ছিল না। তবে এ বার এটিভি আসছে।’’ এ যাবৎ এটিভি-র নির্মাতা সংস্থার প্রায় সবই ছিল বিদেশি। ৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের উপস্থিতিতে দেশীয় সংস্থা বিইএমএল তাদের তৈরি একটি এটিভি তুলে দেয় বিএসএফ-এর হাতে।
তবে সিআরপি-র কর্তাদের অন্য একটি অংশ এটিভি ব্যবহারের আদৌ পক্ষপাতী নন। তাঁদের এক জন বলছেন, ‘‘এটিভি কিন্তু বিস্ফোরণ রোধক নয়। যে পথে ল্যান্ডমাইন বিছোনো সেই পথে হুড়োতাড়া করে ওই গাড়ি চড়ে যাওয়া মানে তো সাক্ষাৎ মৃত্যু।’’
সিআরপি-র অফিসারদের কেউ কেউ মনে করেন, এটিভি-র পরিণতি ইজরায়েলি স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র টেভর এক্স নাইনটি ফাইভের মতো হতে পারে। বছর ছয়-সাত আগে ওই বন্দুক এক-একটি দু’লক্ষ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিল। একে-৪৭ রাইফেলের দাম এর অর্ধেকেরও কম। এখন সিআরপি-র অনেকের কাছেই ওই ইজরায়েলি বন্দুক বিড়ম্বনা বিশেষ। কেন? এক অফিসার বলেন, ‘‘ওই বন্দুক আধুনিক ঠিকই, তবে ব্যবহার করার পদ্ধতি ভজঘট। ওর সঙ্গে সড়গড় হতেই দীর্ঘ প্রশিক্ষণ লাগে। খারাপ হলে যন্ত্রাংশ এ দেশে মেলে না। অভিযানে গিয়ে খারাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে সারাইয়ের সুযোগ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy