কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি— ভারতে সাংবাদিকতার আড়ালে তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামার বিরুদ্ধে চক্রান্তে যুক্ত ছিলেন চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার তিন কর্মী। গত ছ’মাস তাদের উপর নজর রেখে এই তথ্য জমা দেয় গোয়েন্দা বিভাগ। তার পরই তাঁদের ভিসা নবীকরণ না-করে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিনহুয়া কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে জানানোও হয়েছে। সরকারি সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, সিনহুয়ার মুম্বই এবং দিল্লিতে নিযুক্ত তিন কর্মী— শি ইয়ংগাং, উ কিয়াং এবং তাং লি নাম ভাঁড়িয়ে মাঝে মধ্যেই কর্নাটকের দুই মফস্সল শহর বায়লাকুপ্পা এবং মুনগড়ে একটি বিশেষ তিব্বতি শাখার প্রতিনিধিদের কাছে যেতেন। দরজে সুগদেন নামে এই তিব্বতি সম্প্রদায় দলাই লামার বিরোধী হিসেবে পরিচিত। দলাই যখন যেখানে গিয়েছেন, এই সুগদেন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়েছে। কিছু দিন আগে সুগদেনের বিষয়ে চিনের সরকারি অফিসারদের কাছে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির একটি গোপন নির্দেশিকা ফাঁস হয়ে যায়। তাতে বলা হয়েছিল, ‘দলাই লামার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট এই সুগদেন’। জানাজানি হয়ে যায় যে এই গোষ্ঠীটির পিছনে বেজিং শুধু অর্থ ঢালে তাই-ই নয়, তাদের পরিচালনাও করে। অনুমান করা হচ্ছে যে ভারতে দলাইয়ের বিরোধিতা বাড়াতে বেজিং এবং সুগদেনের ভিতর বিভিন্ন বার্তা চালাচালি করতেন সিনহুয়ার সাংবাদিকরা।
বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, সাংবাদিকদের গতিবিধি নিয়ে অসন্তোষের বিষয়টি বেজিংকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল এপ্রিল মাসেই। কিন্তু তাতে বিশেষ হেলদোল দেখা যায়নি চিন সরকার অথবা এই সাংবাদিকদের মধ্যে। উল্টে তিন দিন আগে চিনের গ্লোবাল টাইমস, ভারতের এই পদক্ষেপের প্রবল সমালোচনা করে পাল্টা তোপ দেগেছে। গ্লোবাল টাইমস-এর সম্পাদকীয়তে কার্যত হুমকি গিয়ে বলা হয়েছে, ভারতকেও এ বার বুঝিয়ে দেওয়া হবে যে চিনের ভিসা পাওয়া সহজ নয়। বলা হয়েছে— বেজিং এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি।
নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে অবশ্য বেজিংয়ের এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নর্থ ব্লকের এক কর্তার বক্তব্য, দরজি সুগদেন সম্প্রদায়ের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত বায়লাকুপ্পায় ‘সেরপোম মোনাস্টিক ইউনিভার্সিটি’ এবং মুনগড়ে ‘শার গার্ডেন মনাস্টেরি’। তিনি বলেন, ‘‘ওই সাংবাদিকদের বেনামে বার বার এই দুই জায়গায় যেতে দেখা গিয়েছে। বেজিংয়ের সঙ্গে সুগদেন সম্প্রদায়ের মধ্যে যোগাযোগের কাজ করতেন ওই চিনা সাংবাদিকরা— যা বরদাস্ত করা সম্ভব নয়।’’
তবে কারণ যাই হোক, বিদেশ মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত যে চিনের ভিসা-নীতিকে আরও কঠোর করে তুলবে সন্দেহ নেই। বেজিংয়ে শুধু ভারতীয় সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধিরাই নন, চিনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও অনেক ভারতীয় কাজ করেন।
তাদের জন্য চিনা কর্তৃপক্ষ কোনও পাল্টা নির্দেশিকা দেয় কি না, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy