বিতর্কিত ডোকলাম অঞ্চলের অদূরেই ফের একাধিক রাস্তা চওড়া করার কাজ করছে চিন। প্রতীকী ছবি।
ডোকলাম সঙ্কট কি ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে? চিনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্নটি উঠছে। কারণ, স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা গিয়েছে, বিতর্কিত ডোকলাম অঞ্চলের অদূরেই ফের একাধিক রাস্তা চওড়া করার কাজ করছে চিন। এবং গত দু’মাস ধরে ওই কাজ চলছে। তবে, এ নিয়ে ভারতের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
এনডিটিভি-র একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দিন পাঁচেক আগে ওই স্যাটেলাইট ছবিগুলি তোলা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, যে রাস্তাগুলি চওড়া করার কাজ করছে চিন তার মধ্যে একটি রাস্তা রয়েছে পূর্ব সিকিমের কাছে ডোকলাম থেকে মাত্র সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে। ডোকলায় ভারতীয় সেনা চৌকির থেকে যার দূরত্ব খুব বেশি নয়। ওই রাস্তাটি প্রায় এক কিলোমিটার বাড়ানো হয়েছে। অন্য একটি রাস্তা রয়েছে ডোকলামের পূর্বে সাড়ে ৭ কিলোমিটার দূরে। ১.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রাস্তাটি এগিয়ে গিয়েছে ডোকলামের উত্তরাঞ্চলের দিকে। এর আগে অক্টোবরেই সিনচে পাসের কাছে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা গড়ার কাজ করেছিল চিন।
গত ১৩ মাসের স্যাটেলাইট ছবিগুলি খতিয়ে দেখা গিয়েছে, মাস দুয়েক ধরেই ডোকলামের অদূরে এ ভাবে রাস্তা চওড়া করার কাজ করে চলেছে চিন। ওই ছবিগুলি থেকে জানা গিয়েছে, এ বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারির পরে ওই কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত দু’টি রাস্তা চওড়া করা হয়েছে ১৭ অক্টোবর থেকে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে।
আরও পড়ুন
নেশাও করেন, মাদকও বেচেন এই কৃতী পড়ুয়ারা!
মাস দুয়েক ধরেই ডোকলামের অদূরে এ ভাবে রাস্তা চওড়া করার কাজ করে চলেছে চিন। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
ভারত, চিন ও ভুটান সীমান্তে ডোকলাম মালভূমিকে নিজের দেশের অংশ বলে মনে করে ভুটান। ভুটানের এই দাবিকে মেনেও নিয়েছে ভারত। অথচ চিনের দাবি, ডোকলাম মালভূমি তাদের দেশের অংশ। চলতি বছরের জুনে ওই অঞ্চলে রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করে চিন। তাতে আপত্তি জানায় ভারত। সিকিম পেরিয়ে শিলিগুড়ি করিডর বা চিকেন’স নেক-এর কাছে ডোকলামে পৌঁছে যায় ভারতীয় সেনা। অপর দিকে হাজির হন চিনা সেনারাও। এ ভাবে প্রায় আড়াই মাস ধরে ডোকলামে মুখোমুখি হয় ভারত ও চিনের সেনা। ১৯৬২-এর ভারত-চিন যুদ্ধের পর সেই প্রথম এ ভাবে পরস্পরের মুখোমুখি হয় দু’দেশের সেনাবাহিনী। এরই পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে শুরু হয় দাবি-পাল্টা দাবির লড়াই। এর পর চলতি বছরের অগস্টের শেষে ব্রিকস সম্মেলনের আগে ওই অচলাবস্থা কাটে। দু’দেশের শীর্ষ নেতৃত্বই ডোকলাম থেকে সেনা সরাতে রাজি হয়। একে কূটনৈতিক স্তরে সাফল্য হিসেবেই দেখা হয়। সীমান্ত নিয়ে বোঝাপড়ার জন্য আলোচনাই সেরা উপায় মেনে নেয় দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র।
ডোকলামের অদূরে চিনের এই কর্মকাণ্ডের মাঝেই সে দেশের বিদেশমন্ত্রীর একটি মন্তব্যে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হতে শুরু করেছে। চলতি মাসেই নয়াদিল্লিতে ভারত, রাশিয়া ও চিনের বিদেশমন্ত্রী স্তরের বৈঠক শুরু হয়েছে। তাতে যোগ দিতে এ দেশে এসেছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। গত সোমবার বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে একটি বৈঠকও করেন তিনি।
আরও পড়ুন
কয়লা কেলেঙ্কারিতে দোষী ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী
থমকে উন্নয়নের রথ, জবাব দিতে চায় মুসলিম মহল্লা
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, সেই বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন জোয়ার আসবে বলেই মনে করছে ভারত। তবে মঙ্গলবার ওয়াং ই সে আশায় খানিকটা জল ঢেলে দিয়েছেন। ওয়াংয়ের মতে, ডোকলাম-কাণ্ডের ফলে দু’দেশের সম্পর্কে ‘গুরুতর চাপ’ সৃষ্টি হয়েছে। এমনকী, গত এক বছরে পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রচেষ্টাতেও তা ‘খুব একটা সন্তোষজনক’ নয়। ওয়াং ই-র কথায়: “কূটনৈতিক দৌত্যের মাধ্যমে শেষমেশ বিষয়টি ( ডোকলাম সঙ্কট) শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটেছে। এতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই গাঢ় হবে। যদিও এর থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি এবং তা এড়িয়ে চলাই উচিত।” ওয়াংয়ের এই মন্তব্যকে হুঁশিয়ারি হিসেবেই দেখছে ওয়াকিবহাল মহল।
চিনের বিদেশমন্ত্রীর মন্তব্য ছাড়াও আরও একটি বিষয়ে দুশ্চিন্তার কারণ রয়েছে ভারতের। সংবাদ সংস্থা সূত্রে, এই প্রথম ডোকলাম অঞ্চলে গোটা শীতকাল ধরে প্রায় এক হাজার সেনা মোতায়েন করে রাখবে চিন। যদিও ডোকলামের অদূরেই সিকিমে অসংখ্য সেনা চৌকিতে কড়া নজরদারিতে রয়েছে ভারতীয় সেনাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy