খবরের কাগজে মাঝেমধ্যে উঠে আসে সেই সমস্ত ‘খারাপ’ খবরগুলো। যেখানে দেখতে হয় সিন্থেটিক ড্রিঙ্কস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মানুষ। অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে কখনও সখনও ফুটে ওঠে ভয়ঙ্কর কিছু ভিডিও। যেখানে দেখা যায়, ঠান্ডা পানীয় দিয়ে দিব্যি পরিষ্কার করা যাচ্ছে টয়লেট, বেসিন। চিকিৎসকরাও বারবার সাবধান করছেন কৃত্রিম রং ও প্রিজারভেটিভ দেওয়া নরম পানীয়গুলো থেকে দূরে থাকতে। এমনকী, এই পানীয়গুলোতে পাওয়া গিয়েছে কার্সিনোজেনিক উপাদানও। কিন্তু তা-ও সতর্ক করা যাচ্ছে না সাধারণ মানুষকে। নরম পানীয়ের ‘ঝাঁঝ’-এ মশগুল ছেলে থেকে বুড়ো, সক্কলে।
চারপাশের এই পরিস্থিতি দেখেই টনক নড়েছিল ওদের তিন জনের। ঠিক করল, এর একটা উপায় বের করতেই হবে। ছোট বলে ফেলনা নয়, করে দেখাল ওরাই। ওরা তিন জন, মানে চৈতন্য গোলেছা, মৃগাঙ্ক গুজ্জার এবং উৎসব জৈন। জয়পুরের নীরজা মোদী স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। এই বয়সেই শুরু করল নিজেদের ব্যবসা। হাতে তিন কোটি টাকা। কিন্তু কোথা থেকে এত টাকা এল ওদের হাতে?
গল্পটা শুরু এখান থেকেই। স্কুলের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু চৈতন্য, মৃগাঙ্ক আর উৎসব। আচমকাই নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করে তারা। বাজারচলতি অস্বাস্থ্যকর পানীয়ের বদলে নিজেরাই নতুন ধরনের পানীয় তৈরির কথা ভাবে। শুরু হয় পড়াশোনা। গুগল-এর দারস্থ হল ওরা। পেল নতুন আইডিয়া। দেখল প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েও দিব্যি তৈরি করা যায় স্বাস্থ্যকর পানীয়।
আরও পড়ুন: পঞ্জাবের কৃষককে জমির ক্ষতিপূরণ আস্ত একটা ট্রেন! হ্যাঁ, সত্যিই
নিজেদের ব্যবসা শুরু করে খেল দেখিয়েছে এই তিন রত্ন
শুরু হল উদ্যোগ। সামান্য পুঁজি সম্বল করে সিন্থেটিক রং, গন্ধ, প্রিজারভেটিভ, সোডা ছাড়াই বানিয়ে ফেলল ‘ইনফিউশন বেভারেজ’। বেল, গোলাপ আর কেওড়া জল দিয়ে বানানো হল নতুন এই পানীয়।
কিন্তু কেমন হল বেল-গোলাপের এই যুগলবন্দি? পরীক্ষা দিতে গেল ‘ইনফিউশন বেভারেজ’। ছোট শিল্পের একটি প্রতিযোগিতায় যোগও দিল। কিন্তু প্রথম পরীক্ষাতেই ডাহা ফেল। তাদের প্রেজেন্টেশন না-পসন্দ বিচারকদের। কোনওরকমে ওই মঞ্চ থেকেই ১৫০ বোতল পানীয়ের অর্ডার জোগাড় করল তারা। এর পরেই বাজিমাৎ। প্রথম আত্মপ্রকাশেই বাজারে তুমুল হিট। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি ‘ইনফিউশন বেভারেজকে’।
শুরুটা ভাল ভাবে হলেও গোলটা বাধল এর পরেই। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে মৃগাঙ্ক জানায়, অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় অনেকেই তাদের পাত্তা দিত না। শুধু তাই নয়, এই একই কারণে লাইসেন্স পেতেও সমস্যা হচ্ছিল তাদের। যদিও শেষ পর্যন্ত বাবা-মায়ের অপরিসীম সহযোগিতায় সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠে তারা। খাদ্য দফতর এবং খাদ্য সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার তরফ থেকেও মেলে অনুমতি।
এর পরেই আইআইটি কানপুর এবং আইআইএম ইন্দোরেও ‘ইনফিউশন বেভারেজ’ নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেয় তিন খুদে ব্যবসায়ী। সেখানে ব্যাপক ভাবে সমাদৃত হয় তাদের অভিনব আইডিয়া। এর পরেই মালব্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির তরফে ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য তিন কোটি টাকা সাহায্য পায় তিন বন্ধু!
এ বার নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy