সভানেত্রী: প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার পুরুলিয়ার শিমুলিয়ায়। ছবি: সুজিত মাহাতো
ত্রিপুরা বিজয়ের পরে বিজেপি হুঙ্কার ছেড়েছে: ‘এ বার বাংলা, পারলে সামলা’।
শনিবার, ফল ঘোষণার দিনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘আগে দিল্লি সামলা, পরে ভাববি বাংলা।’’ সোমবার পুরুলিয়ার উপকণ্ঠে শিমুলিয়ায় প্রশাসনিক জনসভায় সেই সুর আরও এক ধাপ চড়িয়ে তিনি বললেন, ‘‘ওদের টার্গেট নাকি বাংলা! আর বাংলা বলে, আমাদের টার্গেট দিল্লির লালকেল্লা। চলো, দিল্লি চলো। চলো, লালকেল্লা চলো।’’
উত্তর-পূর্বে গেরুয়া বিপ্লবের পরে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি-কে রোখার তাগিদে নতুন করে নড়েচড়ে বসেছে আঞ্চলিক দলগুলি। দীর্ঘ শত্রুতার অবসান ঘটিয়ে উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির দিকে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বহুজন সমাজ পার্টি। আঞ্চলিক দলগুলির এই বিজেপি-বিরোধী জোটে তিনিও যে সামিল হতে চান, তার ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। রবিবারই তিনি ফোনে কথা বলেছেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী, টিআরএস নেতা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে। ডিএমকে নেতা এম কে স্টালিনের সঙ্গেও ফোনে কথা হয়েছে তাঁর। অন্য আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গেও নিরন্তর যোগাযোগ রাখছেন মমতা। আজ তিনি বলেন, ‘‘আমরা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্লোগানে বিশ্বাস করি। তাই আগামী দিনে বাংলা দেশ জয় করবে। তার বদলে বাংলা নিজে কিছু নেবে না। সবার পাশে দাঁড়াবে। সবাইকে নিয়ে লড়াই করবে। সবাইকে নিয়ে দেখাবে, বাংলা যা পারে, আর কেউ পারে না।’’
রাজনীতিকদের বড় অংশের মতে, মূল লক্ষ্য বিজেপি বিরোধিতা হলেও সেই জোটের নেতৃত্ব নিয়ে টানাপড়েন রয়েছে। সেই নিরিখে মমতার আজকের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। ‘বাংলা নিজে কিছু নেবে না, সবার পাশে দাঁড়াবে’— এ কথা বলে তৃণমূল নেত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি নেপথ্যে থেকেই কাজ করতে চান।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরা জুড়ে সন্ত্রাসের আবহ, লেনিনের মূর্তি ভাঙতে বুলডোজার
কিন্তু প্রস্তাবিত জোটে কংগ্রেসকে এনে আগেভাগেই রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব মেনে নিতে যে মমতা নারাজ, তা-ও বলছেন তৃণমূল নেতারা। ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, পরবর্তী সময়ে আঞ্চলিক জোটের প্রয়াস সফল হলে, রাহুল যদি তাতে যোগ দিতে চান, তাঁকে স্বাগতই জানানো হবে। বস্তুত, ত্রিপুরা ভোটের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা। রাহুল তাতে রাজি হননি। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে এ নিয়ে কংগ্রেসকে বিঁধেছেন মমতা। তৃণমূলের মতে, কংগ্রেসের লক্ষ্য বিরোধী জোটের নেতা হিসেবে রাহুলকে তুলে ধরা। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের যা প্রভাব, তাতে রাহুলকে কেন নেতা মানা হবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন তৃণমূল নেতারা।
এই পরিস্থিতিতে সংসদের চলতি অধিবেশনে কংগ্রেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগও রেখে চলছে না তৃণমূল। দু’দলের মধ্যে কক্ষ সমন্বয় নিয়েও কোনও কথা হয়নি। যদিও আজ সংসদে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, ডিএমকে-র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তৃণমূল নেতারা। কথা হয়েছে এনডিএ-র দুই শরিক টিডিপি এবং শিবসেনার সঙ্গেও। আজ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের বিশেষ মর্যাদার দাবি সংক্রান্ত আন্দোলনে তৃণমূলকে পাশে চেয়েছে টিডিপি।
পরিস্থিতি বুঝে বিরোধী নেতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। এখনও পর্যন্ত খবর, মমতা নিজে আসছেন না। তবে সুদীপবাবুকে পাঠাতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy