রোহিত নিবেদিতা ভাসিনের প্যাশনই ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর ছেলেমেয়েদের মধ্যে। ছবি: পিটিআই।
আর পাঁচটা বাচ্চার মতো স্কুল শিক্ষক বা সরকারি চাকুরে নয়। ছোটবেলা থেকেই আকাশে ওড়ার ইচ্ছে নিবেদিতার। মনে পড়ে, ছ’-সাত বছর বয়সেই ঠিক করে ফেলেছিল, বড় হয়ে পাইলট হবে সে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সেই স্বপ্নও বাড়তে থাকে। সেই স্বপ্নপূরণ হয় বছর কুড়িতে।
৫৪ বছরের নিবেদিতা বলেন, “সেই দিনটার কথা এখনও মনে আছে। ২৯ জুন, ১৯৮৪। বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে ছিলাম। বাবা ছুটতে ছুটতে এলেন। হাতে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার।” নিবেদিতা ভাসিন একাই এই পেশায় নন, তাঁর প্রয়াত শ্বশুর-স্বামী-ছেলে-মেয়ে— সকলেই বিমান ওড়াচ্ছেন। গত প্রায় একশো বছর ধরে এই পেশায় তাঁদের পরিবার।
আরও পড়ুন
মেলেনি ছুটি, শিশুকে পিঠে বেঁধেই কাজ করছেন বাস কন্ডাক্টর মা
তিন পুরুষ আগে শুরুটা করেছিলেন নিবেদিতার স্বামী রোহিতের বাবা ক্যাপ্টেন জয়দেব ভাসিন। ১৯৫৪-য় দেশের সাত জন পাইলটের মধ্যে প্রথম কম্যান্ডার হন তিনি। এর পর রোহিতকে বিয়ে করে ভাসিন পরিবারে আসেন নিবেদিতা জৈন। বিয়ের সময় নিবেদিতা ছিলেন দেশের প্রথম তিন জন মহিলা পাইলটদের এক জন। তাঁদের ছেলে-মেয়ে রোহন ও নিহারিকা ভাসিনও কম্যান্ডার।
আরও পড়ুন
স্বাধীনতার ট্রেনে ভগবান নেই, লাস্ট স্টপ ইন্ডিয়া
সারা বছর ধরেই আকাশে ওড়াওড়ি চলতে থাকে ভাসিন পরিবারের চার সদস্যের। মাসে মাত্র পাঁচ-ছ’দিনই একসঙ্গে কাটাতে পারেন তাঁরা। তবে তাতে খেদ নেই ভাসিনদের। নিবেদিতা ও রোহিতের ছেলেন ২৯ বছরের রোহন বলেন, “কেজি ক্লাসে ভর্তি হওয়ার সময় আমাকে ক্যাপ্টেন রোহন ভাসিন বলে পরিচয় দিয়েছিলেন বাবা-মা। সেই থেকেই এয়ারক্রাফ্টের দিতে ঝোঁক বাড়তে থাকে।” হবে না-ই বা কেন, মা নিবেদিতার উদাহরণ তো চোখের সামনেই রয়েছে। গত শতকের নয়ের দশকের গোড়া মাত্র সাতাশ বছরেই এয়ারবাস ৩০০-এর মতো বিমানের কম্যান্ডার হন নিবেদিতা। সে সময় ওটাই ছিল অন্যতম বড় আকারের বিমান। ১৯৮৫-এ আরও একটা রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। বিশ্বের প্রথম অল-উইমেন ক্র-র কো-পাইলট হিসেবে কলকাতা-শিলচর রুটে ফকার ফ্রেন্ডশিপ বিমান চালিয়েছিলেন তিনি। নিজের সংস্থায় বেশ একটা অভিনব রেকর্ড রয়েছে নিবেদিতার। পাইলট হিসেবে তাঁর সংস্থায় তিনিই প্রথম মা হন। এর পরের বছর থেকে তাঁর সংস্থায় মাতৃত্বকালীন ছুটি ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন
নিবেদিতার প্যাশনই ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর ছেলেমেয়েদের মধ্যে। রোহন এয়ার ইন্ডিয়ায় বছর দশেক ধরে কাজ করছেন। এখন তিনি বোয়িং ৭৭৭ বিমানের কম্যান্ডার। তবে তাঁর নিজের সন্তান কি বিমান ওড়াবে? জবাবে রোহন বলেন, “ভবিষ্যতে হয়তো রোবট দিয়েই বিমান ওড়ানোর কাজ চলবে।” আর কিছু দিন পরেই বিয়ে রোহনের বোন নিহারিকার। তিনি চান, আগামী দিনে তাঁর সন্তানও পাইলট হোক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy