Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
মোদীকে নিয়ে প্রচার

কাঁধে রাইফেল হাতে ঝাড়ু, নয়া অবতার

ডান কাঁধে বেরেটা রাইফেল, বাঁ হাতে ঝাড়ু। ২ অক্টোবর, স্বচ্ছতা দিবসে নরেন্দ্র মোদীর এই কার্টুনকেই প্রচারে নিয়ে এসেছে বিজেপি। বলা হচ্ছে, এটাই হল নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৫০
Share: Save:

ডান কাঁধে বেরেটা রাইফেল, বাঁ হাতে ঝাড়ু।

২ অক্টোবর, স্বচ্ছতা দিবসে নরেন্দ্র মোদীর এই কার্টুনকেই প্রচারে নিয়ে এসেছে বিজেপি। বলা হচ্ছে, এটাই হল নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’। জঞ্জাল আর জঙ্গি— দুটোই সাফ করার ক্ষমতা যিনি রাখেন, তিনি নরেন্দ্র মোদী। এক বার সেনা অভিযানের পর সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে মোদী নিজে অবশ্য এখন শান্তির পায়রা ওড়াতে চাইছেন। ভারত যে যুদ্ধবাজ নয়, তা বোঝাতে চাইছেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ভোটে জিততে হলে মোদীর ব্যক্তিত্বকেই যে তুলে ধরতে হবে, তা ভাল ভাবেই বুঝছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। সেনা অভিযানের পরে জাত-পাত-ধর্মে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা উত্তরপ্রদেশে দলের রক্তক্ষরণ আটকানো গিয়েছে ঠিকই, তবে প্রত্যাশামাফিক জাতীয়তাবাদের ঝড় ওঠেনি— এটাই এখন ভাবাচ্ছে বিজেপিকে। তাই প্রধানমন্ত্রী যতই সুর নরম করুন, যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব জিইয়ে রেখেই ভোটের ময়দানে নামতে চান অমিত শাহরা। রাজ্য নেতৃত্বকে তাই মোদীর সেনা অভিযানের সাফল্য-গাথা বেশি করে প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিজেপির এক নেতার কথায়, উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি বা কংগ্রেস— সকলেরই এক-একজন মুখ রয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে গ্রহণযোগ্য মুখ নেই শুধু বিজেপিতে। উত্তরপ্রদেশে এখনও বিজেপির মুখ নরেন্দ্র মোদীই। লোকসভা নির্বাচনে মোদীকে সামনে রেখেই বিজেপি এ রাজ্যে আশির মধ্যে সত্তরের বেশি আসন ঝুলিতে পুড়েছে। জাত-ধর্মের উপরে উঠে উন্নয়নের নামে হিন্দু ভোটকে একজোট করতে পেরেছিলেন মোদী। এ বারও সেই অঙ্কে এগোচ্ছিলেন অমিত শাহ। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরেই দলিত-সংখ্যালঘু নিগ্রহের ঘটনাগুলি গুলিয়ে দিয়েছে বিজেপির ভোট-অঙ্ক। দল মনে করছে, এই পরিস্থিতিতে সেনা অভিযানের ঘটনা বড় সুযোগ এনে দিয়েছে বিজেপির সামনে। একে সামনে রেখে জাতীয়তাবাদের হাওয়ায় সমাজের সকলকে একজোট করা সম্ভব। কিন্তু গোবলয়ের এই রাজ্যে এই মুহূর্তে জাত-পাত এমন ভাবে শিকড় ছড়িয়েছে যে জাতীয়তাবাদের আবেগ ততটা মাথাচাড়া দিতে পারছে না।

সে কারণেই সেনা অভিযান নিয়ে প্রচারকে চড়া মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অমিত শাহ। বিজেপির ‘ওয়ার রুম’-এর এক নেতা আজ বলেন, জাতীয়তাবাদের আবেগ সবার মধ্যেই কাজ করে। সংখ্যালঘুরাও এতে সামিল হন। সংখ্যালঘুরা যাতে বিজেপির বিরুদ্ধে না যায়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করছেন। ক’দিন ধরেই তাঁদের কাছে টানার বার্তা দিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা পঞ্চায়েত শুরু করেছেন। তবে এর পরও বিজেপি চাইছে, সংখ্যালঘু ভোট না মিললেও তা যেন একজোট হয়ে বিরুদ্ধে না যায়। উত্তরপ্রদেশে দলিত ভোট মায়াবতীর কাছে। যাদব ভোট মুলায়মের ঝুলিতে। কংগ্রেস শীলা দীক্ষিতকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণ ভোট টানতে চাইলেও তাঁরা ঝুঁকে বিজেপির দিকেই। বিজেপি নেতাটির মতে, জাত-পাতের জালের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভোটের সাফল্যের জন্য প্রয়োজন সব ধর্ম-বর্গের সমর্থন। সেনা অভিযানের ঘটনায় জাতীয়তাবাদের আবেগ সেই কাজটা করে দিতে পারে। সে জন্য পাকিস্তানকে সামরিক জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যিনি, সেই নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতাকে তুলে ধরা সব থেকে জরুরি। বিজেপি নেতা শিবরাজ সিংহ চৌহানের কথা সেই ভাবনাকেই তুলে ধরছে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত বুঝিয়ে দিয়েছে, ৫৬ নয়— মোদীর ছাতির মাপ আসলে ১০০ ইঞ্চি।’’

বিজেপির চাল বুঝতে পেরেই ফোঁস করতে শুরু করেছেন মায়াবতী। কোনও বিরোধী দলের পক্ষেই সেনা অভিযানের বিরোধিতা করা সম্ভব হয়নি। খোদ রাহুল গাঁধীকেও মোদীর তারিফ করতে হয়েছে। কিন্তু মায়াবতী এখন বিজেপি সভাপতির সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সেনা অভিযানকে সামনে রেখে অমিত শাহ যে ভারত উদয়ের নয়া স্লোগান দিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন, এটা কাম্য নয়।’’ অমিত শাহ তাতে দমছেন, এমন নয়। তিনি বরং আজ ফের বিবৃতি দিয়ে নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। কালো টাকা উদ্ধারে মোদী কথা রেখেছেন ও এই টাকা দিয়ে গ্রামের উন্নয়ন হবে, তা হলেই ভারত-উদয় হবে— এ সব কথা বলে ‘ব্র্যান্ড মোদী’তে শান দিতে চাইছেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Cartoon Swachh Diwas BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy