Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National News

ফের পথের কাঁটা ভারত, কোচি বন্দরে ঢুকতে পারল না চিনের তিন রণতরী

সাংহাই থেকে রওনা হওয়ার পর চিনা নৌবহরটি প্রথমে ফিলিপিন্সে নোঙর করেছিল বলে ভারতীয় নৌসেনা সূত্রের খবর। তার পর চিনা নৌবহর পৌঁছয় মালয়েশিয়া। সেখান থেকে মায়ানমার হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে এসে নোঙর করে রণতরীগুলি।

—প্রতীকী ছবি / সংগৃহীত।

—প্রতীকী ছবি / সংগৃহীত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৭ ১৬:২৮
Share: Save:

সাংহাই থেকে রওনা হয়েছিল চিনা নৌসেনার তিন যুদ্ধজাহাজ। যখন যে দেশে নোঙর করতে চেয়েছে, তৎক্ষণাৎ অনুমতি দিয়েছে সেই দেশ। ধাক্কা খেতে হল ভারতে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দেওয়ার পর ভারতের কোচিতে ঢুকতে চেয়েছিল চিনা নৌসেনার তিন রণতরী। কিন্তু ঢুকতে দিল না ভারত। চিনের প্রস্তাব ভারত সরাসরি প্রত্যাখ্যান করল না। কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি করল নয়াদিল্লি যে চিনা রণতরী আর ঢুকতে পারল না কোচিতে। নোঙর ফেলতে হল শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে। ভারতীয় নৌসেনা সূত্রে এমনই খবর পাওয়া গিয়েছে।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ— এটিই এখন চিনের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী আন্তর্জাতিক প্রকল্প। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক আদান-প্রদান মসৃণ করতে যে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নীতি ঘোষণা করেছে চিন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সেই নীতির রূপায়ণেরই উদ্যোগ। এই উদ্যোগের অঙ্গ হিসেবেই চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের কাশগড়কে স্থলপথে সরাসরি যুক্ত করছে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তবর্তী বন্দর গ্বাদরের সঙ্গে। আবার পূর্ব চিনের সাংহাই বন্দরকে দক্ষিণ চিন সাগর, বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর, এডেন উপসাগর, সুয়েজ খাল, ভূমধ্যসাগর, জিব্রালটার প্রণালী, আটলান্টিক মহাসাগর, ইংলিশ চ্যানেল হয়ে পশ্চিম নেদারল্যান্ডসের রটারডাম বন্দরের সঙ্গে জুড়ে নেওয়ার প্রস্তাবও পেশ হয়েছে এই বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতাতেই। প্রস্তাবিত এই সুদীর্ঘ জলপথের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত প্রতীকী সফর করতেই চিনা নৌসেনার একটি ডেস্ট্রয়ার, একটি ফ্রিগেট এবং একটি সহায়ক রণতরী রওনা দিয়েছিল সাংহাই থেকে। পথে দক্ষিণ ভারতের কোচি বন্দর ছুঁয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল চিনা নৌবহরটির। কিন্তু ভারত সে পরিকল্পনা ভেস্তে দিল।

সাংহাই থেকে জিবুটি হয়ে রোটারডাম যাওয়ার জন্য যে পথের কথা ভেবেছিল চিন, ভারতের কাছে পৌঁছে সে পথ বদলে ফেলতে হল।

সাংহাই থেকে রওনা হওয়ার পর চিনা নৌবহরটি প্রথমে ফিলিপিন্সে নোঙর করেছিল বলে ভারতীয় নৌসেনা সূত্রের খবর। তার পর চিনা নৌবহর পৌঁছয় মালয়েশিয়া। সেখান থেকে মায়ানমার হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে এসে নোঙর করে রণতরীগুলি। চট্টগ্রাম থেকে কোচি যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। ভারতীয় নৌসেনার একাধিক আধিকারিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’কে জানিয়েছেন, কেরলের কোচি বন্দরে যাতে নোঙর করতে পারে চিনা নৌবহর, তার জন্য বেজিং অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোচিতে নোঙরের পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: চিনকে টক্কর দিতে নরেন্দ্র মোদীর নীল নকশা

ভারত কি চিনকে কোচিতে ঢোকার অনুমতি দেয়নি? নৌসেনা সূত্রের খবর, অনুমতি না দেওয়ার মতো অসৌজন্য নয়াদিল্লি দেখায়নি। কিন্তু অনুমতি এত দেরিতে দেওয়া হয়েছে যে ততক্ষণে চিনা নৌবহরকে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে নোঙর করার অনুমতি চেয়ে নিতে হয়েছে। চিনের তরফেও এই কথাই জানানো হয়েছে। কোচিতে ঢোকার অনুমতি দিতে ভারত ইচ্ছাকৃত দেরি করেছে এবং বুঝিয়ে দিয়েছে চিনা নৌবহরকে ভারত কোচি বন্দরে ঢুকতে দিতে চায় না— বলছে বেজিং। ভারতীয় নৌসেনার কর্তারা কিন্তু এমন কোনও ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিলম্ব’-এর কথা খোলাখুলি স্বীকার করছেন না। নৌসেনা কর্তারা বলছেন, চিনের সঙ্গে ভারতের কোনও দ্বিপাক্ষিক মিশন চলছিল এমন নয়। তেমন কোনও কর্মসূচি ছাড়াই চিনা রণতরীগুলি ভারতীয় বন্দরে ঢোকার অনুমতি চাইছিল। তাই ভারতকে প্রথা ভেঙে সেই অনুমতি দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে হয়েছে। তার জন্যই কিছুটা দেরি হয়েছে বলে নৌসেনা কর্তাদের দাবি। কিন্তু বেজিং মনে করছে, চিনা রণতরীগুলিকে কোচিতে ঢুকতে দেওয়ার ইচ্ছা ভারতের ছিল না।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের নামে আরব সাগর এবং এডেন উপসাগরে নিজেদের উপস্থিতি আগের চেয়ে বাড়িয়েছে চিন। কিন্তু ভারতীয় নৌসেনাও এখন ওই জলভাগে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। এডেন উপসাগরে সোমালি জলদস্যুদের বিরুদ্ধে ভারতীয় নৌসেনাই সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। ছবি: পিটিআই।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা বলছেন, চিনা রণতরীগুলি যে লক্ষ্য নিয়ে সাংহাই থেকে সফর শুরু করেছে, ভারত সেই লক্ষ্য পূরণের পথে চিনের সহযোগী হতে মোটেই উৎসাহী নয়। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সবচেয়ে বড় যে প্রকল্প চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডর, সেই করিডরকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গিয়ে চিন ভারতের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ছে বলে ভারত আগেই জানিয়েছিল। সেই কারণে বেজিং-এ আয়োজিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের সম্মেলনও ভারত বয়কট করেছে। তাই প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড জলপথে প্রতীকী সফর শুরু করা চিনা নৌবহরকে ভারতে নোঙর করার অনুমতি দেওয়া যে নয়াদিল্লির পক্ষে কঠিন, সে বিষয়েও সংশয় নেই বিশেষজ্ঞদের।

চিনা নৌবহর কোচিতে নোঙরের অনুমতি না পেয়ে কলম্বো চলে গিয়েছে। সেখান থেকে আরব সাগর এবং এডেন উপসাগর হয়ে জিবুটি পৌঁছনোর কথা চিনা জাহাজগুলির। জিবুটি থেকে এই নৌবহর রওনা হবে রোটারডামের পথে। নেদারল্যান্ডসের রোটারডামই আপাতত প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড জলপথের পশ্চিমতম প্রান্ত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE