নজরে যখন এসেছে, তখন ওঁরা হয়তো পৌঁছেই গিয়েছেন গন্তব্যে। তার পর অধিকাংশই আর ফেরেননি।
২০১৬ সালে ওঁরা কলকাতা থেকেই গিয়েছিলেন সিরিয়া ও তার আশপাশের দেশগুলিতে। মোট ২০২৫ জন। অধিকাংশই ‘ওয়ার্ক ভিসা’ নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সেখানে তাঁরা কী করছেন? সেই উত্তরই খুঁজছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এবং গুপ্তচর বাহিনীর কর্তারা।
গোয়েন্দারা বুঝতে চেষ্টা করছেন, কলকাতা থেকে মাত্র এক বছরে ২০২৫ জন কেন সিরিয়া ও সংলগ্ন এলাকায় গেলেন? লেবানন, ইরাক, ইরান, জর্ডন, তুরস্কে হঠাৎ এমন কোন কাজের সন্ধান মিলল— যার টানে উড়ে গেলেন কলকাতার এত জন? যাঁদের মধ্যে আবার মহিলারাও রয়েছেন। তা হলে কি এঁদের মধ্যে কেউ কেউ ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি সংগঠনে নাম লেখালেন? এমন সব প্রশ্নই ধন্দে ফেলছে গোয়েন্দাদের। নজর রাখা হচ্ছে ওই সব দেশে যাওয়া মানুষদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও।
সিরিয়ার বিদেশমন্ত্রী ওয়ালিদ আল মোয়ালিম গত বছর নয়াদিল্লি এসে জানিয়েছিলেন, আইএস জঙ্গিদের দলে নাম লিখিয়েছেন অন্তত ২৭ জন ভারতীয়। তাঁদের মধ্যে ছ’জন সেনার সঙ্গে লড়াইয়ে মারা গিয়েছেন। চার জনকে গ্রেফতার করে দামাস্কাস জেলে বন্দি রাখা হয়েছে। বাকিরা রয়েছেন জঙ্গি দলেই।
আরও পড়ুন: বিজেপির নতুন ডাক ‘বিরোধী-মুক্ত’ ভারত
গত ৫ এপ্রিল সংসদে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন, মৌলবাদে প্রভাবিত হয়ে ৫০ জন ভারতীয় দেশ ছেড়েছেন। তবে কোন কোন দেশে কত জন গিয়েছেন, সে সম্পর্কে কিছু ভেঙে বলেননি তিনি।
ভারতের গুপ্তচর সংস্থার হিসেব অবশ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত সিরিয়ায় যাওয়া ভারতীয় মুসলিমদের সংখ্যা খুব কম। মেরেকেটে নব্বই জনও হবে না। সেই তুলনায় ব্রিটেন ও মলদ্বীপ থেকে আইএসে যোগদানের সংখ্যাটা অনেক বেশি।
তবে চিন্তা থাকছেই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অন্য একটি সূত্রের দাবি, কেরলের কাসারগড়, পলক্কড়ের মতো জেলা থেকে ২২ জন মুসলিম যুবক সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। হায়দরাবাদ, পুণে থেকেও কেউ কেউ গিয়েছেন সিরিয়ায়। আর পশ্চিমবঙ্গে তো একাধিক সন্দেহভাজন জঙ্গি ধরা পড়েছে। আইএস যোগের অভিযোগে ধনেখালির ১৯ বছরের যুবক আশিক এবং লাভপুরের মুসাকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। এই প্রেক্ষিতেই গোয়েন্দা কর্তাদের একাংশ বলছেন, হঠাৎ করে কলকাতা থেকে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে যাওয়ার প্রবণতা মোটেই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কলকাতা থেকে সিরিয়া বা তুরস্কের সরাসরি উড়ান নেই। অথচ ওই কলকাতাবাসীদের ভিসায় গন্তব্য হিসেবে ওই দেশগুলিরই নাম ছিল।
গোয়েন্দাদের একটি অংশ বলছেন, তুরস্ক, জর্ডন, সৌদি আরবে কলকাতা থেকে পর্যটকেরা যান। সৌদি আরবে গত বছরে গিয়েছেন ৪৩ হাজার ৩২৭ জন ভারতীয়। এঁদের বেশির ভাগই যান হজ করতে। তবে এখন জর্ডন বা তুরস্কে পর্যটক ভিসা নিয়ে গেলেও কাউকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখা হচ্ছে না। কারণ দেখা গিয়েছে, আইএসে যারা যোগ দিতে যাচ্ছে তারা প্রথমে ওই দুই দেশেই মূলত পৌঁছচ্ছে। সেখান থেকেই যাচ্ছে সিরিয়ায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy