দুর্যোগের মেঘ কাটছে। বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত চেন্নাই এ বার আস্তে আস্তে ছন্দে ফিরছে। শহরের বড় একটা অংশ থেকে জল নামতে শুরু করেছে। শুকিয়েছে বিমানবন্দরের রানওয়ে। আগামিকাল ভোর থেকে অন্তর্দেশীয় উড়ানে সবুজ সঙ্কেতও মিলেছে। রেলের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, রবিবার ছাড়বে হাওড়া-চেন্নাই মেল এবং হাওড়া-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেসও। তবে শহরের দক্ষিণের কয়েকটি এলাকা এখনও জলমগ্ন। সেখানে জোরকদমে চলেছে উদ্ধারকাজ, ত্রাণ বিলি।
চেন্নাইয়ের পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও আজ নতুন করে আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে পুদুচেরিতে। গত কাল কিছুটা স্বস্তি দিলেও আজ অবিরাম বৃষ্টি শুরু হয়েছে সেখানে। হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯.১ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে পুদুচেরিতে। ৬০ সেন্টিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে সপ্তাহে। গৃহবন্দি বহু মানুষ। বন্ধ দোকান বাজারও।
প্রশাসন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও আজও কিন্তু চেন্নাই শহরে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি পেট্রোল পাম্প এবং এটিএম খোলা ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই, দিনভর সেখানে ছিল লম্বা লাইন। তামিলনাড়ু সরকার জানিয়েছে, দিন দু’য়েকের মধ্যেই পেট্রোল পাম্পগুলি স্বাভাবিক পরিষেবা দিতে শুরু করবে। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের অবশ্য দাবি, চেন্নাই শহর বা শহরতলিতে তেলের অভাব নেই। জলের হাত থেকে বাঁচতেই বেশির ভাগ পাম্প বন্ধ রয়েছে। রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, রবিবার হওয়া সত্ত্বেও কালই খুলে যাবে সব ব্যাঙ্ক। পাশাপাশি, বেসরকারি একটি ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, চেন্নাইবাসী যে গ্রাহকেরা ইএমআই দিতে পারেননি, তাঁদের জরিমানা মকুব করা হবে। তবে এত দিন জলমগ্ন থাকায় শহরের বেশিরভাগ গুদাম ও দোকানপাট ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শাক-সব্জি থেকে খাবার— সবই বিকোচ্ছে চড়া দামে।
কোথায় কতটা নামল জল। জরিপ করছে উপকূলরক্ষী বাহিনীর হেলিকপ্টার। শনিবার চেন্নাইয়ে এপি-র ছবি।

এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, রানওয়ে পরিষ্কার হলেও চেন্নাই বিমানবন্দরের বেসমেন্ট এখনও জলমগ্ন। ফলে যন্ত্রপাতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণের পর কাল সকালেই উড়তে শুরু করবে অন্তর্দেশীয় বিমান। তবে আগামিকাল শুধু দিনেই বিমান উড়বে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কাল বৈঠকে বসবেন এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ। এখনই চেন্নাই থেকে রাতে বিমান ওড়ানো সম্ভব কি না, সিদ্ধান্ত হতে পারে ওই বৈঠকেই।
আজ চেন্নাইয়ের টেলিফোন, বিদ্যুতের পাশাপাশি ট্রেন এবং সড়ক পরিবহণ পরিষেবাও আংশিক ভাবে চালু হয়েছে। শহরে আটক মানুষজনের কথা মাথায় রেখে আজ বিশেষ কিছু রুটে বিশেষ কয়েকটি ট্রেন চালানোর কথা ঘোষণা করেছে রেল মন্ত্রক। চেন্নাই থেকে মাদুরাই, ত্রিচি, তিরুচেন্দুর, কাড়াইকাল, তিরুনেলভেলিগামী ওই বিশেষ ট্রেনগুলি চলছে আজ থেকেই।
তামিলনাড়ু প্রশাসন জানিয়েছে, চেন্নাইয়ের দক্ষিণের কয়েকটি এলাকা এখনও বিপন্মুক্ত নয়। কোত্তুরপুরম, মুদিচুর এবং পল্লিককারনাই এখনও জলের তলায়। সেখানকার বহুতলগুলিতে আশ্রয় নেওয়া গৃহবন্দি মানুষজনের কাছে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বিলি করা হচ্ছে জল আর খাবারের প্যাকেট। জল নামাতে পাম্পিং স্টেশনগুলিতেও শুরু হয়েছে বাড়তি তৎপরতা।
সেনাপ্রধান জেনারেল দলবীর সিংহ আজ হেলিকপ্টারে বন্যা-বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান। তিনি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাবে সেনা। নয়াদিল্লি থেকে পাওয়া খবর অনুসারে, জলমগ্ন এলাকা থেকে আরও ২৮ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। ২৭টি ট্রাকভর্তি খাবারের প্যাকেট এবং চার লক্ষ পানীয় জলের প্যাকেট আজ পৌঁছেছে চেন্নাইয়ে। সেনা, পুলিশ, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সঙ্গে আজ চেন্নাই পরিস্থিতি নিয়ে
জরুরি বৈঠকে বসেন ক্যাবিনেট সচিব পি কে সিংহ। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিঙ্গাপুর সরকারের তরফে ৭৫ হাজার ডলার
অনুদান মিলেছে বলে আজ ঘোষণা করেছে বিদেশ মন্ত্রক।
সরকারি সূত্র বলছে, সার্বিক ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে। চেন্নাইয়ের ৯০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা সক্রিয় করা গিয়েছে। সোমবার থেকে শহর এবং শহরতলির সব পরিষেবাই স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছে প্রশাসন।