Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
National News

বিধানসভায় নকল ভোটযন্ত্র এনে ‘কারচুপি’ দেখাল আপ, তীব্র নিন্দায় বিজেপি

ছিল বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে বার্তা এসেছিল— সবই আসলে ষড়যন্ত্র। সত্য প্রকাশ পাবে দিল্লি বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে, এমনটাও জানিয়েছিলেন কেজরীবাল।

দিল্লি বিধানসভায় ইভিএম কারচুপি প্রমাণের চেষ্টায় গ্রেটার কৈলাসের আপ বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ। ছবি: টুইটার।

দিল্লি বিধানসভায় ইভিএম কারচুপি প্রমাণের চেষ্টায় গ্রেটার কৈলাসের আপ বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ। ছবি: টুইটার।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ১৭:৪৩
Share: Save:

ছিল বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে বার্তা এসেছিল— সবই আসলে ষড়যন্ত্র। সত্য প্রকাশ পাবে দিল্লি বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে, এমনটাও জানিয়েছিলেন কেজরীবাল। কিন্তু দিল্লি বিধানসভায় মঙ্গলবার কেজরীবালের দলের ইঞ্জিনিয়ার-বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ যা দেখানোর চেষ্টা করলেন, তার সঙ্গে কেজরীর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের কোনও সম্পর্কই নেই। একটি বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রের (ইভিএম) ডামি নিয়ে এসে দিল্লি বিধানসভায় আপ-এর এক বিধায়ক প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন, ইভিএম-এ কারচুপি করতে মাত্র ৯০ সেকেন্ড সময় লাগে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল মঙ্গলবার সকালে টুইট করে জানিয়েছিলেন, বিধানসভার যে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে, সেখানে আপ বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ খুব বড় এক ষড়যন্ত্রের পর্দাফাঁস করবেন। প্রথমে রাজনৈতিক শিবিরের ধারণা ছিল, কেজরীর বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তারই জবাব দেওয়ার চেষ্টা হবে। কিন্তু পরে স্পষ্ট হয়, ইভিএম কারচুপি ‘প্রমাণ’ করার লক্ষ্যে দিল্লির বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকেছে কেজরীবালের সরকার।

ভোটযন্ত্রের যে ডামিটি সৌরভ ভরদ্বাজ এ দিন দিল্লি বিধানসভায় দেখিয়েছেন, তাতে আম আদমি পার্টি (আপ), বিজেপি, কংগ্রেস, বসপা এবং সপার জন্য নির্দিষ্ট বোতাম ছিল। সৌরভ ভরদ্বাজ প্রথমে সেই ভোটযন্ত্রে মক পোল করান। তাতে দেখা যায়, সব ভোট ঠিক জায়গাতেই পড়ছে। তার পর তিনি যন্ত্রটি রিসেট করেন এবং ফের তাতে ভোট নেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বার ভোট নেওয়ার পর দেখা যায়, আপের বোতামে সবচেয়ে বেশি বার চাপ দেওয়া সত্ত্বেও ভোট বেশি পড়েছে বিজেপি-তে।

ডামি ইভিএম-এ কারচুপির পর ভোটের ফলাফল এই। টুইটারে এই ফল প্রকাশ করেছে আপ।

এই ফলাফল দেখিয়ে এ দিন দিল্লি বিধানসভায় আপ দাবি করেছে, ইভিএম-এ কারচুপি করেই বিজেপি জয়ী হচ্ছে। দিল্লির সদ্যসমাপ্ত যে পৌর নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয়েছে, সেই নির্বাচনের জন্য রাজস্থান থেকে ইভিএম আনা হয়েছিল। বিজেপি শাসিত রাজস্থান থেকে আসা ইভিএম-গুলিতে কারচুপি করা হয়েছিল বলে আপের অভিযোগ। বিজেপি স্বাভাবিক ভাবেই আপের এই অভিযোগের তীব্র বিরোধিতা করেছে। ইভিএম যে রাজ্য থেকেই আসুক, তা যে রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, ইভিএম যে নির্বাচন কমিশনের জিম্মায় থাকে, সে কথা বিজেপির তরফ থেকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আপ বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ এ দিন দিল্লি বিধানসভায় জানিয়েছেন, ইভিএম-এর মাদার চিপ বদলে দিয়েই তাতে কারচুপি করা যায়। এ ছাড়া ভোট চলাকালীনও কারচুপি সম্ভব বলে তাঁর দাবি। ভোটার সেজে বুথে ঢোকা কোনও হ্যাকার ভোটযন্ত্রে নির্দিষ্ট কোড বসিয়ে দিলেই কাজ সারা— দাবি ভরদ্বাজের। কোড বসানোর পর থেকে যে বোতামেই চাপ পড়ুক, ভোট এক জায়গায়ই পড়বে, অভিযোগ আপ বিধায়কের। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ যে যন্ত্র তৈরি করেছে, মানুষ সেই যন্ত্রকে হ্যাক করতেও পারে।’’ আপ বিধায়কের মন্তব্য, ‘‘এই সব ভোটযন্ত্র নিয়ে যদি ভোট হতে থাকে, তা হলে দেশে আর গণতন্ত্র অবশিষ্ট থাকবে না। একটা দলই সর্বত্র শাসন করবে।’’

বিজেপি-র টুইট।

বিজেপি এ দিন আপের তীব্র নিন্দা করেছে। দিল্লি বিজেপির তরফে টুইটারে লেখা হয়েছে— দিল্লি বিধানসভায় আপ বিধায়কদের হতাশা দৃশ্যমান। দুর্নীতির জন্য জনসাধারণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বদলে ফের সেই বাগাড়ম্বরে ফিরে গিয়েছে আপ।

প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার নবীন চাওলাও আপ বিধায়কের দেখানো ইভিএম কারচুপি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কোথা থেকে কী ধরনের ভোটযন্ত্র এনে কারচুপি প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছে, সেটাই আগে খতিয়ে দেখা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এর আগে ১০০টি আলাদা আলাদা জায়গা থেকে ভোটযন্ত্র এনে তাতে কারচুপি করার চেষ্টা করা হয়েছিল এবং সে চেষ্টা যে সফল হয়নি, সে কথা চাওলা মনে করিয়ে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: কেজরীর বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের, উত্তপ্ত হচ্ছে দিল্লি

আপের কার্যকলাপে বিব্রত নির্বাচন কমিশনও। ইভিএম-এ আদৌ কারচুপি করা যায় কি না, তা ফের পরীক্ষা করা হবে বলে কমিশন মঙ্গলবার জানিয়েছে। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহেই একটি ‘হ্যাকাথন’-এর আয়োজন করা হবে বলে কমিশন জানিয়েছে। সেখানেই প্রমাণ হয়ে যাবে, ভোটযন্ত্রে কারচুপি করে ভোটে জেতা সম্ভব কি না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE