Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে ডোভাল কি ডোবালেন

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের দ্রুত অবনতির বিষয় তো রয়েছেই। কিন্তু রাজনৈতিক সূত্রের মতে, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মলদ্বীপের মতো অপেক্ষাকৃত ছোট দেশগুলির সঙ্গেও সম্পর্কের জটিলতা বেড়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৯
Share: Save:

প্রতিবেশী রাষ্ট্রপ্রধানদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির করিয়ে ইনিংস শুরু করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বার্তা ছিল, এবার সুসম্পর্কের ঢল বইবে প্রতিবেশী কূটনীতিতে।

কিন্তু সরকারের সাড়ে তিনবছর কেটে যাওয়ার পর মুখ থুবড়ে পড়ছে সেই প্রতিবেশী-নীতি। মলদ্বীপের সাম্প্রতিক অশান্তিতে তা আবার স্পষ্ট।

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের দ্রুত অবনতির বিষয় তো রয়েছেই। কিন্তু রাজনৈতিক সূত্রের মতে, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মলদ্বীপের মতো অপেক্ষাকৃত ছোট দেশগুলির সঙ্গেও সম্পর্কের জটিলতা বেড়ে গিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, একটি দেশের সঙ্গে জটিলতা কাটার আগেই অন্য সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এই দেশগুলির সঙ্গে ভারতের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক দীর্ঘদিন অটুট তো ছিলই, দ্বিপাক্ষিক কার্যকরী সম্পর্কও ছিল মসৃণ।

সূত্রের খবর, সরকারের একটি অংশের মধ্যে থেকেই তর্জনী উঠেছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের দিকে। ডোকলাম-কাণ্ডে ভুটানের আস্থা অর্জন না করেই চিনের সঙ্গে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে চলছিলেন ডোভাল। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করকে নির্দেশ দেন হাল ধরার জন্য। জয়শঙ্করের ঘনিষ্ঠ শিবির জানাচ্ছে, ভুটানের সঙ্গে ভারতের অর্থপূর্ণ আলোচনার অভাব ছিল। সেই সুযোগে বেজিং থিম্পুর শীর্ষ প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে তাদের কাছে টানে। সেই সময় উত্তেজনা না কমিয়ে আরও আগ্রাসী মনোভাব দেখানো হলে চিন ছেড়ে কথা বলতো না। কট্টরবাদী ডোভাল মনে করেছিলেন, পেশিশক্তি প্রদর্শনের নীতিতে চিনকে সমঝে দেওয়া যাবে। আর জয়শঙ্করের বক্তব্য ছিল, চিনকে এভাবে সোজাসাপ্টা বিচার করা ‘কূটনৈতিক মূর্খামি’। সার্বভৌম রাষ্ট্র ভুটানকে নিজেদের উপনিবেশ ভেবে একতরফা সেনা পাঠিয়ে পরিস্থিতি অহেতুক জটিল করে তোলা হয়েছিল। জয়শঙ্কর শিবিরের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে তবুও সময়বিশেষে ‘জেমস বন্ড’ মনোভাব নেওয়া চলতে পারে। কিন্তু একই দাওয়াই চিনের ক্ষেত্রে নিলে অনেক বেশি মূল্য দিতে হবে।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, ডোকলাম কাণ্ডের জের কাটতে না কাটতেই রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়েও কার্যত ল্যাজে গোবরে হয়েছে সরকার। সন্ত্রাস প্রশ্নে ভারতকে সবরকম সাহায্য করা বাংলাদেশের হাসিনা সরকার যখন জানিয়েছে, তারা শরণার্থী সমস্যায় জর্জরিত, তখনও চিনের কথা মাথায় রেখে মায়ানমারকে বিব্রত না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সেই ফাঁকে চিন একইসঙ্গে মায়ানমার এবং বাংলাদেশকে খুশি করে ত্রিস্তরীয় সমাধানসূত্র ঘোষণা করে। এখন বেগতিক দেখে জাপানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে উঠে পড়ে লেগেছে নয়াদিল্লি।

সম্প্রতি নেপাল-পরিস্থিতি সামলাতে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে কাঠমান্ডু পাঠানো হল ঠিকই। কিন্তু সাউথ ব্লকই নিশ্চিত নয়, তাতে কতটা চিঁড়ে ভিজবে। নয়াদিল্লির দুর্বল কূটনীতির কারণে সে দেশে ভারত-বিরোধী মনোভাব তীব্রতর হচ্ছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল শিবির। ২০১৫ সাল থেকে নেপালে মদেশীয় বিক্ষোভকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে গিয়ে যে নেপাল সরকারের সঙ্গে কার্যত যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল মোদী সরকার, সেই সরকারের প্রধান কে পি ওলি আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। যাঁর চিন-ঘনিষ্ঠতা সুবিদিত হওয়া সত্ত্বেও গোড়ায় তাঁকে আমল দেওয়া হয়নি। এখন ক্ষত মেরামতির চেষ্টা কতটা সফল হবে, সে ব্যাপারেও সন্দিহান কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE