পুরীর জগন্নাথ মন্দির
রথযাত্রার শেষে সেই চোখধাঁধানো সোনার গয়নায় সেজে রথেই ভক্তদের দর্শন দেন পুরীর জগন্নাথ। মন্দির থেকে বেরিয়ে রথে চড়ে তাঁর মাসির বাড়ি তথা গুণ্ডিচা মন্দিরে ঘুরে ফিরে আসার আগে ফি-বছর রথেই সম্পন্ন হয় জগন্নাথের সোনার সাজের অনুষ্ঠান। জগন্নাথের এই রূপ ‘সোনা বেশ’ বলে ভক্তমহলে সুপরিচিত। সোনার গয়নায় সেজেগুজে আরও উজ্জ্বল রূপে প্রভুকে দেখে চক্ষু সার্থক করে ভক্তকুল।
তবে শোনা যায়, জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার সব মিলিয়ে যা গয়নাগাঁটি রয়েছে, ‘সোনা বেশে’র সাজে বড়জোর তার ১০-১৫ শতাংশ লোকচক্ষুর সামনে আসে। তবু ওই বিশেষ দিনে সোনা বেশে জগন্নাথদেবকে দর্শনের মহাপুণ্যের হাতছানিতে পুরীতে জনতার ঢল বয়ে যায়। ৩৪ বছর বাদে, বুধবার দুপুরে জগন্নাথের গয়নার সেই ভাঁড়ার খতিয়ে দেখতে বিশেষ পরিদর্শক দল পুরীর মন্দিরে ঘুরে এল। ওড়িশা হাইকোর্টের নির্দেশেই ভিতরে ঢুকেছিল ১৬ জনের একটি দল। তবে মন্দিরের এই গোপন গহন প্রকোষ্ঠে ঢোকার ঝকমারি যে নেহাত কম নয় তা মালুম হয়েছে ভাল মতোই। এই সফর উপলক্ষে এ দিন দুপুরে ঘণ্টা তিনেক ভক্তদের জন্য অগম্য হয়ে ওঠে পুরীর মন্দির।
ওড়িশার সরকারি এক কর্তার কথায়, ‘‘রত্নভাণ্ডারের ভিতরে ঠিক ক’টি ঘর আছে, তা এখনও কারও কাছে স্পষ্ট নয়। সাধারণত তিনটি ঘরে বাছাই সেবায়েতদের যাতায়াত আছে।’’ এ দিন কড়া পুলিশ পাহারায় সেই ঘর খোলার সময়ে অতর্কিতে সাপের ছোবল মারার ভয়ও কাজ করছিল বিলক্ষণ। তাই সজাগ ছিল সাপ ধরতে ওস্তাদ বিশেষ তালিমপ্রাপ্ত একটি দলও। ঘুটঘুটে অন্ধকার। তাই হাতে ছিল কড়া ‘সার্চলাইট’ও। সরকারি সূত্রের খবর, বেলা আড়াইটে নাগাদ রত্নভাণ্ডারে ঢুকেছিলেন পরিদর্শকেরা। বেরিয়ে আসেন মিনিট পঁচিশ বাদেই। এই সময়ের মধ্যে গোটা রত্নভাণ্ডার ঘুরে দেখা সম্ভব নয় বলেই মন্দিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজনের অভিমত।
এমনিতে রত্নভাণ্ডারের তিনটি চাবি জগন্নাথদেবের প্রধান সেবায়েত পুরীর গজপতি মহারাজ, মন্দিরের মুখ্য প্রশাসক আইএএস-কর্তা প্রদীপ জেনার দফতর এবং পুরীর জেলা প্রশাসনের কাছে রাখা থাকে। এ দিনও প্রধানত প্রশাসকেরাই ভিতরে ঢুকেছিলেন। তবে পুরীর রাজা নিজে আসেননি। তাঁর প্রতিনিধি গিয়েছিলেন। রত্নভাণ্ডারে বাইরের পোশাক নিষিদ্ধ। রীতিমাফিক মন্দির কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা শুদ্ধ বস্ত্র ‘গামুছা’টুকু কোমরে জড়িয়েই ঢুকতে হয় বাঘা-বাঘা সরকারি কর্তা তথা পরিদর্শকদের। পুরীর পুলিশ সুপার সার্থক ষড়ঙ্গি উর্দি ছেড়ে গামুছা পরেননি। তাই ভিতরেও ঢোকেননি।
ভুবনেশ্বরের বিশিষ্ট জগন্নাথ বিশেষজ্ঞ সুরেন্দ্র মহাপাত্র আনন্দবাজারকে বলেন, দ্বাদশ শতকের মন্দিরে রাজা অনঙ্গ ভীমদেব, রাজা পুরুষোত্তম দেবের মতো রাজারা হাতির পর হাতির পিঠে বোঝাই গয়নার সোনা-হিরে-জহরতে বিগ্রহকে মুড়ে দিয়েছেন কয়েক শতক ধরে। মন্দিরের পুরনো নথিতে তার কিছু খুঁটিনাটি আছে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৫২ সালে সরকারি উদ্যোগে জগন্নাথের সম্পদের খতিয়ানের নথি রাখার উদ্যোগ শুরু হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে ১৯৮২ সালে মন্দিরে ঢুকেছিলেন পরিদর্শকেরা। তারপরে এ বার। তবে ভগবানের নামে শপথ নিয়ে রত্নভাণ্ডারে ঢুকে সাংবাদিকদের খুঁটিনাটি বলতে চাননি মুখ্য পরিদর্শক প্রদীপ জেনা। তিনি বলেন, ‘‘যা বলার হাইকোর্টকেই বলব।’’ শুধু রত্নভাণ্ডারের জরাজীর্ণ দেওয়াল, ছাদে নোনা ধরার বিষয়টি তাঁরা জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy