Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
NationaL news

আইনমন্ত্রীর সামনেই প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ প্রধান বিচারপতির

লাল কেল্লার বক্তৃতার পর সব প্রধানমন্ত্রীকেই কম-বেশি বিরোধীদের সমালোচনা শুনতে হয়। কিন্তু আজ নরেন্দ্র মোদীকে সবথেকে ধারালো ভাষায় আক্রমণ শাণালেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ১৯:২৬
Share: Save:

লাল কেল্লার বক্তৃতার পর সব প্রধানমন্ত্রীকেই কম-বেশি বিরোধীদের সমালোচনা শুনতে হয়। কিন্তু আজ নরেন্দ্র মোদীকে সবথেকে ধারালো ভাষায় আক্রমণ শাণালেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর।

বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মোদী সরকারের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সংঘাত চলছিলই। নরেন্দ্র মোদী নিজে বিচারবিভাগের সঙ্গে সেই সংঘাত মিটিয়ে নিতে চাইছেন বলে সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লায় বক্তৃতায় তার কোনও উল্লেখ করলেন না কেন, আজ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি।

লাল কেল্লায় মোদীর বক্তৃতার পরই সুপ্রিম কোর্টে পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে হাজির ছিলেন আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও। তিনিও বক্তৃতা দেন। তার পর রবিশঙ্করের সামনেই শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে বিচারপতি ঠাকুর বলেন, ‘‘সকালে দেড় ঘণ্টা ধরে আমাদের শ্রদ্ধেয়, জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনলাম। আশা করেছিলাম, বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কিছু উল্লেখ থাকবে, বিচারপতিদের নিয়োগ নিয়ে উনি মুখ খুলবেন। এখন আইনমন্ত্রীর কথাও শুনলাম। মামলা জমে উঠছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতি নেই। কিন্তু দুঃখের কথা হল, কেউই এ বিষয়ে চিন্তিত নন।’’

গত শুক্রবারই বিচারপতি নিয়োগের ফাইল আটকে রাখার জন্য মোদী সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। কিন্তু তা ছিল আদালতের এজলাসে। আজ একেবারে প্রকাশ্য সভায় প্রধানমন্ত্রীকে, তাঁর আইনমন্ত্রীর সামনেই আক্রমণ করেছেন বিচারপতি ঠাকুর। বলেছেন, সরকার অনড় থাকলে বিচারপতিরাও দুর্বল নন। মোদী সরকারের মন্ত্রী থেকে শীর্ষ আইনজীবীরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক অতীতে এমন শ্লেষাত্মক ভাষায় কোনও বিচারপতিকে সরাসরি আক্রমণ করেননি। এর ফলাফল, পাল্টা আক্রমণ বা অবসরের পরে আর কোনও সরকারি পদ না পাওয়া নিয়ে যে তিনি চিন্তিত নন, তা-ও সোজাসুজি জানিয়ে ঠাকুর বলেন, ‘‘সত্যি কথাটা আমি দ্বিধাহীন হয়ে বলছি। আমি কেরিয়ারের চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছি। জীবনে আর কিছু আশা করি না।’’

আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে তীব্র আক্রমণ মোদীর, বালুচিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত

সুপ্রিমকোর্ট মোদী সরকারের বিচারপতি নিয়োগ কমিশন আইন খারিজ করে দেওয়ার পর থেকেই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সরকার বনাম শীর্ষ আদালতের পাঁচ প্রবীণতম বিচারপতিকে নিয়ে তৈরি কলেজিয়ামের পাঞ্জার লড়াই চলছে। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠিক না হওয়া পর্যন্ত পুরনো পদ্ধতিতে নিয়োগ চলবে বলে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার শীর্ষ আদালত প্রশ্ন তোলে, ফেব্রুয়ারি থেকে কেন্দ্রের কাছে ৭৫ জনের নাম পাঠানো হলেও তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ২৪টি হাইকোর্টে ৪৭৮টি বিচারপতির পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টগুলিতে ৩৯ লক্ষের বেশি মামলা ঝুলে রয়েছে। আজ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘ব্রিটিশ জমানায় দশ বছরে কোনও মামলার রায় আসত। কিন্তু এখন বিচারপতির অভাবে একশো বছরও যথেষ্ট নয়।’’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সুপ্রিম কোর্টের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি ও সলিসিটর জেনারেল রঞ্জিত কুমার, দু’জনেই গরহাজির ছিলেন। আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘বিচারবিভাগের স্বাধীনতায় আমরা সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ। নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। পাশাপাশি নিয়োগের কাজও চলছে। সরকার ও শীর্ষ আদালতের কলেজিয়ামকে এক সুরে কাজ করতে হবে।’’ কিন্তু শুধু কথায় যে আর কাজ হচ্ছে না, তা বুঝিয়ে দিয়ে বিচারপতি ঠাকুর বলেন, ‘‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে একটা কথাই বলতে চাই। আপনি দারিদ্র দূর করুন, কর্মসংস্থান তৈরি করুন, সড়ক, স্কুল, হাসপাতাল তৈরি করুন। কিন্তু মানুষকে বিচার দেওয়া নিয়েও কিছু বলুন।’’ উর্দুতে কবিতা আউরে ঠাকুর বলেন, ‘গুল ফেঁকে অউরো পর, সমর ভি, এ আব্র-এ-করম, এ-বেহর-এ-সখা, কুছ তো ইধার ভি’। যার অর্থ, তুমি অন্যকে ফুল-ফল দিচ্ছ, কিন্তু হে বদান্যতার ঘনঘটা, বন্ধুত্বের ঢেউ, এ দিকেও একটু তাকাও!

অন্য বিষয়গুলি:

TS Thakur Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE